বন্ধ থাকা সড়ক আলোকায়ন প্রকল্প চালু করতে চায় চসিক

মন্ত্রণালয়ে চিঠি ২৬০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ৪৬৬ কিমি সড়কে স্থাপন করা হবে এলইডি বাতি

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ২৪ মে, ২০২৫ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

নগরের সড়ক আলোকায়নে ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে গত বছরের জুলাই মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর পাঁচ মাস পর ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় ঋণ সহায়তার প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এর সুফল পাবেন নগরবাসী। তাই ‘কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত’ পুনর্বিবেচনা করে প্রকল্পটি চালুর রাখার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হচ্ছে সংস্থাটি। ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ আছে।

মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, আমরা চাই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হোক। তাই মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। মৌখিকভাবেও কথা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে চিঠি লিখেছি। তিনি বলেন, জনস্বার্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা দরকার। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সড়ক আলোকায়নের পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। এলইডি বাতি স্থাপনে এটিই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কোনো অর্থ খরচ হবে না। তাই এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে কর্পোরেশনের জন্য সুবিধা হতো।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, সড়ক আলোকায়ন প্রকল্পটি অনেক আগে গ্রহণ করা হয়। এটি ইন্ডিয়ান অন্য এলওসি (লাইন অব ক্রেডিট) প্রকল্পের মতো না। এটা অনেক ইফেক্টিভ। এটা বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম শহরের ৪৬৬ কিলোমিটার সড়ক আলোকিত হবে এবং এর সুফল পাবেন নগরবাসী। তাই আমরাও চাই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হোক। চসিক সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি দক্ষতা উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ এবং ভারতের ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিস লিমিটেড (ইইসিএল)’ এর সঙ্গে ২০১৭ সালে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এর প্রেক্ষিতে ‘মর্ডানাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্স এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’ প্রকল্পটি গ্রহণ করে চসিক। যেখানে এলওসি তৃতীয় চুক্তির আওতায় ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক অর্থায়ন করার কথা।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৯ জুলাই একনেকে অনুমোদিত হয় প্রকল্পটি। প্রকল্প বাস্তবায়নে চসিকের সঙ্গে গত ৬ জুলাই ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’র চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে এলওসি(লাইন অব ক্রেডিট) এর আওতায় ঋণ হিসেবে দেয়া ভারতের অর্থের পরিমাণ ধার্য্য আছে ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা বাংলাদেশ সরকার দেয়ার কথা।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির আওতায় নগরের ৪১ ওয়ার্ডে পাঁচ মিটারের বেশি প্রশস্ত সড়কে ৪০, ৬০, ১০০ ও ২৫০ ওয়াটের ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি, ২০ হাজার ২৬৭টি জিআই পোল এবং ৫০৭টি কন্ট্রোল সুইচবক্স বসানোর কথা। এছাড়া হাইড্রোলিক বীম লিফটার ও ইলেকট্রিক্যাল ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহ করার কথা।

যে কারণে বন্ধ প্রকল্পের কার্যক্রম : ইআরডি (অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগ) সূত্রে জানা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এ পর্যন্ত ৭৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের তিনটি ঋণচুক্তি হয়। যা লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) নামে পরিচিত। চুক্তি অনুযায়ী ঋণের অর্থ দিবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে ২০১০ সালের আগস্টে ৮৬ কোটি মার্কিন ডলারের প্রথম এলওসি চুক্তি হয়। এছাড়া ২০১৬ সালের মার্চে ২০০ কোটি ডলার দ্বিতীয় এবং ২০১৭ সালের মার্চে ৪৫০ কোটি ডলারের তৃতীয় এলওসি চুক্তি হয়। তিনটি চুক্তির বিপরীতে গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১৮৪ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে।

তিনটি এলওসি চুক্তির বিপরীতে চসিকেরটিসহ দেশে মোট ৪০টি প্রকল্প নেয়া হয়। এর মধ্যে চলমান ছিল ৮টি প্রকল্প। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলন শুরু হলে নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রকল্পের ভারতীয় ঠিকাদার এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য লোকজন নিজ দেশে চলে যান। এরপর থমকে যায় প্রকল্পের কাজ। এরপর ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। ব্যতিক্রম ছিল না চসিকের আলোকায়ন প্রকল্পটিও।

এ অবস্থায় একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় চলমান প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখেই সেগুলো হাতে নেওয়া হয়েছিল। এসব প্রকল্প বন্ধ হবে না’।

তব ২ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ইআরডিএ’তে একটি পত্র দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটির কার্যক্রম গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থাগ্রহণ করতে বলা হয় ওই পত্রে। এরপর প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রাখে চসিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরেকটা এক-এগারোর পাঁয়তারা চলছে : নাহিদ
পরবর্তী নিবন্ধবর্ষা এলে বাড়ে আতংক