১.
‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম।’
এভাবেই ডাক দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের শুভক্ষণে। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ থেকে শত বছর আগে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, মঙ্গলবার তৎকালীন ফরিদপুর জেলার (বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলা) টুঙ্গিপাড়া গ্রামে পরাধীনতার আঁধার ভেদ করে মুক্তির আলো ছড়াতে রাত আটটায় এক মঙ্গল বার্তা নিয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আশ্চর্যজনক সত্য যে, ইতিহাসের ক্ষণ গণনায় শতবছর পরে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ সেই মঙ্গলবার আজ।
বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত পাঠ এবং জন্মশতবর্ষ উদযাপনের প্রাসঙ্গিকতা হলো, তাঁর জীবনের পরতে পরতে মিশে আছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর জীবনের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস। ফলে আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত পাঠের মাধ্যমে মূলত বাংলা নামের এই দেশটিরই মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস জানি। বঙ্গবন্ধুর শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের পথচলার মধ্যে খুঁজে যাওয়া যাবে, বাংলা ও বাঙালির বেড়ে ওঠার স্বতন্ত্র পাঠ।
মাদারিপুর দেওয়ানি আদালতে সেরেস্তাদার শেখ লুৎফর রহমান এবং সাহেরা খাতুনের ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন শেখ মুজিব। গোপালগঞ্জের মিশনারী স্কুলে লেখাপড়া করার সময়েই তিনি ইংরেজ বধের পুরাণ রচনায় যুক্ত হয়ে পড়েন। তখনই তাঁর মধ্যে নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতার ছাপ পাওয়া যায়। খেলার মাঠে, সাংস্কৃতিক চর্চায় বন্ধুরা দলপতি হিসাবে তাঁকেই মেনে নিত সহাস্যে। একেই বলে নাকি, গড়ৎহরহম ংযড়ংি ঃযব ফধু.
২.
২০২০ সাল বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বর্ষ। ঠিক একশত বছর আগে এ জনপদে ১৭ মার্চ তারিখে এই মহান নেতার জন্ম হয়েছিল। তারপরেই ঘটতে থাকে বিশ্বকে হতবাক করে দেওয়া একের পর এক যুগান্তকারী ঘটনা।
সেই জ্যোতির্ময়ী বছর একাত্তরে আমরা যখন সত্যিই মানুষ ছিলাম, সেদিন এক বিশাল মিছিল হয়েছিল, মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন রবীন্দ্রনাথের মতো সেই সূর্যিত পুরুষ। ‘জয়বাংলা’ স্লোগানে স্লোগানে মুখর ছিল এ বাংলার প্রতিটি জনপদ। ঐ একাত্তরেরই রমনার প্রান্তরে পরন্ত বিকেলে তিনি প্রদর্শন করেছিলেন সেই ঐতিহাসিক তর্জনী। গর্জে উঠেছিলেন, ‘দাবাইয়া রাখতে পারবা না’ বলে।
বাঙালির সুদীর্ঘ সময়ের মুক্তি আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সবচেয়ে সফল স্বপ্নদ্রষ্টা পুরুষ। ইতিহাসের আলোকে বিচার করলে দেখা যাবে এ সময়ে বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব ছিল সেই প্রথম দিনের সূর্যের মতো। যিনি সত্তার নতুন আবির্ভাবে জেগে ওঠে প্রশ্ন করেছিলেন, কে তুমি? জবাব ছিল, বাঙালি। ঠিকানা? পদ্মা, মেঘনা, যমুনা।
বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের বিকাশকে তরান্বিত করতে কাণ্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন? বাঙালি ক্ষুদ্র জীবনের গ্লানি পেরিয়ে প্রতিষ্ঠার যে উচ্চাশা সেদিন নিজের ভিতরে লালন করেছিলেন তা বাস্তবায়নে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। এ সময় পুরো জাতি ছিল তাঁর পেছনে। কিন্তু একটা সময়ের পর আমরা দেখলাম, সেই সমষ্টির চেতনা বিলীন হয়ে গিয়েছে। ‘দুঃখবরণের প্রতিজ্ঞা শিথিল হয়ে পড়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধু এ সময় বার বার বলেছেন, ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে প্রয়োজন ব্যক্তিগত সুখ চিন্তার নির্বাসন। চাই সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ। চাই উপযুক্ত সংগঠন। চাই দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিটি মানুষের দুঃখ কষ্ট সহ্য করার প্রস্তুুতি। চাই সুদক্ষ সুশৃঙ্খল জনশক্তি।’ কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই আহবান তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এসে সেদিন পৌঁছায়নি। যে মানুষ একদিন বঙ্গবন্ধুর নামে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল, যুদ্ধক্ষেত্রে যেই মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও বলেছিল, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। সেই প্রিয় নেতাই যখন আবার যখন মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে শোষণহীন আর্থসামাজিক কাঠামো প্রবর্তনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিলেন, তখনই দেখা দেয় নিঃসঙ্গতা। বাস্তবিকই বঙ্গবন্ধু সেদিন নিঃসঙ্গ ছিলেন। একাত্তরের মতো বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে একত্রিত করে আর এগিয়ে যেতে পারলেন না। তিনি যেন কোথায় আটকা পড়ে গেলেন। তাঁর ডাক কোথাও না কোথাও বাধা পেয়ে হারিয়ে যায়। কিন্তু কেন এমন হয়েছিল? বাধাটা কোথায় ছিল? নাকি বঙ্গবন্ধুর এই দ্বিতীয় বিপ্লবের প্রতি জনগণের সন্দেহ ছিল? আর সন্দেহের কারণ কী রণক্ষেত্রের সেই পরীক্ষিত সৈনিক তাজউদ্দিনের নির্বাসন এবং কুচক্রী জিয়া, মুশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুরের পদচারণা? কিন্তু বঙ্গবন্ধু এই জাতসাপ কেন দুধ কলা দিয়ে পুষে ছিলেন? এখন সময় এসব গবেষণার।
একাত্তরের বঙ্গবন্ধু ‘দাবাইয়া রাখতে পারবা না’ বলে যেই রাজনৈতিক মহাকাব্য রচনা করেছিলেন, তাতে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর তক্ত তাউস কেঁপে উঠেছিল। ইতিহাসের সেই অমিত বিক্রমশালী, তেজস্বী মহাকবি ঐ সব কুচক্রীদের নানান অপকর্মের সংবাদ জেনেও কেন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন? না, তাকিয়ে ছিলেন বোধ করি সভ্যতার দিকে। সেটাই কি ছিল তাঁর নিঃশব্দ প্রতিবাদ? কারণ বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাঙালির চেতনাবোধ আন্তর্জাতিক সভ্যতার প্রগতি চৈতন্যকে স্পর্শ করে, সেই গত শতকের ষাট দশক শেষ হওয়ার আগে আগেই। সত্তর দশকের শুরুতেই বাঙালি সম্পূর্ণ মোহমুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে এতে করে বাঙালির কোনো গুণগত উত্তরণ ঘটল না। ভ্রান্তির চৌমাথায় দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলার জনগণ মধ্যযুগীয় সকল কূপমুন্ডুকতাকে প্রশয় প্রদান করে। একটি সফল বিপ্লবের (১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ) পরও তাই প্রতি বিপ্লবীরা আবার ক্ষমতায় আসে। বাংলাদেশকে এক বছর পিছিয়ে দেয়। আমাদের সকল অর্জনকে ওরা বিতর্কিত করে তুলে। আর এখনতো বিতর্কই একটি ফ্যাশানে দাঁড়িয়ে গেছে। এ জন্যে বঙ্গবন্ধু নিশ্চয় সেদিন অভিমান করেছিলেন। তিনি ব্যথিত হয়েছিলেন। দুঃখ পেয়েছিলেন।
৩.
