চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ এক মাসের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। বাংলাদেশ মেরিটাইম ল’ সোসাইটির দায়ের করা একটি রিটের প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার এই নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ট্যারিফ বৃদ্ধির এসআরও এবং সার্কুলারকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
সূত্র জানায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী বন্দরের বিভিন্ন সেবা খাতে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। গেজেট প্রকাশের দিন থেকে বাড়তি ট্যারিফ কার্যকরের কথা বলা হলেও পরে বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তির মুখে ট্যারিফ আদায় এক মাস স্থগিত রাখা হয়। ১৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে বাড়তি ট্যারিফ আদায় শুরু হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের মুখে সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং ট্রাক কাভার্ডভ্যান ও প্রাইমমুভার চালকদের গেট পাসের বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করে আগের নিয়মে আদায় করা হচ্ছে।
ট্যারিফ কমানোর জন্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা আন্দোলনে নেমেছেন। ইতোমধ্যে দুটি সমাবেশ করে আল্টিমেটাম দেয়াসহ ব্যবসায়ী নেতাদের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থান নেয়া হয়। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বর্ধিত ট্যারিফ অযৌক্তিক উল্লেখ করা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ গড়ে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর কথা উল্লেখ করলেও ব্যবসায়ীরা বিষয়টি মানতে নারাজ। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছয়–সাত গুণ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। এটা অস্বাভাবিক। তারা বলেন, বন্দর একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। কস্ট বেইজড সার্ভিস প্রদানের জন্য বন্দর অঙ্গীকারাবদ্ধ। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মতো আচরণ করছে।
বিদ্যমান টানাপোড়েন এবং পাল্টাপাল্টি পরিস্থিতির মাঝে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন সরকারি সফরে আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রাম আসছেন। তিনি সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কন্টেনার ইয়ার্ড, বে টার্মিনাল এলাকায় নবনির্মিত ট্রাক টার্মিনাল এবং তালতলা কন্টেনার ইয়ার্ড উদ্বোধন করে বন্দরের এক্সওয়াই শেড এবং কাস্টমস অকশন শেড পরিদর্শন করবেন। এদিকে ট্যারিফ নিয়ে আজ বিকালে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে নৌ উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণে সেটা স্থগিত করা হয়েছে।
মেরিটাইম ল’ সোসাইটি ২০ অক্টোবর রিট পিটিশন নং ১৬৯৩১/২০২৫ দাখিল করে। তারা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জারি করা ১৪ সেপ্টেম্বরের ট্যারিফ বৃদ্ধির এসআরও নং ৩৬৪–আইন/২০২৫ এবং সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করে। রিটে বলা হয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত উক্ত গেজেট অনুযায়ী ট্যারিফ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আইনগত কর্তৃত্ববিহীন এবং জনস্বার্থবিরোধী।
রিটের শুনানি শেষে হাই কোর্টের বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং বিচারপতি আয়নুন নাহার সিদ্দিকা রুল জারি করেন। কেন এই এসআরও এবং সার্কুলারকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে আদালত ৩০ দিনের জন্য উক্ত সার্কুলারের কার্যকারিতা স্থগিত করেছে, যার মাধ্যমে নতুন ট্যারিফ কার্যকর করার প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহিউদ্দিন আবদুল কাদের বলেন, হাই কোর্টের এই আদেশের ফলে আপাতত নতুন ট্যারিফ কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকছে এবং আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত পূর্বের হারেই ট্যারিফ আদায় করতে হবে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।







