বজ্রপাতে তিন জেলায় ছয় জনের মৃত্যু

আজাদী ডেস্ক

রাঙামাটি পেকুয়া খাগড়াছড়ি | শুক্রবার , ৩ মে, ২০২৪ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বৃহত্তর চট্টগ্রামের তিন জেলায় বজ্রপাতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে মারা গেছেন নারীসহ তিন জন। কক্সবাজারের পেকুয়ায় লবণ মাঠে মারা গেছেন দুই জন। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরের। এ ৬ জনসহ সারাদেশে গতকাল বজ্রপাতে মারা গেছে মোট ১১ জন। এদের মধ্যে ৪ জন মারা গেছে কুমিল্লায় এবং একজন সিলেটে।

আমাদের রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ও দুপুরে পৃথক তিনটি বজ্রপাতের ঘটনায় রাঙামাটিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া বজ্রপাতের সময় চায়ের দোকানে বসা অবস্থায় সাতজন আহত ও মাঠে একটি গবাদি পশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। নিহতরা হলেন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপকারী ইউনিয়নের মুসলিম ব্লক এলাকার বাসিন্দা বাহারজান (৫৭), সাজেক ইউনিয়নের লংথিয়ান পাড়ার বাসিন্দা তনিবালা ত্রিপুরা (৩৭) এবং জেলা সদরের তবলছড়ি সিলেটি পাড়ার বাসিন্দা মো. নজির (৫০)। এরমধ্যে বাহারজান ও নজির সকালে ও তনিবালা ত্রিপুরা দুপুরে বজ্রপাতে মারা যান।

বাঘাইছড়ি বড়াদম নামক একটি গ্রামে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় বজ্রপাতের ঘটনায় সাতজন আহত হয়েছেন। তারা হলেন, তরুণ চাকমা, তৃণা চাকমা, রবীন্দ্রনাথ চাকমা, সুষমলাল চাকমা, অক্ষয় মণি চাকমা, পাত্থর চাকমা ও অমর জ্যোতি চাকমা। এছাড়া বটতলী এলাকায় একটি গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে। রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জেসমিন চাকমা বলেন, সকাল ৯টার দিকে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হলে বাহারজান বেগম মাঠ থেকে গরু আনার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। তিনি রাস্তায় থাকা অবস্থায় বজ্রপাত হলে অজ্ঞান হয়ে যান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। একই ওয়ার্ডের বড়াদম গ্রামে বজ্রপাতে একটি চায়ের দোকানে বসে থাকা সাতজন আহত হন। সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বনবিহারী চাকমা বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির পাশে শূকরের ঘর পরিচর্যা করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তনিবালা ত্রিপুরা মারা যান।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিরীণ আক্তার বলেন, বাঘাইছড়ি রূপকারী ও সাজেক ইউনিয়নে বজ্রপাতে দুই নারী মারা গেছেন। কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাঙামাটি জেলা শহরের সিলেটি পাড়া এলাকায় কাপ্তাই হ্রদে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে মো. নজির (৫০) নামে একজন গুরুতর আহত হন। পরে তাকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা আজাদীকে জানান, আমরা বজ্রপাতে রাঙামাটি শহরের তবলছড়িতে একজন ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় দুজন নিহতের খবর পেয়েছি। এছাড়া সাতজন আহতের খবর শুনেছি।

চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, তীব্র ঝড়ো হাওয়ার সাথে তুমুল বজ্রপাত শুরু হলে পেকুয়ায় লবণ মাঠে বিছানো পলিথিন মুড়াতে এবং উৎপাদিত লবণ ঢেকে দিতে গিয়ে এক শিশুসহ দুই শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন বজ্রপাতে। বুধবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নের পৃথক স্থানে এই ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন মগনামা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কোদাইল্যাদিয়া এলাকার জমির উদ্দিনের পুত্র দিদারুল ইসলাম (৩০) ও রাজাখালী ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ছড়ি পাড়ার জামাল উদ্দিনের পুত্র মোহাম্মদ আরাফাত (১২)

পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজিবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে রাজাখালী ইউনিয়ন থেকে আরাফাত নামের এক শিশুকে স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিয়ে আসে। তবে এর আগেই তার মৃত্যু হয়। মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী তার ইউনিয়নের কোদাইল্যাদিয়ায় লবণ মাঠে বজ্রপাতে দিদারুল ইসলাম মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাত নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দিকে মাটিরাঙার বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বড়নাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্বজনরা জানান, বৃষ্টির সময় উঠানের পাশেই আম কুড়াতে যায় দুই ভাই। এসময় আকস্মিক বজ্রপাতে ছোটভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও বড়ভাই ইয়াছিন আরাফাত ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। নিহত ইয়াছিন আরাফাত বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়ার ছেলে।

মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডেজী চক্রবর্তী নিহতরের পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাকে উৎখাত করবে, পরে তাহলে কে আসবে
পরবর্তী নিবন্ধ১৫ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল, দুইজনের পক্ষে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সমর্থন