নতুন বছর, নতুন বই, নতুন ক্লাস সবকিছু মিলিয়ে মনে ভীষণ আনন্দ। নতুন বইয়ের গন্ধটাও অপূর্ব। মলাটগুলো এত সুন্দর দেখলে মন ভরে যায়। সারাবছর পুরানো সুন্দর ক্যালেন্ডার গুলো গুছিয়ে রাখতাম বইয়ে বাঁধবো বলে। সন্ধ্যায় নিয়ম করে পড়তে বসা। ভাই বোন সবাই মিলে সুর করে নতুন কবিতা, গদ্য, গল্প কার আগে কে পড়ে শেষ করবো তার প্রতিযোগিতা চলতো। একটাই টেনশন কেমন করে ভালো নম্বর পাবো। এখন আর সে সব প্রতিযোগিতা নেই হারিয়ে গেছে আগে সিলেবাস শেষ করার প্রতিযোগিতা। মুখস্থ পড়া মুখস্থ করার পর মা বা বড়দের পিছনে পিছনে লেগে থাকতো পড়া নেবার জন্য।
হারিয়ে যাচ্ছে বাড়ির পড়া : এখন আর সন্ধ্যার পর এক জনের পড়া শুনে আরেকজন পাল্লা দিয়ে পড়তে বসে না। কোন মা–বাবা তার সন্তানকেও বলে না যে পাশের বাড়ির ওরা পড়ছে তুই কেন বসে আছিস?
অথচ দশ, বারো বছর আগেও সন্ধ্যার পর চারপাশ থেকে বিভিন্ন সুরে বিভিন্ন ভঙ্গিতে দুলে দুলে বই পড়ার আওয়াজ শোনা যেতো। পরীক্ষা কাছাকাছি আসলে তো কথাই নেই। কোন সহপাঠী বন্ধু দিনে ও রাতে কতোক্ষণ পড়ালেখা করে গোপনে খোঁজ নিয়ে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে পড়া হতো।
সবচেয়ে দুর্বল ছাত্রটিও রাত–দিন পড়তো। যে কোন পরীক্ষার আগে গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়ার অভ্যাসও আর নেই। এ জন্য অ্যালার্ম ঘড়ির বা মায়ের সহযোগিতা নিতে হতো। গুরুজনেরা বলতো ভোরের পড়া মনে থাকে মনে হয় কথাটা সত্য ছিলো। এখনও অনেক কবিতা গল্প মনে গেঁথে আছে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সবই প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর এখন দল বেঁধে ছাত্ররা মোবাইলে ব্যস্ত থাকে। কোথাও কোন পড়ার শব্দ নেই। গ্রুপ চ্যাটিং, অনলাইন/অফলাইন গেমস, পাড়ার মোড়ে আড্ডাবাজি, গ্রুপিং করা, কুশিক্ষা এগুলোই এখন তাদের পছন্দের তালিকায়। এটা সত্য পরীক্ষাতে পড়ার প্রতিযোগিতা থাকে।