বস্তিবাসী রিকশাচালকও ফ্ল্যাটে থাকবে : প্রধানমন্ত্রী

পরিকল্পনা হতে হবে পরিবেশবান্ধব, হাওর ভরাট করে আর সড়ক হবে না

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ১২ মে, ২০২৪ at ১১:১০ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান বস্তিবাসী, রিকশাচালক ও নিম্ন আয়ের মানুষেরাও যেন ফ্ল্যাটে বসবাস করে। এ লক্ষ্যে সরকারের ফ্ল্যাট নির্মাণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবির) ৬১তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের একেবারে তৃণমূলের মানুষ যারা আছে, সুইপার, হরিজন, দলিত বলে যাদের একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখা হতো। সব নাম পরিবর্তন করে সুন্দর নাম দিয়েছি। তাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিচ্ছি। বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেওয়া শুরু হয়েছে; যাতে অল্প খরচে সাধারণ মানুষগুলো স্বাস্থ্যকর, সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই রিকশাওয়ালা, দিনমজুর, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষরা ফ্ল্যাটে থাকবে। আমার প্রত্যেকটা কাজ হচ্ছে এই তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। এই কথা মাথায় রেখে সবাই দায়িত্ব পালন করবেন। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনগৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ জেলার ৩৩৪ উপজেলাকে আমরা গৃহহীনভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা দিতে পেরেছি। বাংলাদেশ একটি পরিবারও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য, সেভাবে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।

পরিকল্পনা হতে হবে পরিবেশবান্ধব : পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা হাতে নিতে প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। কারণ, আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করি এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করি। যে পরিকল্পনা হোক, সেটা পরিবেশবান্ধব হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে দেশকে রক্ষা করা আমাদের লক্ষ্য। খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি পরিকল্পনাগুলো যেন টেকসই হয়।

যেকোনো পরিকল্পনায় খরচের বিষয়টিও মাথা রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, খরচের দিকটাও বিবেচনা নিতে হবে। কোনো পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে সেই পরিকল্পনা থেকে রিটার্ন কী আসবে, জনগণ কীভাবে উপকৃত হবে, এভাবেই আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, শুধু একটা নির্মাণ কাজ করার জন্য যেন নির্মাণ করা না হয়, সেটাই আমার অনুরোধ। সেটার জন্য আমি আমার পার্টির এমপিদেরকেও নির্দেশনা দিয়েছি, একনেকের মিটিংয়েও বলেছি। এ রকম কোনো প্রকল্প দেখলে অবশ্যই আমি সেটা অনুমোদন করব না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেটা আমাদের মানুষের কাজে লাগবে, দেশের কাজে লাগবে, যে প্রকল্প শেষ করলে মানুষ লাভবান হবে, আমাদের কিছু উপার্জন হবে, সেটাই আমরা দেখতে চাই। সেটাই পরিকল্পনা করবেন, আপনাদের কাছে আমি এটাই চাই।

তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতা দখল করেছিল, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ল জারি করেছিল, তাদের আমলে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়নি। জিয়াউর রহমানের আমলে প্রতি বছর ছিল মাইনাস। ১৯৯১ সালে এসে দেখা গেল যে মাত্র ৬ ডলার বেড়েছিল। ছিয়াত্তর সাল থেকে একানব্বই সাল এই দীর্ঘ সময় মাত্র ছয় ডলার বাড়ে। এই ছিল বাংলাদেশের অবস্থা।

প্রকৌশলীদের গবেষণায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি যান্ত্রিকতায় আরো এগিয়ে যেতে প্রকৌশলীদের যে উদ্ভাবনী শক্তি, মেধা আছে, সেটা কীভাবে দেশের কাজে লাগাতে পারি তাতে নজর দিতে হবে। যা উৎপাদন হচ্ছে তা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানির দিকে নজর দিতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের গবেষণা ও পরিকল্পনা দরকার। গবেষণা কিন্তু চলমান প্রক্রিয়া। এজন্য বারবার গবেষণা দরকার।

দেশের উন্নয়ন অনেকের ভালো লাগে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি গোষ্ঠী আছে তাদের কিছুই ভালো লাগে না। পদ্মা সেতুর সুফল মানুষ ভোগ করছে, মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হয়েছে। এটা তারা মেনে নিতে পারছে না। তাদের কী সমস্যাটা হচ্ছে? তারা লজ্জা পাচ্ছে কিনা? স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে সমালোচনা করছে। আগে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য ডলার খরচ করে বিদেশ থেকে সংযোগ নিতে হতো। আজ তা লাগে না। দুর্গম এলাকায় আমরা সংযোগ করতে পারছি। গভীর সমুদ্রসীমা সেখানে দেখভাল করতে পারছি। দ্বিতীয়বার যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে, সেটি আরো বিস্তৃত সেবা দিতে পারবে।

হাওর ভরাট করে আর সড়ক হবে না : হাওর এলাকায় মাটি ভরাট করে আর কোনো সড়ক হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমি নির্দেশ দিয়েছি যেন পানির স্রোত অব্যাহত থাকে। হাওর এলাকায় মাটি ভরাট করে আর কোনো রাস্তা হবে না। বন্যায় ভেঙে যাওয়া রাস্তায় মাটি ভরাট করতে দিইনি। সেখানে ব্রিজ বা কালভার্ট করে দিয়েছি। কারণ আবার যদি বন্যা হয়, তাহলে তো আবারও ভাঙবে, সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। এ সময় হাওর এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন তিনি এবং জলাধার নষ্ট না করে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসৌদি আরবে হজ যাত্রীদের জন্য থাকছে উড়ন্ত ট্যাক্সি
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ার দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ‘হাতাহাতি’