বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতারা মানবিক ক্ষমায় পার

চবি সাংবাদিক সমিতির ক্ষোভ

চবি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ

সাংবাদিক মারধরে অভিযুক্ত ২ ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারাদেশ মানবিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনাকে লজ্জাজনক এবং অপরাধীদের প্রশ্রয় হিসেবে দেখছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)। এর আগেও মানবিক দিক বিবেচনায় ছাত্রলীগ কর্মীদের ক্ষমা করেছে প্রশাসন। জানা যায়, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গত ৪ অক্টোবর বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় নেওয়া হয়। যেদিন আরেক সাংবাদিক মোশাররফকে মারধরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সভায় আলোচিত হয়েছে। মানবিকতা দেখিয়ে বহিষ্কারাদেশ করলেও মোশাররফের ঘটনায় কাউকে শাস্তি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হাসান মোহাম্মদ রোমান শুভ সেই সভায় প্রক্টরের প্রতিনিধি হিসাবে সদস্য সচিব ছিলেন। তাদের মতে অভিযুক্ত ২ নেতার বাবামা এসে কান্নাকাটি করেছেন এবং মুচলেকা দিয়েছেন। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করলে তাদের ছাত্রত্ব চলে যেতো। অথচ বহিষ্কৃত খালেদ মাসুদ ১৭১৮ শিক্ষাবর্ষের হয়ে মাস্টার্স পরীক্ষা দিচ্ছে এবার, সেই হিসাবে তার ছাত্রত্ব চলে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। ৪ তারিখ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলেও ঘটনাটি জানাজানি হয় গতকাল ১৯ অক্টোবর। এর আগে ১৯ জুন রাতে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে কথাকাটাকাটির জের ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য দোস্ত মোহাম্মদকে মারধর করে ছাত্রলীগের ১০১২ জন নেতাকর্মী। মারধরের এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীর গায়ে গরম চা ঢেলে দেয়া হয়। চায়ের কাপ দিয়ে বাড়ি দিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে ফেলা হয়। এসময় দোস্ত মোহাম্মদ মাটিতে পড়ে গেলে পেটে উপর্যুপরি লাথি মারা হয়। এরপর ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের প্যান্টে থাকা ব্যাল্ট খুলে মারধর করে। এ ঘটনায় চবি সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে ৩ দিন পর গত ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অভিযুক্ত ২ ছাত্রলীগ নেতাকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এ আদেশে বলা হয় বহিষ্কার চলাকালীন কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসপরীক্ষা বা অন্য কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও অবস্থান করতে পারবে না। যদিও এসব আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঠিকই হলে অবস্থান ছিল বহিষ্কৃতদের এবং ক্লাসেও অংশ নিয়েছে অভিযুক্ত ২ নেতা।

বহিষ্কৃতরা হলেন চবি ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ও আইন বিভাগের ২০১৭১৮ সেশনের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হান। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সাদাফ খবিরের নেতৃত্বাধীন উপগ্রুপ সিএফসির অনুসারী এবং আমানত হলে অবস্থান করে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিব ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, তাদের বহিষ্কারের ইতিমধ্যে ৪ মাস শেষ। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং অভিভাবকদের মুচলেকায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ওই ডিসিপ্লিনারি সভায় আমি ছিলাম না।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ জানান, আমার ওপরে বিনা কারণে হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য অপরাধীদেরকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন দেখলাম, এই সামান্যতম শাস্তিটুকুও প্রত্যাহার করেছে। এই আদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অপরাধীদেরকে উৎসাহিত ও পুরস্কৃত করলো। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘটনায় চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিস্তির টাকা পরিশোধ না করায় মায়ের বকা, অভিমানে ছেলের আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধনগরীতে হিযবুত তাহরীর সক্রিয় দুই সদস্য গ্রেপ্তার