চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেছেন, বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করবে না। এটা জনগণকে পেমেন্ট করতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, বন্দরে নেই কেন? আমরা কারো গোলাম না। আমার টাকায় আপনারা চালান। ট্যারিফ বাড়ানো ষড়যন্ত্র। মোংলা, পায়রায় বাড়াননি। আমি ৪০ বছর ব্যবসা করছি। কচি খোকা নই। বন্দর বাঁচাতে হবে। বন্দরকে কস্ট বেইজড ট্যারিফ করতে হবে। আমরা কি গোলাম? কলুর বলদ? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন ট্যারিফ বাড়াবে? আর কোনো টাকা বন্দরের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। এনসিটির পর একটি পতেঙ্গা টার্মিনাল হয়েছিল। সেটি দিয়ে দিয়েছেন! গতকাল রোববার দুপুরে নগরীর রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বন্দরকে হঠাৎ করে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়াতে হবে কেন? এটা আমাদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তো এত জবাবদিহি নেই যে, তাদের বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর জন্য উঠে–পড়ে লাগতে হবে। ট্যারিফ বাড়ানোর জন্য কাদের এত বেশি আগ্রহ তাদের শনাক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, বন্দর নিয়ে খেলা শুরু হয়েছে। এ খেলা খেলতে দেওয়া হবে না। বন্দরে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে একজন প্রতিনিধিকে পরিচালক বানাতে হবে। ২০০৩ সালে বাফার সঙ্গে গার্মেন্টসের সমস্যা হয়েছিল। আমি চেম্বারের সভাপতি ছিলাম। বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ একসঙ্গে প্রতিরোধ করতে পেরেছিলাম। এবার বন্দরের নতুন ট্যারিফ সাধারণ মানুষকে দিতে হবে। দেশে ভালো ব্যবসায়ী আছে বলেই প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বন্দর নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে তা খেলতে দেওয়া হবে না। বন্দরে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে একজন প্রতিনিধিকে পরিচালক বানাতে হবে।
বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বলেন, তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি–রপ্তানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যয় বেশি। তারপর আবারও ট্যারিফ বাড়ানো হচ্ছে। সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসবে পোশাক শিল্পের ওপর। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় চট্টগ্রাম বন্দরকে কখনো লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে?
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দর জনগণের টাকায় তৈরি সেবার জন্য। ২০২৩ সালের বন্দর আইনে উপদেষ্টা পরিষদ বাতিল করেছে। স্বাধীনতার সময় বন্দরে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার বন্দর আছে। আড়াই হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে। এ দেশের গার্মেন্টস থেকে বায়ার পোশাক কিনবে না। ভিয়েতনাম, ভারতে চলে যাবে বায়ার। বন্দর আমাদের কাছে নেই। আমাদের চুষে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করছে। আমদানি খরচ বাড়লে রপ্তানি খরচ বাড়বে। সব শিপিং এজেন্টকে সমভাবে নির্ধারণের দায়িত্ব চিটাগাং চেম্বারের।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিপিং এজেন্ট ফি বাড়াবে। ভিয়েতনামের তিন গুণ খরচ হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। আজকের দিনে ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলার কোনো সংগঠন নেই। ব্যবসায়ী সমাজ বিচ্ছিন্ন, হতাশাগ্রস্ত। সরকারি আমলারা এখন চট্টগ্রাম চেম্বার চালাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতি, রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এম এ সালাম বলেন, বন্দর ব্যবসা করে না, সেবা দেয়। বন্দর লাভ করে। আমরাও চাই না বন্দর লস করুক। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে এটা ট্যারিফ বাড়ানোর সময় নয়। ব্যবসা–বাণিজ্য নিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে নেই। আমরা চাই না বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে আমাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়। এক মাসের জন্য ট্যারিফ আদায় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এক মাস সময় শেষ হচ্ছে। আমরা চাই, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করুক, আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন বাড়তি ট্যারিফ আদায় করা না হয়।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, দেশে প্রধান বন্দর নদীনির্ভর। বন্দরের মাশুল বাড়ানো নিয়ে আমাদের ক্ষোভ আছে। আমরা বলেছি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়াতে। ১৯৮৬ সালে ডলার ছিল ৩০ টাকা। এখন ডলারের দাম চার গুণ বেড়েছে। শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট বাড়িয়েছে। ৪১ শতাংশের মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ২০ ফুটের কন্টেনারে ১২–১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে। আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ চাই, আমরা স্বনির্ভর দেশ গড়ে দেব।
বেপজিয়ার সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভির বলেন, আমরা সাফার করছি বিভিন্ন কারণে। অনেক সিদ্ধান্ত আসছে, ব্যবসায়ীদের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য আরএমজি। বায়াররা খরচ কমাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কস্ট মিনিমাইজ করছে। বাংলাদেশ কস্ট আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা হতাশার। বন্দরের নতুন ট্যারিফে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে যাব। আমরা এখনো আমদানিনির্ভর দেশ। আমদানি করে রূপান্তরের মাধ্যমে রপ্তানি করি আমরা। ভুলে গেলে চলবে না বন্দর অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ১০–১৫ বছর ধরে বে টার্মিনালের কথা শুনে আসছি। আমি আশা করব, সরকার বন্দরের মাশুল বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত করবে।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়বের সভাপতিত্বে সভায় বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সহসভাপতি হাবিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।