জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমৃদ্ধির অদ্বিতীয় কাণ্ডারি। গণমানুষের নেতা হিসেবে তাঁর ভাবনার পুরো অংশ জুড়ে ছিল সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন। সারাজীবন রাজপথ কাঁপিয়েছেন লড়াই সংগ্রামে অকুতোভয় এক নিরলস শ্রমিক হিসেবে। সুদৃঢ় তর্জনী হেলিয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, লাহোর থেকে দিল্লী, ঢাকার পার্লামেন্ট থেকে জাতিসংঘ। তাই তাঁর জীবন দর্শন আলোচনায় শরণাপন্ন হতে হয় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারে রোজনামচা, বক্তৃতা–বিবৃতি, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ৬ দফা, স্বাধীনতাপূর্ব প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্রের অর্থনৈতিক কর্মসূচি, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, তিনটি বাজেট, বাকশালের কর্মসূচি আলোচনা, পর্যালোচনা, নিরীক্ষা ও গবেষণার নির্যাস হলো তাঁর সুস্পষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মতবাদ। বেরিয়ে আসে একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠনে অর্থনীতি ও দারিদ্র্য বিমোচনের সরল সমীকরণ।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু এই দিন স্বাধীন দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে, পূর্ণ হবে না।‘
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত দেশ গড়ার। আর সেই লক্ষ্যে শোষণহীন সমাজ গড়ার জন্য তিনি এক সুদীর্ঘ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি তার মতো করে ‘সমাজতন্ত্র’ অর্জনের স্বপ্ন দেখতেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলে গেছেন– ‘আমি বিশ্বের কাছ থেকে সমাজতন্ত্র ধার করতে চাই না। বাংলার মাটিতে এই সমাজতন্ত্র হবে বাংলাদেশের মানুষের। এই সমাজতন্ত্র হবে বাংলার মানুষের যেখানে কোনো শোষণ এবং সম্পদের বৈষম্য থাকবে না। ধনীকে আমি আর ধনী হতে দিব না। কৃষকেরা, শ্রমিকেরা এবং জ্ঞানীরা হবে এই সমাজতন্ত্রের সুবিধাভোগী।’ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৭ জুন ১৯৭২)।
গণতন্ত্রকেও বঙ্গবন্ধু শুধু রাজনৈতিক গণতন্ত্র হিসেবে দেখেননি। তিনি এটাকে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র হিসেবেও দেখেছেন। সুতরাং সম্পদে সবার সমান অধিকার, অর্থনৈতিক সুযোগে সাম্য নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে সব মানুষের সমান কণ্ঠস্বরের কথা তিনি বলেছেন। এ ব্যাপারে তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সম্পদ ও সুযোগে সম অধিকার এবং সেই সঙ্গে তাদের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতি। নর–নারীর মধ্যে সাম্যের ব্যাপারটিও তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধুর জনকল্যাণের অর্থনীতি’ শিরোনামের একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, “বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের মূলে ছিল পাকিস্তানে বিদ্যমান ‘দুই অর্থনীতির তত্ত্ব’। তদানীন্তন পাকিস্তানের দুই অংশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং তার ফলস্বরূপ দুই অংশের অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে দুই অর্থনীতির তত্ত্বকে সামনে আনেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তী সময়ে এর ভিত্তিতেই গড়ে তোলেন ছয়–দফা কর্মসূচি। তিনি অনুভব করেছিলেন, পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে এতটা পার্থক্য যে এর ফলে দুই অংশের মধ্যে পুঁজি ও শ্রমের সহজ চলাচল সম্ভব নয়। তাই এ দুই অংশের জন্য এক অর্থনীতি কাজ করতে পারে না।”
পূর্ব বাংলার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হয়ে বঙ্গবন্ধু আরও বেশি অনুভব করেছিলেন কেনো বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন এতটা অবহেলিত হচ্ছিল। করাচি থেকে ব্যবসা–বণিজ্যের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হতো। তাই পূর্ব–বাংলা থেকে উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন ছিল। তিনি দাবি করেছিলেন পূর্ব–পাকিস্তানে যেন একটি এক্সপোর্ট–ইমপোর্টের অফিস করা হয়। এমন আরও অনেক দাবি–দাওয়া তিনি করেছিলেন পূর্ব–বাংলার মন্ত্রী হিসেবে। তিনি প্রশাসনে গিয়ে দেখেছেন শোষণটা কিভাবে হয়। তাই তিনি বলেছিলেন দুই অর্থনীতি এভাবে একত্রে চলতে পারে না। সে জন্যই ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে লাহোরে বিরোধী দলের সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ছয়–দফা দাবি পেশ করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই এটা তৎকালীন প্রশাসনে থাকা কারোও মেনে নেয়ার কথা না।
