দায়িত্ব নেয়ার একদিনের মাথায় নয়া চেয়ারম্যান নয়া নির্দেশনার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অনিয়ম ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা পণ্যবাহী জাহাজে বন্দর কর্তৃপক্ষের স্বীকৃত ওয়াচম্যান নিয়োগে বাধ্যবাধকতার পুরানো নির্দেশটি পুনরায় জারি করা হয়েছে। যার যেভাবে ইচ্ছে ওয়াচম্যান নিয়োগ করা যাবে না। এছাড়া আইএসপিএস কোড কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্যও সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্সিগুলোকে কড়াকড়িভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল এই সংক্রান্ত আগের নির্দেশনাটি নতুন করে জারি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পণ্য খালাস করে এমন প্রতিটি জাহাজেই নিরাপত্তার জন্য ওয়াচম্যান নিয়োগের ব্যাপারে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। আইএসপিএস কোড অনুসরণের জন্যও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। কিন্তু প্রচলিত নিয়ম কানুন অনুসরণ না করে অনেক শিপিং এজেন্সি বিভিন্ন লোকজনকে ওয়াচম্যান হিসেবে জাহাজে পাঠিয়ে আসছিল। যারা রাতে দিনে জাহাজ পাহারা দেয়। কিন্তু কোন জবাবদিহিতা না থাকায় ওয়াচম্যানের আড়ালে নানা অনিয়ম করার সুযোগ রয়েছে। ওয়াচম্যানের আড়ালে মাদক ব্যবসা, চোরাচালান ও পণ্য লোপাটেরও অভিযোগ রয়েছে। আইএসপিএস কোড অনুযায়ী একটি মাদার ভ্যাসেল থেকে অনুমোদিত লাইটারেজ জাহাজ ছাড়া যে কোন ধরনের নৌযানে পণ্য খালাস করার সুযোগ নেই। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে বহির্নোঙরে এ তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। কয়েকশ’ অননুমোদিত ভলগেট বহিনোঙরে পণ্য খালাস করে। যেগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে চলাচলের কোন অনুমোদনই নেই। কর্ণফুলীর মোহনা পার হওয়ার অনুমোদন নেই এমন নৌযানও দিব্যি বহির্নোঙরে গিয়ে বিভিন্ন জাহাজ থেকে লাখ লাখ টন পণ্য পরিবহন করছে। বিষয়গুলো ওয়াচম্যানের দেখার দায়িত্বে পড়লেও তা দেখা হয় না। ওয়াচম্যানদের ম্যানেজ করে শিপিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংস্থার শুল্ক না দিয়ে পণ্য খালাস করে নেয়ার অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি ৫৮ ধারার যথেচ্ছ অপব্যবহারের অভিযোগও অনেক। বিষয়গুলোর সাথে বহির্নোঙরে গড়ে উঠা প্রভাবশালী একটি চক্র জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের শক্তিশালী একটি ওয়াচম্যান পুল এই ধরনের অনিয়ম এবং বিশৃংখলা ঠেকানোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।
নয়া চেয়ারম্যান হিসেবে রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান দায়িত্ব নেয়ার একদিনের মাথায় প্রতিটি জাহাজে ওয়াচম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে তিন বছর আগেকার পুরানো নির্দেশনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বন্দরের ওয়াচম্যানকেই জাহাজটির পণ্যসহ আনুষাঙ্গিক বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট জবাবদিহি করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের তালিকাভুক্ত শ’ পাঁচেক ওয়াচম্যানের ডাটাবেস বন্দরের রয়েছে। এদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ওয়াচম্যান বন্দরের সিকিউরিটি বিভাগের মাধ্যমে জাহাজে নিয়োগ দিতে হবে। এদের বেতন ভাতাও সিকিউরিটি বিভাগের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। একই সাথে বন্দরের বহির্নোঙরে আসা বিভিন্ন মাদার ভ্যাসেলের ক্যাপ্টেনকে আইএসপিএস কোড পুরোপুরি অনুসরণেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা অনুসরণ করলে যে কোন ধরনের নৌযানে পণ্য খালাসের সুযোগ থাকবে না বলেও সূত্র জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বন্দরের তালিকাভুক্ত ওয়াচম্যান রয়েছে। যাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত বন্দরের হাতে রয়েছে। তালিকাভুক্ত এসব ওয়াচম্যান বন্দরের সিকিউরিটি বিভাগের সাহায্যে জাহাজে নিয়োগ দেয়া হয়। এতে ওয়াচম্যানেরা বাড়তি সতর্ক থাকে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আহসানুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা বাইরে থেকে কোন ওয়াচম্যানই দিই না। বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই দিয়ে থাকি। এই নিয়ে ওয়াচম্যানদের বিভিন্ন গ্রুপের ক্ষোভ রয়েছে। মামলা মোকর্দমাও হয়েছে।
এই ব্যাপারে লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের প্রধান নির্বাহী মাহবুব রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বহির্নোঙরে মাদারভ্যাসেলের জন্য ওয়াচম্যান অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এদের নিয়ে নতুন চেয়ারম্যানের নয়া চিন্তা বহির্নোঙরে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।