টুঙ্গিপাড়ার জন্ম শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনে দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের পর বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতায়/বন্ধুতে (বঙ্গবন্ধু) পরিণত হওয়ার মুহূর্তটি এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্রভিত্তিক জাতি জন্মলাভে অনন্য অবদান রেখে ‘জাতির জনক’ হয়ে উঠার শুভ লগ্নটি আমাদের জীবদ্দশাতে এবং চোখের সামনেই ঘটেছে। আমরা তার প্রকৃষ্ট সাক্ষী। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে দখলদার বাহিনীর ধিকৃত দোসররা ’৭৫-এর শোকাবহ ১৫ই আগস্টের পর থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাসে তাদের বর্বরতার কুৎসিত নখর চালিয়েছে। যার ফলে পুরো জাতির একটি (বিরাট) অংশ, বিশেষ করে ’৭১ পরবর্তী সময়ের প্রজন্ম জাতির সঠিক ইতিহাস জানার ও চর্চা করার সুযোগ পায় নাই। বিভিন্ন কায়দা-কৌশলে আমাদের যুব সমাজ তথা আপামর জনতাকে প্রকৃত ইতিহাসের প্রতি বিমূখ এমন কি মারমুখী করে তোলার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এবং ইতিহাস বিকৃতি শুরুর (’৭৫) প্রায় ৪৬ বছর পর, বর্তমান প্রজন্ম তাদের ‘রাষ্ট্র ও জাতি’ জন্মের সঠিক ইতিহাস জানতে চায়। চায় তারা ষড়যন্ত্রকারীদের বোনা বিভ্রান্তির জাল থেকে বেরিয়ে আসতে। জাতির সৌভাগ্য, আওয়ামীলীগ সরকার জাতির জনক হত্যার সেই ভয়াল দিনটিকে (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছে। সেই সুবাদে স্বাধীনতা সংগ্রামের নিরপেক্ষ তথ্যভিত্তিক বর্ণনা সবার সামনে উপস্থাপন করার সুযোগ হয়েছে।
এই ইতিহাসের প্রথমেই শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখ করতে হয়, ১৯২১ সালে বৃটিশ ভারতের বাংলায় জন্ম নেয়া শেখ মুজিব এদেশের শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য তাঁর বাল্যকাল থেকেই প্রয়োজনীয় প্রতিবাদ ও সংগ্রাম শুরু করেন এবং সর্বক্ষেত্রেই স্বমহিমায় আবির্ভূত হয়ে সমসাময়িক কালের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। এরই ফলশ্রুতিতে ভারত কাঁপানো সংগ্রামী জননেতা এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মৌলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খান, মৌলানা অবদুর রশীদ তর্কবাগিশ প্রমুখদের মতো ত্যাগী জননেতারা তরুণ শেখ মুজিবকে সংগ্রামের সামনের কাতারে এগিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধুও বাংলার জনগণের দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অভিযোগ, আশা-আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে অনন্য সাধারণ বিচক্ষণতার পরিচয় দেন। বাঙ্গালীর প্রত্যাশিত রাজনৈতিক সংগ্রামকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় এগিয়ে নেয়ার জন্য এক একটি অপ্রতিরোধ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এইরূপ অনেক কর্মসুচি বা পদক্ষেপের মধ্যেই ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠির আমন্ত্রণে লাহোরে গোলটেবিল আলোচনায় বসেই বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ ৬-দফা দাবী পেশ করেন। এই দিক-নির্দেশনা পেয়ে, স্বৈরসরকারের মুষ্টিমেয় দোসর ছাড়া আপামর বাঙালী ৬ দফা আদায়ের জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বঙ্গবন্ধু ও তার সহযোগীদের উপর সরকারী নির্যাতন, বন্দি করা হয় তাঁকে এবং আরো অনেককে। দেয়া হয় দেশদ্রোহী মামলা। বাংলার জনগণ, মুক্তির সনদ প্রণেতা তাদের সেই সূর্য সন্তানকে মুক্ত করার জন্য