১৯৭২ সালে আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর আমাদের রিজার্ভে তখন কোনো বৈদেশিক মুদ্রাও ছিল না। শতকরা আশি ভাগের মতো মানুষ দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বৈপ্লবিক নেতৃত্বের কল্যাণে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অবকাঠামো এবং সত্যিকার অর্থে কোন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান না থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।
পাকিস্তানিদের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনের কঠিন দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছিলেন। সব জটিল চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সুনিপুুণভাবে। এই সময় তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের সব নীতি ছিল দেশের মানুষের স্বার্থকে ঘিরে। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সঙ্গে প্রশাসনকে পরিচালিত করতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর কাছে সবকিছুর আগে ছিল দেশের স্বার্থ। তার ব্যক্তিত্বের অসাধারণত্ব আজো বিরল, বলা চলে। তাঁর দৃঢ়চেতা মনোভাব এবং জাদুকরী সম্মোহনী শক্তি যে কোনো কঠিন বাধা দূর করতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখত। তার সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ অর্জন করেছিল বেশ কিছু অসাধারণ সাফল্য। স্বাধীনতার পর গৃহীত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট খাতভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ করা হয়। এই সময়ের প্রণীত বাজেটগুলোতে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের জন্য উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ থেকে প্রতীয়মান হয় বঙ্গবন্ধু সরকার কৃষি ও শিল্প উভয় খাতেই প্রায় সমান গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে উন্নয়নের সোপানে উন্নীত করতে এ খাত দুটিকেই গুরুত্বারোপ করাই ছিল জাতীয় উন্নয়ন নীতি। এই জাতীয় নীতির বাস্তবায়নে সরকার শিল্পের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ এবং ভূমির মালিকানায় কৃষকের স্বত্বসহ ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করার ও কৃষির আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তখনো বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটে বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য ছিল না। তাই দেশীয় সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার ও উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। দেশীয় পণ্য উৎপাদন করে নিজস্ব চাহিদা পূরণ ও রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন যদিও তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব নয়, তবুও বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বিদেশি ঋণনির্ভর না হয়ে একটি সফল শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়াস নেন। এজন্য গঠন করা হয় একটি পরিকল্পনা কমিশন। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার ধ্যানধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম শুরু হয়। কৃষি, শিল্প, ভূমি ব্যবস্থাপনা, বৈদেশিক বাণিজ্য, রাজস্ব আদায়পদ্ধতি, সরকারি ব্যয় ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের অবস্থান দৃঢ়তর হতে থাকে। পরিকল্পিত উপায়ে দেশ গঠন এবং জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩–৭৮) প্রণীত হয়।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের উৎকর্ষতা সাধনের জন্য তিনি কৃষি সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও টেলিযোগাযোগ উন্নয়ন, সামাজিক–সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র উন্নয়ন, শিক্ষার সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কৃষি গবেষণাকে অনুপ্রাণিত করেন, একই সঙ্গে কৃষি গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন গ্রামীণ সমাজে সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশের প্রতিটি গ্রামে গণমুখী সমবায় সমিতি গঠন করা হবে, যেখানে গরিব মানুষ যৌথভাবে উৎপাদন যন্ত্রের মালিক হবেন; যেখানে সমবায়ের