বন্দরে বছরে ৩০ লক্ষাধিক কন্টেনার হ্যান্ডলিং

করোনার দাপটের মাঝেও প্রবৃদ্ধি।। ১১ কোটি টনেরও বেশি খোলা পণ্য উঠানামা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২ জুলাই, ২০২১ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

করোনাকালেও ত্রিশ লাখ টিইইউএস-এর বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। একই সাথে এগার কোটি টনেরও বেশি খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং করেছে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার এই বন্দর। জাহাজের আনাগোনাও গত বছরের তুলনায় প্রায় আট শতাংশ বেড়েছে। কন্টেনার, খোলা পণ্য এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং মিলে সবকিছুতে প্রবৃদ্ধি হওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। করোনাকালের বিপর্যয় না থাকলে প্রবৃদ্ধি আরো বেশি হতো বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশেরও বেশি সম্পন্ন হয়। গত এক বছরে করোনাকালে পৃথিবীর নানা দেশে লকডাউনসহ প্রতিকুল পরিস্থিতিতে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য নানাভাবে ব্যাহত হয়েছে। এর মাঝেও চট্টগ্রাম বন্দর সদ্য সম্পন্ন অর্থবছরে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছে। এরমধ্যে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার ছিল ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩০ টিইইউএস এবং রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার ছিল ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৬ টিইইউএস। আগের অর্থবছরে ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৪ টিইইউএস আমদানি পণ্য এবং ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬৬ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার মিলে সর্বমোট ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছিল। অর্থাৎ চলতি বছর বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.১০ শতাংশ। গত বছরও করোনার দাপটে প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে নেমে গিয়েছিল। আগের অর্থবছরে বন্দরের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২.৯২ শতাংশ। গত দুই বছরে করোনার বিপর্যয় না থাকলে বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং ৩৫ লাখ টিইইউএস ছাড়িয়ে যেতো বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।
কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের খোলা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দরে খোলা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৯৮ শতাংশ। আগের বছর প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩.৩৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দরে সদ্য সম্পন্ন অর্থ বছরে ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৩ টন পণ্য হ্যান্ডলিং করা হয়। এরমধ্যে আমদানি পণ্য ছিল ১০ কোটি ৬২ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪৪ টন এবং রপ্তানি পণ্য ছিল ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার ২৯ টন। আগের অর্থবছরে বন্দর খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং করেছিল ১০ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৭২ টন। আগের অর্থবছরে আমদানি পণ্য ছিল ৯ কোটি ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার ৩১৮ টন এবং রপ্তানি পণ্য ছিল ৬৭ লাখ ৯৭ হাজার ৯৫৪ টন। খোলা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে বন্দরে ১৫ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধির রেকর্ড রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি না হলেও এক্ষেত্রেও বন্দরের প্রবৃদ্ধি আরো বৃদ্ধি পেত বলেও সূত্র জানিয়েছে।
বিশ্বের শিপিং সেক্টরে জাহাজের আকৃতি ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। এতে করে পণ্য পরিবহনে আগের থেকে জাহাজ কম লাগছে। তবে খোলা পণ্য এবং কন্টেনারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় সদ্য সম্পন্ন অর্থবছরে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪ হাজার ৬২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়। জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৭.৯২ শতাংশ। আগের অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল ৩ হাজার ৭৬৪টি। ওই বছর প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১.৭৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যাপী করোনার বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতেও চট্টগ্রাম বন্দর প্রবৃদ্ধি অর্জন করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, করোনার কারণে দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের নানামুখী সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে। এতে করে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। তবুও সরকারের কিছু গণমুখী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য রক্ষা পেয়েছে। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। আমাদের বেশ কয়েকজন সহকর্মী করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তবুও আমরা থেমে যাইনি। আর এর সুফল হচ্ছে ত্রিশ লাখ টিইইইউসেরও বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং। ১১ কোটি টনেরও বেশি খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে বন্দরের কার্যক্রম বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে বলে উল্লেখ করে মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের এসব কর্মকাণ্ড দেশের অর্থনীতির সূচক নির্ণয় করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশাটারে হাত রেখে দাঁড়িয়ে দোকানি
পরবর্তী নিবন্ধমডার্নার টিকা আসছে আজ ও কাল ২ চালানে