অর্থ বছরের শেষ দিকে এসে বকেয়া পৌরকর (হোল্ডিং ট্যাক্স ও রেইট) আদায়ে কঠোর হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর অংশ হিসেবে সংস্থাটির আটটি রাজস্ব সার্কেল কর খেলাপিদের পৃথক তালিকা প্রস্তুত করেছে। ইতোমধ্যে খেলাপিদের ধারাবাহিকভাবে কর পৌরশোধে নোটিশও দিচ্ছে চসিক। নোটিশপ্রাপ্তদের মধ্যে সাড়া দিয়ে যারা বকেয়া পরিশোধ করবে না তাদের বিরুদ্ধে আগামী রোববার থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। অবশ্য প্রাথমিকভাবে গতকাল বুধবারও রাজস্ব সার্কেল–১ এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। এ বিষয়ে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, অনেকে আছেন যারা চার–পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে পৌরকর পরিশোধ করছে না। বকেয়া আদায়ে রোববার থেকে প্রতিদিন প্রতিটি সার্কেলে ধারাবাহিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, যে সব এলাকায় লোকাল বাসিন্দা বা শহরের আদি বাসিন্দারা বসবাস করেন ওসব এলাকা থেকে পৌরকর আদায়ের হার কম।
এদিকে চসিকের বিভিন্ন সার্কেলের কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, রমজান মাসেই সার্কেল ভিত্তিক কর খেলাপিদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকায় দীর্ঘ পাঁচ–ছয় বছর ধরে গৃহকর পরিশোধ করছে না এমন ভবন মালিকও রয়েছেন। সিটি মেয়র মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মৌখিকভাবে নির্দেশনাও দিয়ে যান। এরপ্রেক্ষিতেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। অবশ্য গত কয়েকটি অর্থ বছরের শেষ দিকে এসেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পৌরকর আদায় করেছে চসিক। সাধারণত জুন মাসে এ ধরনের অভিযান বেশি চালায় সংস্থাটি। বাৎসরিক কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়। তবে ২০১৮ সালের ১৪ মে থেকে মাসেরও অধিক সময় ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কর আদায় বেশ সাড়া ফেলেছিল। জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন অ্যাক্ট ২০০৯ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে চসিক মোট ১৭ শতাংশ পৌরকর আদায় করে থাকে চসিক। তার মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহকর), ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন রেইট এবং ৭ শতাংশ আবর্জনা অপসারণ রেইট রয়েছে।
চসিকের রাজস্ব শাখার তথ্য অনুযায়ী, নগরে সরকারি–বেসরকারি দুই লক্ষ দুই হাজার ৩১১টি হোল্ডিং রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৫১৬ টি সরকারি এবং দুই লক্ষ ৭৯৫টি বেসরকারি ভবন। হোল্ডিংগুলোর বিপরীতে চলতি ২০২১–২০২২ অর্থ বছরে পৌরকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার ছয় টাকা। এর বিপরীতে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ১৬২ কোটি ৪৯ লাখ ১৭ হাজার ১৮৫ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪২ শতাংশ। বিগত অর্থ ২০২০–২০২১ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছিল ৪৭ শতাংশ। এদিকে চলতি অর্থ বছরও প্রায় শেষের পথে। তাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জোর দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি অর্থ বছরের ধার্যকৃত পৌরকরের মধ্যে হাল দাবি হচ্ছে ২০৪ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ১২৭ টাকা। এর বিপরীতে মঙ্গলবার পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৭৮ লাখ ছয় হাজার ৯৭৫ টাকা। এছাড়া বকেয়া (পূর্বের অর্থ বছর পর্যন্ত) পৌরকরের পরিমাণ হচ্ছে ১৭৯ কোটি ৬১ লাখ ১১ হাজার ২৯৩ টাকা। বিপরীতে মঙ্গলবার পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৪৪ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার ২১০ টাকা।
গতকালের অভিযান : গতকাল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী’র নেতৃত্বে রাজস্ব সার্কেল–১ আওতায় জিইসি মোড়, ওআর নিজাম রোড, পূর্ব নাসিরাবাদ ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এ সময় নয় লাখ ১১ হাজার টাকা বকেয়া পৌরকর আদায় করা হয় বলে জানান ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. জাফর।












