চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, ফেনী ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
ইউসিটিসি : বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগাংয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালেয়ের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ওসমানের নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রাণ বিতরণকারী শিক্ষার্থীদল গত শনিবার ফটিকছড়ি এবং ফেনীতে বন্যা কবলিতদের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরণ করে। ত্রাণ বিতরণ দলটি ফেনীতে বন্যা কবলিত ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুর, শিবপুর, নিজপানুয়া, ছাগলনাইয়া আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ৬০০ বন্যাদুর্গত মানুষদের মাঝে খাবার, স্যালাইন, বাচ্চাদের ডায়াপার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করে এবং ফটিকছড়ি পৌরসভার এলাকায় বন্যাদুর্গতদের মাঝে ১০০ প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ বন্যাদুর্গতদের সহায়তার জন্য নগদ অর্থ, শুকনা খাবার ও কাপড় সংগ্রহ সহয়তা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ও আর্থিক ও ত্রাণ সহায়তা সংগ্রহ করে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগাংয়ের শিক্ষার্থীরা বিপর্যস্ত মানুষদের এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সবসময় পাশে থাকার জন্য অঙ্গিকারাবদ্ধ এবং আর্থিক ও ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
নিষ্ঠা ফাউন্ডেশন : নিষ্ঠা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ফটিকছড়ি ১৯নং সমিতির হাট, ৫নং ওয়ার্ড, দূর্গা বাপের বাড়ি ও মধ্যম নিশ্চিন্তাপুর এলাকায় অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে রবিবার (২৫ আগস্ট) ত্রাণ দেয়া হয়েছে।
নিষ্ঠার রক্তসেবা প্রধান জাকারিয়া আলম ও এপিআরও–এর নেতৃত্বে শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করা হয়। ইঞ্জিনিয়ার ইব্রাহিম ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে উক্ত ত্রাণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন নিষ্ঠার স্বেচ্ছাসেবক সাজ্জাদ হোসাইন, সাজ্জাদুল আলম, সুবেহ জয়, জাহেদ আহমেদ, মুফাস্িসল নিহাল, নাজমুল আলম, শিহাব শিকদার, রাফিদুল মাহিন প্রমুখ। নিষ্ঠার জেনারেল সেক্রেটারী চবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ নুর হোসাইন ভয়াবহ বন্যাকবলিতের উদ্ধার ও ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সাহায্য দাতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বন্যা উত্তর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের গুরুত্ব দিতে হবে। দু–চার দিন ত্রাণ বিতরণ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করলে হবে না বরং ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ সহ পরিপূর্ণ সেবা অব্যাহত রাখতে হবে। এই লক্ষ্যে নিষ্ঠার কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে সামর্থবানদের প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।
ফটিকছড়ি পশ্চিম আন্দার মানিক উচ্চ বিদ্যালয় : ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, ফটিকছড়িতে স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে সদ্য প্রতিষ্ঠিত পশ্চিম আন্দার মানিক উচ্চ বিদ্যালয়। ২৫ আগস্ট (রোববার) ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ত্রাণ সামগ্রী সার্বিকম সহযোগিতা করেন বিদ্যালয়ের প্রধান উদ্যোক্তা ও ইসলামী ব্যাংকের এসএভিপি মোহাম্মদ ইব্রাহীম। এছাড়াও সহযোগিতা করেন– স্কুল প্রতিষ্ঠায় অর্থদাতা ও ইউএই প্রবাসী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান মিনহাজ, স্কুল প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ব্যাংকাত মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া প্রমুখ। ত্রাণ বিতরণের সময় মোহাম্মদ ইসহাক ফারুক ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানের তত্বাবধানে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের ফলে ছাত্রদের মাঝে সমাজ সেবার মানসিকতা শুরু থেকেই গড়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিদ্যালয়ের প্রধান উদ্যোক্তা মোহাম্মদ ইব্রাহীম। তিনি ফটিকছড়ির ইতিহাসে স্মরনকালের সবচেয়ে বড় বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানান।
তুলসীধাম ও অদ্বৈত–অচ্যুত মিশন : বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নগরের নন্দনকানন শ্রীশ্রী তুলসীধাম পরিচালনা পরিষদ। অদ্বৈত–অচ্যুত মিশন বাংলাদেশের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বানভাসি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী। তুলসীধামের মোহন্ত শ্রীমৎ দেবদীপ মিত্র চৌধুরী (পুরী) মহারাজের নির্দেশনায় স্বেচ্ছাসেবীরা গত ২৪ ও ২৫ আগস্ট ট্রাকভর্তি ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ফটিকছড়ির সুয়াবিল ভাঙ্গার দিঘির পাড়, মুসলিম পাড়া, বণিক পাড়া, নাথ পাড়া ও ব্রাহ্মণ পাড়ায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। কানাডা প্রবাসী কৌশিক বিশ্বাস, ইউএই প্রবাসী সজল চৌধুরী, বিকাশ দেবনাথ, রাজীব দত্ত, প্রকাশ নাথ, চট্টগ্রাম থেকে বিধান ধর, ডা. মনোজ চৌধুরী, সাগর বিশ্বাস, ছোটন সহ অনেকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে আরও সহযোগিতা করছেন অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী, অধ্যাপক স্বপন চৌধুরী, স্থপতি প্রণত মিত্র চৌধুরী সহ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী–স্বামী অচ্যুতানন্দ পুরী–স্বামী নারায়ণ পুরী মহারাজের শিষ্য ও তুলসীধামের ভক্ত সেবক এবং অদ্বৈত–অচ্যুত মিশনের বিভিন্ন শাখার