বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে গতি আনার পাশাপাশি আমদানি বাণিজ্যের সংকট নিরসন এবং গতি আনতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই বিল অব লেডিংয়ের (বিএল) অন্তর্ভুক্ত সকল কন্টেনার একসাথে ডিপোতে স্থানান্তরের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠা বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) বরাবরে প্রেরিত এক জরুরি পত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষ উপরোক্ত নির্দেশনা প্রদান করে। এতে জাহাজ থেকে পণ্যবোঝাই কন্টেনার অবতরণের চার দিন ফ্রি টাইমের মধ্যে সকল কন্টেনার একসাথে ডিপোতে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গত ২১ এপ্রিল বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ম্যানেজার এই চিঠি প্রদান করেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে একাধিক আমদানিকারক বলেছেন, বিষয়টি কার্যকর হলে আমাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে।
সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের অন্তত ৯২ শতাংশ আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই এসব কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে খালাস হয়। শিল্প ও বাণিজ্য খাতের ৫০ ক্যাটাগরির আমদানি পণ্য বন্দর থেকে বেসরকারি ডিপোগুলোতে নেওয়া হয়। ওখান থেকে আমদানিকারকদের সরবরাহ দেওয়া হয়। জাহাজ থেকে খালাস হওয়ার চার দিন পর্যন্ত কন্টেনারগুলো বিনা মাশুলে বন্দরের ইয়ার্ডে রাখার সুযোগ রয়েছে। এরপর থেকে প্রতিদিনের জন্য নির্দিষ্ট হারে ভাড়া গুণতে হয়।
আমদানিকারকদের ৫০ ক্যাটাগরির পণ্যের কন্টেনার বেসরকারি ১৯টি আইসিডিতে নিয়ে ওখান থেকে সরবরাহ নেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ডিপোর কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমদানিকারকরা একই বিএলের অন্তর্ভুক্ত কন্টেনার একসাথে খালাস না হওয়ায় নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করে আসছিলেন। বিশেষ করে একই বিল অফ লেডিংয়ে থাকা সব কন্টেনার একসাথে বন্দরের ইয়ার্ড থেকে ডিপোতে স্থানান্তর না করায় আমদানিকারকরা সময়মতো শুল্কায়ন এবং কন্টেনার খালাস করতে পারেন না বলে অভিযোগ করে আসছিলেন। তারা বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে দফায় দফায় বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেন। আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে একটি বিএলের মাধ্যমে আনা সকল কন্টেনার একসাথে বন্দর থেকে যাতে ডিপোগুলোতে ডেলিভারি নেয় তার ব্যবস্থা করার জন্যও আবেদন করেন। কিন্তু ডিপোগুলোতে কন্টেনার স্থানান্তরের সময় বিভিন্ন বিএলের কন্টেনার সরিয়ে নেওয়া হয়। কখনো একটি বিএল থেকে ৫টি কন্টেনার নিলে অপর বিএল থেকে দুটি কিংবা অন্য একটি বিএল থেকে তিনটি কন্টেনার স্থানান্তর করা হয়। এতে করে তিনজন আমদানিকারকের পণ্য স্থানান্তর হলেও তারা তিনজনের একজনও ডিপো থেকে কন্টেনার সরবরাহ নিতে পারেন না। কারণ আংশিক বিএলের শুল্কায়নের সুযোগ নেই। একটি বিএলের মাধ্যমে আমদানিকৃত সকল কন্টেনার একসাথে শুল্কায়ন করার বিধান রয়েছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২১ এপ্রিল নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। স্মারক নং–টিএম/অফডক/বিবিধ/২৩/১০৪৮৩ মূলে জারি করা উক্ত নির্দেশনায় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমের জটিলতা পরিহার করার স্বার্থে জাহাজ থেকে ডিপোগামী কন্টেনারসমূহ অবতরণের ৪ দিন ফ্রি টাইমের মধ্যে একই বিএলের অন্তর্ভুক্ত সকল কন্টেনার একসাথে ডিপোতে স্থানান্তর করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, একই বিএলের অন্তর্ভুক্ত সকল কন্টেনার একসাথে সংশ্লিষ্ট ডিপোতে স্থানান্তর নিশ্চিত করা আবশ্যক। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায়, একই বিএলভুক্ত কিছু কন্টেনার ডিপোতে নেওয়া হলেও অবশিষ্ট কন্টেনার বন্দরের অভ্যন্তরে পড়ে থাকে। ফলে আমদানিকারকের তার কার্গো পেতে বিলম্ব হয়। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ডিপোতে দ্রুত স্থানান্তর করার লক্ষ্যে এসোসিয়েশনের সকল সদস্যকে প্রয়োজনীয় জরুরি নির্দেশনা প্রদানের জন্য বিকডা সভাপতি এবং সম্পাদককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একাধিক আমদানিকারক গতকাল বলেন, একই বিএলভুক্ত কন্টেনার পৃথক পৃথকভাবে ডিপোতে স্থানান্তর করায় আমরা সময়মতো পণ্য খালাস করতে পারি না। এতে আমাদেরকে নানা সংকটে পড়তে হয়। এছাড়া সময়মতো খালাস করতে না পারায় ডিপোতে কন্টেনার আটকে থাকার ফলে শিপিং এজেন্ট এবং ডিপো খাতেও মোটা অংকের অর্থ গচ্ছা দিতে হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশনা অনুসরণ করে ফ্রি টাইমের মধ্যে একই বিএলভুক্ত সব কন্টেনার একসাথে খালাস করে নিলে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা সরবরাহ নিতে পারব; যা পণ্য আমদানি, ব্যবসা–বাণিজ্য এবং উৎপাদনসহ সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক আবহ তৈরি করবে।
বিকডার মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন সিকদার বলেন, সচরাচর আমরা একই বিএলের অন্তর্ভুক্ত সকল কন্টেনার ফ্রি টাইমের মধ্যে খালাস করে থাকি। ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এদিক–ওদিক হতে পারে। তিনি বলেন, বিদেশে জাহাজে যখন কন্টেনার বোঝাই হয় তখন বিএল ধরে হয় না। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও বিএল ধরে কন্টেনার ইয়ার্ডে রাখতে পারে না। কখনো দেখা যায় একই বিএলের কন্টেনার নিচের রো’র পাশাপাশি একেবারে উপরের রো’তে রাখা হয়েছে। এখন বিএল ধরে কন্টেনার আনাতে গেলে অনেকগুলো কন্টেনার সরানোর পরই কেবল নিচের কন্টেনারটি পাওয়া যায়; যা সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টকর। বন্দরের অপারেটররা আমাদের ট্রলিতে কন্টেনার তুলে দেওয়ার সময় এত কষ্ট করতে চান না। ফলে দুয়েকটি বিএলের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। চিঠি দেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক মন্তব্য করে বলেন, এতে নিশ্চয় আমরা সচেতন হব। একইসাথে বন্দরের অপারেটররাও সচেতন হবেন। বিষয়টি কার্যকর হলে সবার জন্য ভালো হবে।