দূর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তোলে। পাকিস্তান সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী স্বৈরশাসক আয়ুব খান পদত্যাগ করেন। মুক্তি দিতে (২২/১/১৯৬৯ ইং) হয় বাঙ্গালীর অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। মুক্তির পর বিশাল সংবর্ধনায় সমবেত লাখো লাখো জনতা তাঁকে গ্রহণ করে নেয় দেশবন্ধু হিসেবে (২৪/১/১৯৬৯)। টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারের শেখ লুৎফুর রহমান ও সায়রা খাতুনের ‘খোকা’ নামক আদরের সেই ছেলেটি হয়ে উঠেন ‘বঙ্গবন্ধু’। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কোন একক পিতা-মাতার সন্তান নন। কোন একক এলাকার সন্তান নন, সারা বাংলার আপামর গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতা ও নির্দেশ দাতা হয়ে উঠেন। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষন তারই সাক্ষ্য বহন করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর আজীবন লালিত দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করে ছোট্ট দু’টি উদাহরণ তুলে ধরা যায়। বাংলাদেশের খ্যাতিমান চিকিৎসা বিজ্ঞানী বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নুরুল ইসলামের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু; ব্যক্তিগত চিকিৎসকের দৃষ্টিতে’ বই থেকে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর আলাপচারিতার কিছু অংশ উল্লেখ করছি –
“২৫শে জানুয়ারী ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিলেন। তিন চার দিন পর ভাবলাম একবার দেখা করা উচিত। সকালে আগের নিয়মে তাঁর ধানমন্ডির বাড়ীতে গিয়ে উপস্থিত হই। আমার সাথে আমার ভাতিজী জামাই ডাঃ আবদুল ওয়াদুদও ছিল। দু’জন একসাথে হাসপাতালে যাব, তাই এই ব্যবস্থা। বাড়ী থেকে বের হয়ে ভাবলাম কি করে দেখা করি। বঙ্গবন্ধু এখন রাষ্ট্রপ্রধান। দেখা করা কঠিন ব্যাপার হবে। ভাবলাম একবার চেষ্টা করে দেখা উচিত। রাস্তার মোড়ে দেখতে পেলাম পুলিশ আছে ঠিকই তবে সংখ্যায় আগে মতোই। গাড়ী রাস্তা বেয়ে গেটের ভিতরে ঢুকল। তারপর আমি নেমে নীচ তলা থেকে সিঁড়ি ভেঙ্গে একেবারে দোতলায় আগের নিয়মেই গিয়ে উঠলাম। খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু আমাকে ভিতরে নিয়ে যেতে বললেন। সালাম দিলাম।
‘বসেন ডাক্তার সাহেব’ – বললেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি খবরের কাগজ দেখছিলেন। একটু পর বললেন, ‘কেমন হল ডাক্তার সাহেব।’
বললাম ‘ভালই। তবে -’
‘কি বলতে চান বলুন ডাক্তার সাহেব।’
‘স্যার আমি তো এলাম ভয়ে ভয়ে। ভাবলাম পুলিশ বা আর্মড গার্ড যদি বাধা দেয়, তাহলে। অথচ দেখলাম রাস্তার মাথা থেকে বাড়ী পর্যন্ত কোনও পরিবর্তন নেই। ঠিক আগের মতই। এটা মোটেও ভালো হলো না।’
‘কি বলেন ডাক্তার সাহেব! তারা আপনাকে চিনে তাই বাধা দেয়নি।’
‘একটা কথা বলি স্যার।’
‘বলুন।’
‘আপনার এ বাড়ীর নিরাপত্তা নেই। পাশের বাড়ীর জানালা থেকে কেউ ঢিল ছুড়লে সোজা এখানে এসে পড়বে। ক্ষতি আপনজনদের দিয়ে হয়। শত্রুতা আপন লোকদের থেকেই হয়। আমার কেন জানি মনে হয় স্যার আপনার বঙ্গভবনে চলে যাওয়াই উত্তম।’
একটু থেমে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ডাক্তার সাহেব, আমার একটি ঘরেও কার্পেট পাতিনি। অসুখের সময় এয়ারকন্ডিশনার লাগাতে বলেছিলেন, তাও লাগাইনি। এটা আমার নীতির বিরুদ্ধে। এই বাড়ীতেই আমি থাকব। বঙ্গভবনে আমি যেতে পারব না।’ আমি চুপ করে রইলাম।