সংহত শক্তি গরিব মানুষকে জোতদার–ধনী কৃষকের শোষণ থেকে মুক্তি দেবে; যেখানে মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীরা গরিবের শ্রমের ফসল আর লুট করতে পারবে না, যেখানে শোষণ ও কোটারি স্বার্থ চিরতরে উচ্ছেদ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার মাধ্যমে শিল্পের উন্নয়ন ও সমপ্রসারণে কার্যকর ভূমিকা ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। এর মূল লক্ষ্য ছিল যদি উদ্যোক্তা তৈরি করা যায় তবে দেশ যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে। নতুন দেশে শিল্প উন্নয়ন ছিল এক অভাবনীয় চ্যালেঞ্জ । বিদেশি মুদ্রা বা বিদেশি বিনিয়োগ বলতে কিছুই ছিল না। অর্থনীতিতে ফরওয়ার্ড এবং ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ছিল অতি সামান্য। সদ্য স্বাধীন দেশে শিল্প বিকাশের দায়ভার তাই রাষ্ট্রকেই কাঁধে নিতে হয়েছিল। ব্যাংক–বীমা, পাটকল–চিনিকল, টেক্সটাইল মিল এগুলো রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়েছিল।
মুস্তাফা মনওয়ার সুজনের ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : অর্থনৈতিক নতুন ফর্মুলা‘ শিরোনামের প্রবন্ধে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নতুন রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেছেন। যাকে বঙ্গবন্ধু ‘দ্বিতীয় বিপ্লব‘ বলে আখ্যায়িত করেন। যেখানে বিপ্লবের দুটি দিক – সরকার ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কর্মকর্মসূচি এবং আর্থ–সামাজিক কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন; যা থেকে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দূরদর্শিতার দৃষ্টান্ত সুস্পষ্ট হয়।
লেখক রাশেদ রউফ তাঁর ‘দশদিগন্তে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘বৈষম্যহীন অর্থনীতি বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা, আদর্শ ও কর্মপ্রণালী ছিলো অতুলনীয়; যে ভাবনা গণমানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছিলাম। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে নিয়েছিলেন বহুমুখী পরিকল্পনা, দিয়েছিলেন অর্থনীতির নতুন ফর্মুলা। তাঁরই উদ্ভাবিত উন্নয়ন দর্শন বাস্তবে রূপ দিতে অন্যতম মৌল উপাদান হিসেবে সমবায়ের অন্তর্নিহিত শক্তিকে পুরোমাত্রায় ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।’
ড. আতিউর রহমান তাঁর আরেক প্রবন্ধে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সঠিক পথেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। মাত্র চার বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছিল। ১৯৭২ সালে মাত্র ৯৪ ডলার থেকে ১৯৭৫ সালে ২৭৮ ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছিল মাথাপিছু আয়। মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল ১৮৩%। একইভাবে এই সময়ে জিডিপি বেড়েছিল ৬.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৯.৪৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ জিডিপিতে বেড়েছিল ২০৮%। নেতৃত্ব যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় ১৯৭৬ সালের মাথাপিছু আয় ও জিডিপির পতন দেখে। মাত্র এক বছরেই তা প্রায় অর্ধেকে (১৪১ ডলার) নেমে এসেছিল। প্রবৃদ্ধি –৯৭.১৬%। অনুরূপভাবে জিডিপি কমে –৪৭.৯৬%। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ১৫২ ডলার। বাংলাদেশ থেকে ৬১.৭০% বেশি। আর সেই পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ১৯৭৫ সালে কমে দাঁড়ায় ১৬৮ ডলার। বাংলাদেশ থেকে ৩৯.৫৬% কম। অনুরূপভাবে ১৯৭৫ সালে পাকিস্তানের জিডিপি (১১.৩৪ বিলিয়ন ডলার) বাংলাদেশ থেকে ৪১.৬৯% কম। এ থেকেই বোঝা যায়, মাত্র এক বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর উদ্দীপনামূলক নেতৃত্বের গুণে কী করে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সেই স্বপ্ন ও সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে দলবল নির্বিশেষে সবাই একসাথে কাজ করতে হবে। তাহলে প্রিয় বঙ্গবন্ধুর সেই লালিত স্বপ্নকে আজ আমরা বাস্তবে রূপ দিতে পারব। গড়ে উঠবে সত্যকারে সোনার বাংলা। বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর আদর্শ, ধ্যান–ধারণা ও হার না মানা একজন যোদ্ধা হিসেবে যুগের পর যুগ টিকে থাকবেন মানুষের ভালোবাসার মণিকোঠায়।
লেখক : প্রাবন্ধিক; অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ওমরগণি এম ই এস কলেজ।