আমদানির অনুমতি পাওয়ার প্রথম দিনেই দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। আর এই খবরে পণ্যটির দাম পাইকারি বাজারেও কমছে ৩০ টাকা। এদিন কৃষি মন্ত্রণালয় ২১০টি আমদানির অনুমতি বা আইপি অনুমোদন করেছে, যার মাধ্যমে আসবে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন পেঁয়াজ। আর বেনাপোল, হিলি, ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে ট্রাকে ট্রাকে পেঁয়াজ ঢোকাও শুরু হয়েছে।
পেঁয়াজের দর রোজার ঈদের পর থেকেই বাড়তে শুরু করেছিল। এক মাসের ব্যবধানে তা ৩০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় উঠে যায়। গত কয়েকদিন ধরে ১০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছিল। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে এতদিন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি কৃষি মন্ত্রণালয় না দিলেও পরিস্থিতি দেখে রোববার সায় দেয়। তার প্রভাবই পড়তে শুরু করেছে পাইকারি বাজারে। খবর বিডিনিউজের।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ বলেন, সোমবারই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা করে কমে গেছে। প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। আমি পরিস্থিতি আরও দেখব। পেঁয়াজ আমদানি করব কিনা আরও কয়েকদিন পরে সিদ্ধান্ত নেব।
দেশের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। গতকাল সকালে খাতুনগঞ্জে ঘুরে মানভেদে পেঁয়াজ কেজিতে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে খুচরা বাজারে তার প্রভাব এখনও দেখা যায়নি। আড়তদাররা বলছেন, আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে নামলেই দাম কমে যাবে।
বিভিন্ন বন্দরে পেঁয়াজের ট্রাক : দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ৩ ট্রাকে ৬৬ টন ভারতীয় পেঁয়াজ এসেছে। হিলি আমদানি–রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন–উর রশিদ জানান, আমদানিকারকরা দেড়শ থেকে দুইশ ডলারের মধ্যে পেঁয়াজ কিনেছেন। তাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল দুপুরের পর থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠান পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেড। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপক মাইনুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫৬টি ভারতীয় ট্রাকে ১ হাজার ৬২ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ এসেছে। শুনেছি, ওপারে ভারতের মহদিপুর বন্দরে বেশ কিছু পেঁয়াজের ট্রাক অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য। আগামীকালও পেঁয়াজের ট্রাক বাংলাদেশে আসবে।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল বিকালে ৮ ট্রাক পেঁয়াজ আসার কথা জানিয়ে সেখানকার শুল্ক স্টেশনের তথ্য কর্মকর্তা শান্ত হাওলাদার জানান, আরও ১০ ট্রাকের মতো পেঁয়াজ ঢুকতে পারে।
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে তিনটি ট্রাকে ৭৫ টন পেঁয়াজ আমদানির কথা জানিয়েছেন বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার।
বেনাপোল শুল্কভবনের ডেপুটি কমিশনার তানভির আহমেদ জানান, প্রতি টন পেঁয়াজ ২০০ ডলার মূল্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ৩০ লাখ টনের মতো। তবে চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হয়। ২০২১–২২ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ৯ লাখ টন বেড়েছে। দুই বছর আগে যেখানে উৎপাদন হতো ২৫ লাখ টনের মতো, সেখানে এবার উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌছাতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫–৩০ শতাংশ বাদে গত বছর নিট উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার টন।