বঙ্গবন্ধু : যিনি মিশে আছেন আমাদের অন্তরাত্মায়

রাশেদ রউফ | বৃহস্পতিবার , ১ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

আগস্ট মাস এলেই বুকের ভেতর হাহাকার ওঠে। কষ্ট বাড়ে। যে মাস আমাদের কাছে শোকের মাস। প্রিয়জন হারানোর মাস। এ মাসেই আমরা হারিয়েছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাঁর সঙ্গে আমরা হারিয়েছি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবকে, হারিয়েছি বঙ্গবন্ধুর তিন পুত্র, দুই পুত্রবধূ এবং তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ জনদেরও। সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক বিষয় হলোশিশু রাসেলকেও গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছিল ঘাতকরা। বিদেশে অবস্থান করছিলেন বলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন।

ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংসতম ঘটনা হলো পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট কালরাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড। পুরো পৃথিবী স্তব্ধ। নেমে আসে শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। যাঁকে পাকিস্তানিরা মারতে পারে নি, তাঁকে নিঃশেষ করে দিলো দেশের মানুষ! বিশ্বাসঘাতকের চরম নমুনা স্থাপন করলো বাঙালি পুরো বিশ্বে। সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরীও বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, ‘বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে’। অন্যদিকে, নোবেল জয়ী তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেছেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে, তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে।’

তবে ঘাতকরা জানে না যে বঙ্গবন্ধুকে সশরীরে হত্যা করলেও তাঁর অন্তরাত্মাকে হত্যা করতে পারে নি। ফলে দেশের আপামর মানুষের কাছে বেঁচে আছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু মিশে আছেন আমাদের অনুভূতিতে ও আমাদের অন্তরাত্মায়।

দ্য টাইমস অব লন্ডনের ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে’।

একজন মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করলেই শ্রেষ্ঠ হয়ে যান না। তাঁর কাজই তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দেয়। জনতা তাঁকেই শ্রদ্ধা ও স্মরণে রাখে, যিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জীবনে গভীর রেখাপাত করেছেন। এর পরিণামেই তিনি ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী আসন পান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তেমনই একজন অবিসংবাদিত নেতা, যাঁকে মানুষ ভালোবেসে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলেন। বাঙালি জাতির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তাঁকে বাদ দিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্রষ্টা তিনি। তাঁর সংগ্রাম, সৃষ্টিশীলতা, সাহস, ত্যাগ, মহত্ত্ব ও নেতৃত্বই তাঁকে মহান করে তুলেছে, আসীন করেছে অনন্য উচ্চতায়। আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামায়াত-শিবির নির্মূলে এলাকাভিত্তিক গণমোর্চা গড়ে তুলতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধসংঘাতে প্রাণহানি : তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী