বস্ত্রশিল্পের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে

| রবিবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘দেশের বস্ত্র খাত এখন শুধু একটা শিল্প নয়, বরং অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। এ শিল্প দেশের প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে বিরাট ভূমিকা রাখছে। বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘দেশের বস্ত্র খাত এখন শুধু একটা শিল্প নয়, বরং অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। এ শিল্প দেশের প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে বিরাট ভূমিকা রাখছে। আমরা ১০০ বিলিয়ন ডলার রফতানি অর্জন করতে চাই। এ লক্ষ্য পূরণে শিল্প, একাডেমিয়া ও নীতিনির্ধারকদের একত্রে কাজ করতে হবে। সক্ষমতা বৃদ্ধি না করতে পারলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে পারে।’

গত ৪ ডিসেম্বর ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে আয়োজিত ‘রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড রেইনভেনশন: ক্রিয়েটিং স্কিল্ড প্রফেশনালস ফর দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাট সচিব বিলকিস জাহান রিমি। এবারের জাতীয় বস্ত্র দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বস্ত্র শিল্পের প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’।

বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের গবেষণা অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানি বেড়ে ১ হাজার ১২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। বর্তমানে চীন ৬২ শতাংশ, ভিয়েতনাম ৫৬ শতাংশ, তুরস্ক ৪৮ শতাংশ, ইতালি ৪৪ শতাংশ কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ২৭ শতাংশ হচ্ছে কৃত্রিম তন্তুর পণ্য, যার সুতা ও কাপড়ের ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর। বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিন টন কৃত্রিম তন্তু আমদানি করে। মার্কিন আমদানিকারকরা চীন থেকে কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তর করলে তার উল্লেখযোগ্য পণ্য হবে কৃত্রিম তন্তুর। কৃত্রিম তন্তু, সুতা ও কাপড়ের আমদানিনির্ভরতা কমাতে দেশেই কৃত্রিম তন্তু উৎপাদন প্রয়োজন। দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল বা পেট ফ্লেক্স ভারত, থাইল্যান্ড ও চীনে রপ্তানি না করে তা দিয়ে রিসাইকেল পলিস্টার তন্তু তৈরি করা এবং পলিস্টার তন্তুর কাঁচামাল আমদানি করে ভার্জিন পলিস্টার তন্তু উৎপাদন করা যেতে পারে। এছাড়া পাট থেকে ভিসকোস উৎপন্ন করার অর্থনৈতিক ও কারিগরি উপযোগিতা যাচাই করা হলেও দেশে এখনও ভিসকোস তৈরির কারখানা গড়ে ওঠেনি।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গত অর্থবছরে (২০২৪২৫) বাংলাদেশ তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি খাতে ৮.৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৯.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত দেশের তৈরি পোশাকের দেশ ভিত্তিক রপ্তানি হিসাব অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এ খাতের সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে অবস্থান করছে। ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানি হয়েছে ১৯.৭১ বিলিয়ন ডলার। যা দেশে মোট আরএমজি রপ্তানির ৫০.১০ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৭.৫৪ বিলিয়ন ডলার (১৯.১৮ শতাংশ)। কানাডা ও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ১.৩০ বিলিয়ন ডলার (.৩১ শতাংশ) এবং ৪.৩৫ বিলিয়ন ডলার (১১.০৫ শতাংশ)। ২০২৪২৫ অর্থবছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৯.১০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩.৭৯ শতাংশ এবং কানাডায় ১২.০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের বিকাশ ও কম মূল্যে পোশাক তৈরির জন্য প্রধান যে দুটি সুবিধা ছিল, তা হলো কম মজুরি ও কম বিদ্যুৎ মূল্য। পোশাক তৈরির জন্য সুতা, কাপড় উৎপাদন ও কাপড় প্রক্রিয়ার জন্য রয়েছে পশ্চাদমুখী বস্ত্রশিল্প, যেমনস্পিনিং, উইভিং, নিটিং ও ডাইংপ্রিন্টিংফিনিসিং। এ পশ্চাদমুখী শিল্পগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি উৎপাদিত পণ্যে যোগ হলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া উৎপাদিত বিদ্যুতের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পশ্চাদমুখী বস্ত্রশিল্পগুলোকে নানামুখী বিদ্যুৎ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বস্ত্রশিল্পের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাঁরা বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের সক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা। পণ্যের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ কয়েকটি দিক রয়েছে, যেমনশ্রমিক উৎপাদনশীলতা, মেশিন উৎপাদনশীলতা, ও কাঁচামালের উৎপাদনশীলতা। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রয়োজন কারখানার যথাযথ কর্মপরিবেশ, প্রশিক্ষণ ও উৎপাদনশীলতার সহযোগী কিছু স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক সুবিধা প্রদান। এছাড়া শ্রমিকের কর্মঘণ্টার সঠিক ব্যবহারের জন্য নজরদারি বাড়াতে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। একইভাবে মেশিনের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য মেশিন তত্ত্বাবধান সংক্রান্ত স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। আর কাঁচামালের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য উৎপাদনের প্রতিটি স্তরে কাঁচামাল অপচয় রোধকল্পে সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে এবং কাঁচামালের পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে