চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১ শতাংশ অর্থ আদায়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বন্দরের বাৎসরিক আয় থেকে সার্ভিস সার্জ হিসেবে দাবি করে নৌ–পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পত্র দিচ্ছেন তিনি। মন্ত্রণালয়টির উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে বন্দর চেয়ারম্যান টাইগারপাস নগর ভবনে সাক্ষাতে এলে সিটি মেয়র ‘নগর উন্নয়ন মাশুল’ হিসেবে অর্থ প্রদানের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। গত ২১ নভেম্বর এবিষয়ে দৈনিক আজাদীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নৌ–পরিবহন মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, তাতে সিটি কর্পোরেশনকে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১ শতাংশ হারে অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। এ অর্থ পেলে চসিকের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রধান সড়ক, কালভার্ট ও টেকসই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদনে চসিক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
সার্ভিস চার্জের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, চট্টগ্রামের অধিকাংশ রাস্তা ৬–১০ টন ওজনের গাড়ির জন্য নির্মাণ করা হলেও ৫০–৬০ টনের বোঝা নিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। হাজার হাজার ট্রাক, লরিসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করায় নগরের অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর, জেটি হতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী সড়কগুলো এ কারণেই প্রতিনিয়ত নষ্ট হয়। এসব ভারী যানবাহনের কারণে নিয়মিত রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নগরবাসীর চলাচলে যানজটসহ চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। জনগণের চলাচলের জন্য সুষ্ঠু সড়ক ব্যবস্থাপনা সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম দায়িত্ব। এসব রাস্তাঘাট নিয়মিত সংস্কার করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন যা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে যোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের যে ন্যায্যা হিস্যা সেটা বন্দর অবশ্যই দিবে বলে মনে করি। এটা সিটি কর্পোরেশনের পাওনা। তাই বন্দরের উচিত এ টাকা দিয়ে দেয়া। বন্দর তো সব জায়গায় টাকা দিচ্ছে, কর্পোরেশনের পাওনা কেন দেবে না। তিনি বলেন, বন্দরের বড় বড় গাড়িগুলো কিন্তু আমাদের রাস্তা দিয়ে চলছে। আমরা তাদের আমাদের সমস্ত লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছি। বন্দরের ভারী গাড়িতে আমাদের সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সড়কগুলো মেরামত করতে কর্পোরেশনের রাজস্ব আয়ের বড় অংশ চলে যায়। বন্দরকে সচল রাখতে ভাল সড়ক নির্মাণে চসিকের অনেক অর্থের প্রয়োজন। বন্দর যদি আয়ের ১ শতাংশ চসিককে দেয় তাহলে চসিক অবকাঠামো খাতে আরো ভূমিকা রাখতে পারবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রাম ভূ–প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর নগরী। এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অনেক অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। এই নগরীর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন সত্যিকার অর্থে নানান আর্থিক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত থাকায় এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে উন্নীত করার মতো দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এটাও সত্য যে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে। নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সর্বোপরি নাগরিক সুযোগ–সুবিধা এবং বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠবে। জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এ কারণেই চট্টগ্রামকে বলা হয় জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। আমদানি–রফতানির ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না।
সঠিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলে চট্টগ্রাম হবে সত্যিকার অর্থে আধুনিক নগরী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের বৃহত্তম বন্দর চট্টগ্রামে। এ কারণে চট্টগ্রামকে বলা হয় বন্দরনগরী। বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। এই বন্দরকে বাঁচাতে হলে চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনও বিকল্প নেই। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে চট্টগ্রাম দ্রুত এগিয়ে যাবে। দেশেরও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। মনে রাখতে হবে, চট্টগ্রামকে অবহেলিত রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর–পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন নেতৃত্ব। সিটি করপোরেশনের মেয়র যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এখন সবার কাজ হলো তাঁকে সহযোগিতা করা।