বজ্রপাত থেকে রক্ষার জন্য জনসচেতনতার বিকল্প নেই

| রবিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

বজ্রপাতে আমাদের দেশে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ মারা যায়। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বজ্রপাতে দেশে গড়ে প্রায় ২৬৫ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশ্বে বজ্রপাতের কারণে যত মানুষ মারা যান, তাদের একচতুর্থাংশ বাংলাদেশের। বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে বজ্রপাত বেড়ে চলেছে।

বিজ্ঞানীদের অনেকে মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এটা বেশি হচ্ছে। তবে অনেক বিজ্ঞানীই আবার এর সঙ্গে একমত নন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রুদ্র রুষ্ট প্রকৃতি, উষ্ণতা বৃদ্ধি, উঁচু গাছপালা নিধন ও বিবিধ কারণে এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

বিশেষ করে বৈশাখজ্যৈষ্ঠ মাসে আমাদের দেশে বজ্রপাতের প্রকোপ বেশি পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশে খেটে খাওয়া চাষিরাই মূলত বজ্রপাতের শিকার হয় সবচেয়ে বেশি। ঝড়, বৃষ্টিতে বজ্রপাতের সময়ও তারা মাঠে কাজ করে থাকেন। ফলে বজ্রপাতে মৃত্যুহার তাদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এটি প্রতিরোধের কোনো উপায় বের করা সম্ভব হয়নি। এমনকি বিজ্ঞানীরাও বজ্রপাতের আগাম সংকেত দেওয়ার কৌশল আবিষ্কার করতে পারেনি। বজ্রপাতে মৃত্যুঝুঁকি কমাতে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। ঝড়বৃষ্টি, বজ্রপাতের সময় আমাদের অবশ্যই পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই খোলা স্থানে থাকা যাবে না।

বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই অন্যতম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটি হলো বজ্রপাত। বজ্রপাত কেন হয়। আবহাওয়াবিদের মতে, যখন কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি হয়, তখনই বজ্রঝড় হয়ে থাকে। কিউমুলোনিম্বাস মেঘ হচ্ছে খাড়াভাবে সৃষ্টি হওয়া বিশাল আকৃতির পরিচালন মেঘ; যা থেকে শুধু বিদ্যুৎ চমকানো নয়, বজ্রপাত, ভারি বর্ষণ, শিলাবৃষ্টি, দমকাঝড়ো হাওয়া এমনকি টর্নেডোও সৃষ্টি হতে পারে।

বায়ুমণ্ডলে বাতাসের তাপমাত্রা ভূভাগের উপরিভাগের তুলনায় কম থাকে। এ অবস্থায় বেশ গরম আবহাওয়া দ্রুত উপরে উঠে গেলে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শ পায়। তখন গরম আবহাওয়া দ্রুত ঠাণ্ডা হওয়ার সময় আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বজ্রপাতের কোন পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। তাই এর সতর্কতা অবলম্বন করা অনেকটা কঠিন। তবে বজ্রপাত সাধারণত ঝড় বৃষ্টির সময়ই হয়ে থাকে। এসময় নির্দিষ্ট নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার চেষ্টা করা উচিৎ। বজ্রপাতের সর্বোচ্চ মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রিক্যাল কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম খান বলেছেন বজ্রপাতের সময় ৬০০ মেগা ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। যেখানে একজন মানুষের ১০০ মেগা ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণেই মৃত্যু হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে বজ্রপাতের ভয়াল থাবা থেকে এসব সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে বাঁচাতে বেশি করে উঁচু বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। গ্রাম ও শহরের আবাসিক এলাকাগুলোতে ৪০ মিটার বা তার কাছাকাছি উচ্চতার তাল, নারিকেল, সুপারি, বাবলা, হিজল ও বটের মত গাছ অধিক হারে রোপন করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেশের হাওড় অঞ্চল সহ ২৩ টি জেলায় লাইটার এরেস্টার সংবলিত বজ্রপাত নিরোধক কংক্রিটের শেল্টার নির্মাণে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বজ্রপাত একটি আকস্মিক ঘটনা। যা দমন বা নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই।

বজ্রপাতে মৃত্যু বা হতাহত হবার ঘটনা এড়াতে অবশ্যই আরও বেশ কিছু বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, বজ্রপাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে খোলা জায়গা, খেলার মাঠ, উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, বা ধাতব খুঁটি থেকে দূরে থাকতে হবে এবং পুকুর, ডোবা, নদী ও জলাশয়ে কোনো অবস্থাতে থাকা যাবে না। কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংস্পর্শ রাখা যাবে না। বজ্রঝড়ে বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টিভি ও ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকেও বিরত থাকতে হবে এবং ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা, বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং ও লৌহার নলকূপ ইত্যাদির স্পর্শেও থাকা যাবে না। বজ্রপাত চলাকালীন অতি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে অবশ্যই রবারের জুতা পায়ে পড়ে বাইরে যেতে হবে। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে হলে এসব বিষয়ের উপর জনসচেতনতার বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে