সাম্প্রতিক সময়ের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার তাণ্ডবের ক্ষত লেগেছে দেশি–বিদেশি পর্যটক–দর্শনার্থীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় স্থান কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কেও। বন্যার ভয়াবহতা এতই প্রকট ছিল যে, পার্কটির দক্ষিণ–পূর্বাংশের সীমানা দেওয়ালের বিশাল অংশ ধসে গেছে। এমনকি পার্কের পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে নির্মিত ড্রেনসহ একটি কালভার্টও সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়। ভারি বর্ষণ ও সেইসাথে পাহাড়ি ছড়া ‘বগাইছড়ি’তে প্রবল বেগে ধেয়ে আসা ঢলের পানিতে গোড়ার মাটি ধসে গিয়ে পার্কের সীমানা দেওয়াল, কালভার্ট ও ড্রেনের এই বিশাল ক্ষতি হয়।এই অবস্থায় গত ২৫ দিন ধরে অনেকটাই অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে পার্কের সীমানা দেওয়ালের ওই অংশটি। যেখানে রয়েছে প্রায় ২৪০ হেক্টর সমতল ও টিলা শ্রেণির বনভূমি নিয়ে গড়ে তোলা তৃণভোজী সাফারি বেস্টনী। ওই তৃণভোজী বেস্টনীতে বিচরণরত রয়েছে আফ্রিকান প্রজাতির তৃণভোজী প্রাণী জেব্রা এবং ওয়াইল্ডবিস্ট। তবে পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ও ভারি বর্ষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তৃণভোজী সাফারি বেস্টনী লাগোয়া পার্কের ক্ষতিগ্রস্ত সীমানা দেওয়ালের অংশে প্রাথমিকভাবে গাছ–বাঁশের খুটি, সেইসাথে কাটাতারের বেড়া দিয়ে অরক্ষিত অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোন প্রাণী পার্কের বাইরে চলে যেতে না পারে। পাশাপাশি পালাক্রমে ওই অংশে পার্কের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের ডিউটিও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থা অন্তত কয়েকমাস পর্যন্ত চলতে পারে। সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক (রেঞ্জার) মো. মাজহারুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে জানান পার্কের যে অংশে বন্যা ও ভারি বর্ষণের কারণে সীমানা দেওয়াল বিধ্বস্ত হয়েছে সেই অংশে ২০২১ সালেও একবার দেওয়াল ধসে পড়েছিল। মূলত: তখন দেওয়াল ধসের ঘটনা ঘটেছিল পার্কের সীমানা লাগোয়া দাঙ্গারবিলসহ আশপাশের টিলা শ্রেণীর বনভূমি থেকে পাহাড় সাবাড় এবং অসংখ্য ড্রেজার ও শ্যালোমেশিন বসিয়ে ভূ–গর্ভের বালু উত্তোলনের কারণে। পরবর্তীতে সাড়াশি অভিযানের পর বালু তোলা বন্ধ হলেও ঐসময়ে ভারি বর্ষণ শুরু হওয়ায় ওই অংশের সীমানা দেওয়াল রক্ষা করা যায়নি।
পার্ক কর্মকর্তা আরো জানান, এর পর নতুন করে সেই সীমানা দেওয়াল তৈরি করা হয় টেকসইভাবে। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যা ও ভারি বর্ষণের ভয়াবহতা এতই প্রবল ছিল যে, পার্কের দক্ষিণ–পূর্বাংশের সীমানা দেওয়ালের অন্তত ১০২ ফুট পর্যন্ত একেবারে ধসে পড়ে। সেইসাথে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় একটি কালভার্ট ও পাশের পানি নিষ্কাশনের ড্রেনও। এমনকি কালভার্টের গোড়ার মাটিও অন্তত ১০ ফুট দেবে গেছে। বন্যার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হওয়া সীমানা প্রাচীরসহ অন্যান্য স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হবে। ইতোমধ্যে বন্যায় ক্ষতির চিত্র নিরূপন করে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। যাতে বরাদ্দ প্রাপ্তির পর নতুন করে সীমানা দেওয়ালসহ অন্যান্য স্থাপনা পুনরায় নির্মাণ করা সম্ভব হয়। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কমকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ভয়াবহ বন্যায় লণ্ডভণ্ড হওয়া পার্কের সীমানা দেওয়ালের ওই অংশ যাতে কোনভাবেই অরক্ষিত না থাকে সেজন্য প্রাথমিকভাবে গাছ–বাঁশের খুটির সঙ্গে কাটাতার দ্বারা ঘেরাও করে দেওয়া হয়েছে। যাতে পার্কের তৃণভোজী সাফারি বেস্টনীর কোন প্রাণী পার্কের বাইরে চলে যেতে না পারে।
প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই মুহুর্তে পার্কের দক্ষিণ–পূর্বাংশে ধসে পড়া সীমানা দেওয়াল নতুন করে নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য আগামী শুষ্ক মৌসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে। এই সময়ের মধ্যে যাতে কোন অঘটনা না ঘটে সেজন্য পার্কের সংশ্লিষ্ট কর্মচারী দ্বারা সার্বক্ষণিক তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রাখা হয়েছে ওই অংশ।