নিজের আবেগকে দৃশ্যমান করে তোলার এক বিশ্বজনীন মাধ্যম ফটোগ্রাফি বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক। তিনি বলেন, এক ফোঁটা অশ্রুতে লুকিয়ে থাকতে পারে এক বিশাল সাগরের গল্প। কখনো কখনো সেই গল্প শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না, তাকে ধরে রাখতে পারে কেবল ফটোগ্রাফি। এখানেই ফটোগ্রাফির সৌন্দর্য, এটি কোনো ভাষার মুখাপেক্ষী নয়। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের যে কোনো ভাষার মানুষ এটা বুঝতে পারে। তাই বলা হয়ে থাকে, নিজের আবেগকে দৃশ্যমান করে তোলার এক বিশ্বজনীন মাধ্যম ফটোগ্রাফি। তিনি আরও বলেন, ফটোগ্রাফি এক সময় অ্যাভিডেন্স হিসেবে ব্যবহার হতো। এখন এটি কমে গেছে। এখন একটি ছবি মোবাইলে বা কম্পিউটারে এডিট করার মাধ্যমে মূল ছবি পাল্টে ফেলা যায়। এর মাধ্যমে ফটোগ্রাফি তার স্বকীয়তা হারিয়েছে। ফটোগ্রাফি তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এটা ফটোগ্রাফির সবচেয়ে বড় ক্ষতি বলে আমি মনে করি। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৫টায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এর ‘১২তম ফটো কার্নিভাল : ম্যাগাজিন উন্মোচন ও ফটো এক্সিবিশন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এম এ মালেক।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. এম. আলী রোডস্থ ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশে এটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। এতে স্থান পায় ৬০ জনের বাছাইকৃত ছবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিন ফর স্টুডেন্টস’ ড. ফাতিমা মেরী সিদোতামের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অংশগ্রহণকারীদের তোলা আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং নির্বাচিত ছবিগুলো নিয়ে প্রকাশ করা হয় ‘প্রতিচ্ছবি’ শীর্ষক একটি আকর্ষণীয় ফটোবুক। অনুষ্ঠানে এ ম্যাগাজিনটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর প্রফেসর মাসুদুর রহমান, জান্নাতুল মাওয়া, কাউসার হায়দার ও নাজহাত নাশরাহসহ অন্যান্যরা। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর ফটোগ্রাফি ক্লাবের তত্ত্বাবধানে এ অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি এবং আয়োজকদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
বক্তব্যে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর ডিন অব স্টুডেন্টস ড. ফাতিমা মেরী বলেন, একটি ছবি একটি গল্প বলে, একটি গল্প ইতিহাসের কথা জানান দেয়। আজকের এ দারুণ আয়োজনে অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি স্থান পেয়েছে। সবাইকে অনেক অভিনন্দন। আমি এখানে আসতে পেরে গর্ববোধ করছি। এ আয়োজনের সাথে সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। এইউডব্লিউ ফটোগ্রাফি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও অনুষ্ঠানের অর্গানাইজিং ডিরেক্টর নাজহাত নাশরাহ বলেন, আমাদের এ ছোট্ট আয়োজনে যারা জড়িত ছিলেন সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। এ আয়োজনে আমাদের অনেকে সহযোগিতা করেছেন, বিভিন্নভাবে সমর্থন দিয়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে ব্যক্তিজীবনে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ ও আলোকচিত্র তোলার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে সমাজ বিনির্মাণ ও সামাজিক মূল্যবোধ গঠনে ফটোগ্রাফির গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি কার্নিভালের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিচ্ছবি’ এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, একজন আলোকচিত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি, তার অভিজ্ঞতা এবং অনুভবের প্রতিফলন ঘটে একটি ছবিতে। একই সঙ্গে, তিনি বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে ছবি বিকৃতি ও তথ্যবিকৃতির ঝুঁকির বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, একটি বহুল প্রচলিত কথা আছে, A picture is worth a thousand words . একটি ছবি হাজার শব্দের সমান। মানুষ বদলে যায়, প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়, কিন্তু ছবি কখনো বদলায় না। বর্তমান সময়টা এমন– জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে অজান্তেই জড়িয়ে যাচ্ছে ফটোগ্রাফি। একটি ছবির শক্তি কতটা গভীর হতে পারে, তা আমরা মাঝে মাঝে অনুভব করি। একটি ছবি বদলে দিতে পারে ইতিহাসের বাঁক। তিনি বলেন, আজকের এই প্রদর্শনীতে প্রতিটি ফ্রেমে একটি নিজস্ব গল্প আছে। বার্তা আছে। এ রকম সুন্দর সৃষ্টির হাত ধরে নবীন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে। তারা অধিক হারে সম্পৃক্ত হবে অন্য ধারার সৃজনশীল ভাবনায়। তাই আমি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আমরা আজাদীতে ‘পাঠকের তোলা ছবি’ নামে বেশ কিছু আলোকচিত্র প্রকাশ করেছি। দেখা গেছে, সেখানে এমন এমন বিষয় উঠে আসে, এমন এমন ভাবনা– যা আমাদের আলোড়িত করে, অন্যভাবে ভাবতে শেখায়। আপনাদের মধ্যে কেউ যদি আগ্রহী হন এ রকম ছবি প্রকাশ করতে তাহলে আমাদের ই মেইল এড্রেসে পাঠিয়ে দেবেন। আপনাদের নাম পরিচয়, কন্ট্রাক্ট নাম্বারসহ। মনোনীত হলে আমরা সেই ছবি প্রকাশ করবো।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এম এ মালেক বলেন, জীবন আসলেই সুন্দর। জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে হবে। এজন্য স্বপ্ন দেখতে হবে। তবে সেটা অবশ্যই জেগে জেগে। ঘুমিয়ে যে স্বপ্ন দেখা হয় সেটা আসল স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন নিয়ে এপিজে আব্দুল কালামের সেই বিখ্যাত উক্তিটি উল্লেখ করেন তিনি।
ম্যাগাজিনটির এডিটোরিয়াল বোর্ডের প্রধান প্রফেসর মাসুদুর রহমান বলেন, আমাদের প্রতি বছর ফটো এক্সিবিশন হয়। এ বছর আমরা উন্মুক্তভাবে ফটো আহ্বান করেছি। এতে প্রায় পাঁচ শতাধিক ছবি আসে। এর থেকে ৬০টি ছবি বাছাই করে এক্সিবিশনে যুক্ত করা হয় এবং ম্যাগাজিনে যুক্ত করা হয়। এডিটোরিয়াল বোর্ডে আরও ছিলেন, নাজহাত নাশরাহ ও রামিসা মালিয়াত। অর্গানাইজিং কমিটিতে ছিলেন, নাজহাত নাশরাহ, রামিসা মালিয়াত, নিবেদিতা আহমেদ অধরা, সুনিতা, তানজিলা তাবাসসু, ভিক্টোরিয়া খীসা, নুসাইবা ইসলাম মজুমদার, তাসপিয়া ইসলাম অর্পা, ইকরা রহমার ওয়াকিয়া, মোবাশ্বিরা মাহমুদা ও সুমাইয়া জাহানারা। অনুষ্ঠান শেষে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি নাজহাত নাশরাহ, সহ–সভাপতি রামিসা মালিয়াত এবং সাধারণ সম্পাদক নিবেদিতা আহমেদ অধরা উপস্থিত অতিথি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।