আজ আমরা বলছি, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মকান্নার সহযাত্রী আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে বাঙালি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছে। কিন্তু এই প্রত্যাবর্তন শুধুই ইতিহাসের প্রত্যবর্তন নয় কি? হ্যাঁ, আমরা এখানে খুব স্পষ্ট করেই আমাদের প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উজ্জ্বল অবয়ব প্রত্যক্ষ করি। এখানেই আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। উন্নত শির নত হয় না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন এসে যায় ঐ কি শেষ? বহু অপবাদ মাথায় নিয়ে ক্ষমতায় এসে এদেশের গণমানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে কতটুকুইবা চলছে? কিংবা আজকের বিশ্ব পরিস্থিতিতে আদৌ চলা কি সম্ভব? তাহলে আমরা এখন নিজেদের মুজিব আদর্শের সৈনিক বলে পরিচয় দেব? এখন কী শুধু বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিটুকুই আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি না? কারণ আজকের আওয়ামী লীগ মুক্তবাজার অর্থনীতির সমর্থক। আজকের দুনিয়ায় এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথও বোধ করি নেই। সারা দুনিয়ায় নিবান্ধব হয়ে শেষ হয়ে যাওয়ার চেয়ে সময়ের সঙ্গে পা ফেলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে স্বীকার করে এগিয়ে যাওয়াকে বর্তমান আওয়ামী লীগ হয়তবা সঠিক মনে করছে।
এখানে আসলেই এক ধরনের ভ্রান্তিতে আক্রান্ত হয়। এসব প্রশ্নের কোনোটিরই জবাব আমার জানা নেই। কারণ বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সময়টুকু ছিল আমাদের বেড়ে ওঠারই সমসয়। এ সময়ে অনেক কিছুই আজ আমাদের মনে নেই। দুর্ভাগ্য জানার সুযোগও আজ আর কেউ করে দেয় না। কিন্তু এ কথা জানি, বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়া। আমরা এও জানি, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই।’ বাস্তবতা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু সেদিন সেই কাঙ্ক্ষিত সোনার মানুষ পাননি।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আওয়ামী লীগ যখন আবার ক্ষমতায় এসেছে, তখন তাদের আবার সেই একই অঙ্গীকার- দারিদ্র্য বিমোচন। কিন্তু এতদিনে বিশাল বাংলার এই জনপদে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যাও কম নয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে দারিদ্র্যের ছাপ লেগেছে। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পর দারিদ্র্য তার ডালপালা বিস্তার করে বটবৃক্ষের মতো বিশাল ও জটিল আকার ধারণ করেছে। এর ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে এ জনপদের মাটি ও মানুষকে বাঁচাতে হলে যত শীঘ্রই সম্ভব দারিদ্র্যের মূলোৎপাটন করতে হবে। অবশ্য সুখের বিষয় যে, বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সেই উপলব্ধিটা এখন সর্বজনীন। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করতে এই উপলব্ধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৪.