একটু পর বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ভয় করছেন ডাক্তার সাহেব? ঘাবড়াবেন না। আমার স্বাভাবিক মৃত্যু হবে না।’
এবার বেগম সাহেবাও বললেন, ‘বঙ্গভবনে সে যাবে না। কারণ ওখানে জনগণ তার সাথে দেখা করতে পারবে না।’
কেমন যন একটা খটকা লাগল। সালাম জানিয়ে সেদিনের মত বিদায় নিলাম। বারবার মনে পড়তে লাগল সেই এক কথা, ‘আমার স্বাভাবিক মৃত্যু হবে না।’ কিন্তু কেন? তিনি কি তা বুঝতে পেরেছিলেন?” প্রশ্নটা অমিমাংশিত রয়ে গেল।”
এখন অন্য একটি বই থেকে উদ্বৃতি দিচ্ছি । এর নাম ‘পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে একাত্তর’ – সম্পাদনা করেছেন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন এবং মহিউদ্দীন আহমদ। এই বইতে বেনজীর ভুট্টো, আসগর খান, ড. মুবাশ্বির হাসান, রাও ফরমান আলী ও জেনারেল নিয়াজিসহ পাকিস্তানের শীর্ষ ২৮ জন নেতৃবৃন্দের সাক্ষাতকার লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের কথায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর দল আওয়ামীলীগ ও তাঁর রাজনীতিকেই পাকিস্তানি শাসকচক্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে ধরা হয়েছে। অন্য কারো নাম নয়। তাদের সবার কথায় স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে -“৭০ এর নির্বাচনের পর শেখ মুজিবের আপোষ নয়, শান্তিপুর্ণ সমাধানের জন্য সমঝোতামূলক মনোভাব ছিল বলেই পাকিস্তান ও আমেরিকাসহ তাদের সব মিত্ররাই কূটনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে গিয়েছে। তবে ইয়াহিয়া-ভূট্টোর গোয়ার্তুমি এতে বাধ সৃষ্টি করেছে। শেষ পর্যন্ত বাঙালীদের স্বার্থ আদায়ে বঙ্গবন্ধুর আপোষহীন মনোভাবের জন্যই পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত হয়।”
কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয়, স্বাধীন ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের সর্ব প্রকার নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করা সত্ত্বেও, এক শ্রেণীর বিবেচনা শক্তিহীন লোক আজো বাংলাদেশকে স্বাধীন করার প্রয়োজন আদৌ ছিল কিনা, সেই প্রশ্নের অবতারণা করার সুযোগ খোঁজে। শুধু তাই নয়, তাদের মর্মহীন চিন্তাধারীদের দল ভারী করার প্রচেষ্টায় তারা গোপনে বা অর্ধপ্রকাশে প্রতিনিয়ত কাজও করে যাচ্ছে। তাই আজ আবার নতুন করে নব প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তার যুক্তিপূর্ণ তথ্য বা দলিল উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি।
উপর্যুক্ত চিত্রসমূহ থেকে ৫৬% জনসংখ্যার পূর্ব পাকিস্তানের সাথে কিভাবে ৪৪% জনসংখ্যার পশ্চিম পাকিস্তানীরা বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে তার একটি স্পষ্ট প্রমাণ মেলে। পশ্চিম পাকিস্তানীদের এই বৈষম্য ও প্রভুত্বের দরুণ পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার প্রয়োজন ও যুক্তি অকাট্য হয়ে উঠে।
উপরের চিত্র থেকে এটিই প্রতীয়মান হয় যে বিশ্ব যেখানে এগিয়ে যাচ্ছিল সর্বসূচকে, তার বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তানীরা পিছিয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে আমাদের পূর্বাঞ্চলের অর্জিত সম্পদ এবং আমাদের জন্য বরাদ্ধকৃত আন্তর্জাতিক ঋন বা সাহায্য সমূহ কুক্ষিগত করে পশ্চিম পাকিস্তান উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছিল। এমনকি রাজধানীর স্থান পরিবর্তনের নামে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ‘ইসলামাবাদ’ নাম দিয়ে নতুন একটি আধুনিক শহর গড়ে তোলে। সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় বৈষম্য নিয়মে পরিনত হয়েছিল। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানের ৫৬% জনগনের ভাষা ‘বাংলা’-কে বাদ দিয়ে দেশের মাত্র ১৩% লোকের ভাষা উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা করে আমাদের মাতৃভাষা ‘বাংলা’ বিলুপ্ত করে দেয়ার জঘন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। সর্বক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রীয় বৈষম্য থেকে মুক্তি ও জাতির অগ্রগতির জন্য দানা বেঁধে উঠেছিল আমাদের জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম। তারই অংশ ছিল ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর নির্বাচন, ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গন আন্দেলন, ’৭০-এর নির্বাচনী বিপ্লব এবং সর্বোপরি ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের অন্যতম একটি অংশ থেকে পরিবর্তিত হয়ে পুর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠিত হলো ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। পরাজয় বরণ করার পুর্বে পাকিস্তানীরা পোড়া মাটির নীতি অবলম্বন করে পুর্ব বাংলাকে একটি ধ্বংশস্তুপে পরিণত করে। পরাজয়ের দুই দিন পুর্বে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে নির্মম বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ সাধন করে।
এরপর একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম লাভ করে পাকিস্তানীদের শোষন বৈষম্য থেকে মুক্তির পর দখলদারদের দ্বারা সাধিত ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশ ধীরগতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
তবে দুঃখের সাথে স্বীকার করতেই হয়, নৈতিকতার দিক দিয়ে দেশকে বর্তমানে কিছুটা অবক্ষয়ের পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। প্রথমত: উন্নয়নশীল দেশে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজের ফলে অর্থনীতির অবাধ ছড়াছড়ি এক শ্রেনির মানুষের ভিতর লোভ বা অনিয়মের সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত: অত্যন্ত ঘনবসতিপুর্ণ অঞ্চল বা দেশে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সঠিকভাবে তদারকি বা আইন প্রয়োগের বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়ে। তৃতীয়ত: প্রায় নয়’শ বছর বিদেশী বা উপনিবেশিক শাসনের ফলে এই দেশের মানুষের ভিতর একটি অনাস্থা অবিশ্বাস বা অর্থনৈতিক অনিরাপত্তার আশংকা কাজ করে। যার ফলে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে সামাজিক ও জাতীয় চেতনাকে স্থায়ীভাবে ধরে রাখার মতো মানসিক শক্তির প্রচণ্ড অভাব এক প্রকার গেঁড়ে বসেছে। এতদ্সত্ত্বেও বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক সুবিধার যে দ্রুত অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে, তাতে মানুষ অদূর ভবিষ্যতে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনের মানোন্নয়নের দিকে মনোযোগী হয়ে উঠবে আশা করা যায়। তাতে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে নৈতিক চিন্তার সুবাতাস বইতে শুরু করবে। সুতরাং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও এর সাথে মানবীয় মূল্যবোধের বাজার সৃষ্টি হলে আপনাতেই দেশের বা জনগনের প্রত্যাশিত শক্তির বা মুক্তির দ্বার উম্মোচিত হবে। অর্থবহ হয়ে উঠবে দীর্ঘ সংগ্রাম ও লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা।
লেখক : প্রাবন্ধিক, সমাজব্রতী, শিক্ষানুরাগী