নেতৃবৃন্দ। এছাড়া রাঙ্গুনিয়ার শিলক, হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ডে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হচ্ছে। এই দুর্যোগে দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার, পানি, মোমবাতি, ম্যাচ ও খাবারের পাত্র সহ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব চট্টগ্রাম জেলা : বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে ফেনীতে বন্যাদুর্গত অঞ্চল পানি বন্দী মানুষকে উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সামগ্রী এবং ঔষধ সরবরাহ করতে সদস্যরা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কয়েকশত মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনে ত্রাণ সহায়তা করে অনেক কষ্টে থাকা পানিবন্দী মানুষের মাঝে। তারা জানায়, এ সহায়তা কার্যক্রম পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে রাখবে। দেশ ও দেশের বাইরে থাকা সকল মানবিক মানুষদের প্রতি তারা এ সংকটে সার্বিকভাবে এগিয়ে আসারও আহবান জানায়।
অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য তারা একটি ফ্রি মেডিকেল টিম গঠন করছে বলেও জানায়। একইসাথে বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লবের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ফেনী, নোয়াখালী, আখাউড়া, কুমিল্লাসহ অন্যান্য সকল বন্যা কবলিত জেলায় পানিবন্দী অঞ্চলেও অসহায় মানুষদের উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তার জন্য সেখানকার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা কাজ করছে বলে জানা যায়। এসময় তারা উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সাথেও দূর্গম অঞ্চলে ভলেন্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
মুনিরীয়া যুব তাবলীগ : মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রবিবার ফটিকছড়ির ধর্মপুর ইউনিয়নে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
এলায়েন্স অব বোয়ালখালী : ফেনীসহ সারাদেশে বন্যা কবলিত এলাকায় পানি বন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় বন্যা দুর্গত ফেনীতে মোট তিন শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহয়তা দিয়েছে বোয়ালখালীর সামাজিক সংগঠন এলায়েন্স অব বোয়ালখালী।
শনি ও রবিবার (২৪ ও ২৫ আগস্ট) ফেনীর ফাজিলপুরের দুর্গম এলাকায় এ ত্রাণ সহয়তা প্রদান করে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকরা। এসময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে দেড়শো পরিবারের কাছে ত্রাণ পাঠানো হয়।
এর আগে গেলো শুক্রবার সারাদিন বোয়ালখালীতে ত্রাণ সামগ্রী প্যাকেটিংয়ের কাজ করে সংগঠনের সদস্যরা। এরপর দুইদিন টানা এ ত্রাণ সহয়তা প্রদান করা হয়। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ছিলো, চিড়া, গুড়, মুড়ি, বিস্কুট, সরিষার তৈল, জরুরি ওষুধ, ওরস্যালাইন, স্যানিটারি ন্যাপকিন, মোমবাতি, দিয়াশালাই ও বিশুদ্ধ পানি। সংগঠনের সমন্বয়ক ডা. সৈয়দ ফাহাদ বলেন, সমাজের অবহেলিত মানুষের কল্যাণে এলায়েন্স অব বোয়ালখালী কাজ করে।
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল : সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান বলেন, কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে দেশের ১৩টি জেলায় সৃষ্ট বন্যায় এক চরম মানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আকষ্মিক বন্যায় বানভাসি মানুষগুলো চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। তিনি গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণকালে এসব কথা বলেন। এসময় নেতৃবৃন্দ বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন, বানভাসি মানুষের খোঁজখবর নেন এবং পর্যায়ক্রমে তাদের আরোও সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু বলেন, এই মুহুর্তে আমাদের উচিত– দল মত নির্বিশেষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে যার যতটুকু সম্ভব তা নিয়ে অসহায় বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহ–সভাপতি হারুনুর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, যুগ্ম সম্পাদক জমির উদ্দিন নাহিদ, এম. আবু বক্কর রাজু, সহ–সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, দিদার হোসেন, সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, সাইফুল আলম দিপু, শাহজাহান বাদশা, সহ–দফতর সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, সহ–পরিবার বিষয়ক সম্পাদক জাকির হোসেন মিশু, মো. ইয়াছিন প্রমুখ।
চকবাজার যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল : দেশে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনায় চকবাজার যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গত শনিবার চট্টগ্রাম চকবাজার থানা শাখার সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল আলম শিপু’র ব্যবস্থাপনায় ৫০০ মানুষের জন্য চলমান এ ত্রাণ ফেনীতে বিতরণ করা হয়েছে। ধাপে ধাপে ফটিকছড়ির নাজিরহাট, শান্তিরহাট, ভুজপুর ও হাইদচকিয়াসহ বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি চিকিৎসা সহায়তা, তৈরি খাবার, শুকনো খাবার ও সুপেয় পানি বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। নুরুল আলম শিপু বলেন, দেশে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তা অকল্পনীয়। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আপামর জনসাধারণের উচিৎ নিজ নিজ জায়গা থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
ত্রাণ বিতরণে উপস্থিত ছিলেন আলম, ফারুক, জয়নাল, কামাল , জামাল , তারেক, লিটন রানা, নেজাম, নুরুল হাসান টিপু, জিকুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।