আজ যতই দিন যাচ্ছে, গরিব মানুষেরা সংগঠিত হচ্ছে। তাঁরা নিজেদের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশ্যে উচ্চারণ করছেন। তাঁরা নিজেদের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশ্যে উচ্চারণ করছেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে দারিদ্র্য বিমোচন অসম্ভব। সরকার এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবধান কমানো গেলেই একমাত্র এ সব কিছু সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু এ ভূখণ্ডের মানুষের মধ্যে এই গণসচেতনতাই সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, সকল ভাগ্যবঞ্চিত মানুষের অধিকার। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,‘ রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায়, যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে। যদি দুঃখী মানুষ পেটভরে খেতে না পেরে, কাপড় পরতে না পারে, বেকার সমস্যা দূর না হয়, তাহলে মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসতে পারে না।….আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? না। আমার শ্রমিক? না। তাহলে ঘুষ খায় কারা? ব্লাক মার্কেটিং করে কারা? বিদেশী এজেন্ট হয় কার? বিদেশে টাকা চালান দেয় কারা? গোডাউন লুট করে কারা? এই আমরা যারা শতকরা ৫ জন শিক্ষিত। ঐ আমাদের মধ্যে ঘুষ ঘোর, দুর্নীতিবাজ। ….দুর্নীতিবাজদের যদি খতম করতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের মানুষের শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ দুঃখ চলে যাবে। এত চোরের চোর, এ চোর কোথা থেকে পয়দা হয়েছে তা জানি না। পাকিস্তান সব নিয়ে গিয়েছে কিন্তু এই চোর রেখে গিয়েছে। এই চোর নিয়ে গেলে বাঁচতাম।’ বঙ্গবন্ধু সেদিন দেশের মূল সমস্যা এবং সমস্যার উৎস চিহ্নিত করে গিয়েছেন। কিন্তু সেই উৎসমুখে মাটি চাপা দিতে গিয়েই তিনি নিহত হলেন। আবার সেই একই দায়িত্ব শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের উপর এসে পড়েছে। শেখ হাসিনা এ অঙ্গীকার পালনে বদ্ধপরিকর। কিন্তু যে কাজটি বঙ্গবন্ধুকে ওরা করতে দেয়নি, পরবর্তী সময়ে আমাদের প্রজন্মের উদ্যোগকেও ব্যর্থ করে দিয়েছে, শেখ হাসিনা আজকের আওয়ামী লীগকে নিয়ে কি পারবেন বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে? সময় এর জবাব দেবে। কারণ সে স্বপ্নে পৌঁছানোর পথটা কত দূর, কত কঠিন, সেটাও বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবন দিয়ে জানিয়ে গেছেন। তবে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে এর একটা ইতিবাচক দিক লক্ষ্যণীয় যে, তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
দরিদ্র্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেওয়াই এখন জরুরি দায়িত্ব। এক্ষেত্রে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, দরিদ্ররাই দারিদ্র্য বিমোচনরে প্রধান শক্তি। এদের সংগঠিত ও সচেতন করে সমাজে সকল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে এদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হলে বঙ্গবন্ধুর কাছে আবার ফিরে যেতেই হবে। আওয়ামী লীগকে ফিরে যেতে হবে তৃণমূলের কাছে। সেদিন বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন দুঃখী মানুষকে ভালোবেসে। তাই দেশের মানুষ তাঁকে বঙ্গবন্ধু বলে বুকে টেনে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দল হিসেবে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকেই আজ তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। আর এজন্য সকলে যে যেখানে আছি একতাবদ্ধ হয়ে দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা ইতিবাচক হলেও হোয়াইট কালার রাজনীতিবিদদের দিয়ে বঙ্গবন্ধুর এ কাজ কতটুকু সম্ভব হবে তাও ভেবে দেখা দরকার। জানা থাকা দরকার, তাঁরা কি যাবেন দরিদ্রের ঐ পর্ণকুঠিরে? দরিদ্রের ক্ষমতায়নে শ্রেণিচ্যুত হতে আজকের আওয়ামী লীগ কতটুকু বদ্ধপরিকর?
যুগ যুগ ব্যাপী বেড়ে ওঠা দারিদ্র্যের ঐ বিশাল বট বৃক্ষের মূলোৎপাটন করতে পারলেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি আওয়ামী লীগের এবং আমাদের সকলের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নন্দিত হবে। রাষ্ট্রক্ষমতায় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের অনিবার্যতাকে জনগণ তখন বঙ্গবন্ধুর মতোই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবে। নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেতে হবে নানাভাবে, বহুমুখী উদ্যোগে, কারণ আমি আবারও বলছি, এখানেই তারা পাবে বাংলা ও বাঙালির বেড়ে ওঠার ইতিহাস। বাংলার তেরশত নদীর প্রবাহমান স্রোতের পরশ লাভ করবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গল্পকার, নাট্যজন