বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা শিগগির উচ্ছেদ করে নৌ বন্দর করা হবে

পরিদর্শন করলেন দুই উপদেষ্টা।। ১২ হাজার একর জমি ফিরে পাবে কক্সবাজার বনবিভাগ

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ at ৪:০৬ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর দখলদূষণ আর হতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তারা বলেছেন, আর কোনোভাবেই নদীর জমি দখল হতে দেয়া হবে না এবং এবং যত দ্রুত সম্ভব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নৌবন্দরের জন্য বরাদ্দ করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুই উপদেষ্টা কস্তুরাঘাট পৌঁছে বাঁকখালী নদীতীরে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা, নদীর তীরের প্যারাবন ধ্বংস, অপরিকল্পিত ড্রেজিং, পৌরসভার ময়লা আবর্জনার ভাগাড় সরেজমিনে পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন। পরিদর্শনকালে এসব দেখে হতবাক হয়েছেন সরকারের এই দুই উপদেষ্টা। কস্তুরাঘাট এলাকায় পৌঁছে দুই উপদেষ্টা প্রথমে বাঁকখালী নদীর সীমানার মানচিত্র দেখেন এবং খুরুশ্‌কুল ব্রিজের উপর অবস্থান করে ব্রিজের পশ্চিমপাশে নদীর বিশাল অংশ দখল করে গড়ে উঠা স্থাপনা পর্যবেক্ষণ করেন। পরে সেখান থেকে তাঁরা যান পেশকার পাড়ায়। সেখানে জোয়ারভাটার পানি আছে এবং ট্রলার ভিড়ে এমন স্থানে পাকা স্থাপনা নির্মাণের দৃশ্য দেখে দুই উপদেষ্টা হতাশ হন। এসময় শিগগিরই নদীর তীর দখলমুক্ত করা হবে জানিয়ে নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কক্সবাজারের জন্য একটি নদী বন্দর প্রস্তাবনা রয়েছে বহু আগের। কিন্তু নদী দখল হওয়ায় সেটি হয়নি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে। নদীর নির্ধারিত সীমানা রয়েছে। যা গেজেট আকারে আছে। এর মধ্যে যারা দখল করে আছে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। তা না হলে উচ্ছেদ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক বছর ধরে এই দখল প্রক্রিয়া চলছে। নদী বন্দর করতে হলে নদী দরকার। নদীর তীরের দখল দ্রুত উচ্ছেদ হবে। সরে যেতে আর সময় দেয়া হবে না। সরে না গেলে আমরা উচ্ছেদ করবো।’

এসময় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কক্সবাজার থেকে অনুমানিক ১২ হাজার একর বনভূমি উদ্ধার করে বনবিভাগকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা তথাকথিত উন্নয়ন এবং ব্যক্তির স্বার্থে এতদিন ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছিল।

তিনি বলেছেন, কক্সবাজারের নদী, বনভূমি ও সিবিচ দখল ও দূষণমুক্ত করা হবে। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকাতে (ইসিএ) অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু নির্মাণ করা যাবে না। পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ এবং জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি বা বেসরকারি নির্মাণ বিবেচনায় নেওয়া হবে না। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্য বনভূমির ৭০০ একর জমির বরাদ্দ গত বছর বাতিল করা হয়। সেই প্রসঙ্গ টেনে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, কক্সবাজারের ৭০০ একর বনভূমি ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। এক ব্যক্তি ১৫০ একর বনভূমিতে বিল্ডিং নির্মাণ করছে, সেটিও বন্ধ করা হচ্ছে। ফুটবল একাডেমির জন্য বরাদ্দ ২০ একর জমি ফেরত আনা হচ্ছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর ৫১ একর জমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সোনাদিয়া দ্বীপে বেজার জন্য বরাদ্দকৃত জমিও বন বিভাগের আওতায় ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। বাঁকখালীকে দখল ও দূষণ মুক্ত করা কক্সবাজারের মানুষের অনেক দিনের দাবিজানিয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে যখন পরিবেশকর্মী ছিলাম তখন এই নদী পরিদর্শনে এসেছিলাম। এখন এসেছি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সাথে নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে।’

তিনি বলেন, দখলবাজি রোধ করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে; উচ্চ আদালত থেকে স্থিতি অবস্থা নেওয়া আছে। এসব আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে।

নদী পরিদর্শন শেষে সেখান থেকে উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বাঁকখালী নদী মোহনার নুনিয়ারছড়ায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জেটি ঘাটে যান। সেখানে কক্সবাজারমহেশখালী রুটে সিট্রাকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধপতেঙ্গায় নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার