বইয়ের বিনিময়, জ্ঞানের বিনিময়

জামালখানে উৎসবে এবার ২৫ হাজার ৩শ বই বিনিময় নতুন বই সংগ্রহ আনন্দের : এম এ মালেক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৪ মে, ২০২৪ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

নিজের কাছে থাকা পুরোনো একটি বইয়ের বিনিময়ে পছন্দের গল্প, কবিতা, উপন্যাস কিংবা দরকারি একাডেমিক বই নেয়া যাবে। এমন ব্যতিক্রমী বই বিনিময় উৎসব হয়েছে চট্টগ্রামে। ‘বই নয়, জ্ঞানের বিনিময়’ এ শ্লোগানে পঞ্চমবারের মতো দিনব্যাপী উৎসব শুক্রবার সকালে নগরীর জামালখান মোড়ে উদ্বোধন করেন শরনার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ সময় তিনি পরিশুদ্ধ বাংলাদেশি হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য নিজের মনন বিকাশের উপর গুরুত্ব দিতে সকলকে আহ্বান জানান। বই বিনিময় উৎসবের এমন ধারণাকে বাংলাদেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন সকলকে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সাংবাদিক এম এ মালেক। এ ধরনের আয়োজন কেবলই বইপ্রেমীদের উপকারে আসে তা নয়, বরং এ ধরনের আয়োজন থেকে নতুন করে বইপড়ুয়াও তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, এটি একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ। বই অনেকে কিনতে পারে না। আমার পড়ে ফেলা বইটি বিনিময়ের মাধ্যমে আমি যদি নতুন আরেকটি বই সংগ্রহ করে পড়তে পারিএর চাইতে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জানান, ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ প্রতিবছর নিরলসভাবে এই আয়োজন করে যাচ্ছে, তাতে সবচেয়ে উপকার হচ্ছে সমাজের। তরুণদের তিনি এ ধরনের কাজের মাধ্যমে সমাজের বিবেক হয়ে উঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

২১ নং জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, প্রযুক্তির সুবিধা আমাদের নিতে হবে। সাথে জ্ঞানের পরিসীমাও বাড়াতে হবে। তার জন্য চমৎকার আয়োজন বই বিনিময় উৎসব।

সভাপতিত্ব করেন উৎসবের সমন্বয়ক সাইদ খান সাগর। আয়োজকদের মধ্যে এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন রিনভী নুসরাত প্রাপ্তি, ঋত্বিক বড়ুয়া, সায়মা সুলতানা, সুদীপ্ত চৌধুরী, কাজী রাকিব, সাইফুল্লাহ নাদিম ও আকিবুল ইসলাম জিশাদ। অনুষ্ঠান শেষে প্রতীকী বই বিনিময়ের মাধ্যমে উদ্বোধন ঘোষণা করেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান।

সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে এই আয়োজন। রোদবৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনজুড়ে উৎসব প্রাঙ্গণে ছিলো নানাবয়সী পাঠকের ভীড়। মোট এগারোটি ক্যাটাগরির সর্বোচ্চ পাঁচটি বই বিনিময়ের সুযোগ ছিল এই উৎসবে। আয়োজকরা জানান, সারা দিনে ২৫ হাজার ৩শ বই বিনিময় হয় এবারের উৎসবে। সর্বোচ্চ সংখ্যক বিনিময় হয় জাফর ইকবালহুমায়ুন আহমেদ এর স্টলে। অন্যান্য ক্যাটেগরির মধ্যে ছিলো কথাসাহিত্য, কবিতা, প্রবন্ধ ও অন্যান্য, ক্যারিয়ার ও বিজ্ঞান, সমগ্র, রাজনীতিআত্মজীবনীইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন, শিশুতোষ ও ম্যাগাজিন প্রভৃতি। সেই সাথে একাডেমিক বইয়ের স্টলে ছিলো অসীম সংখ্যক বই বিনিময়ের সুযোগ।

আয়োজকরা জানালেন, গত চারবারের বই বিনিময় উৎসবে পাঠকের উপচে পড়া ভীড় আর ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের সোশ্যাল প্লাটফর্মগুলোতে পরবর্তী উৎসব নিয়ে পাঠকদের বারবার তাগিদ তাদেরকে উৎসাহ যুগিয়েছে এই আয়োজনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে। পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই আয়োজন আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনার কথা জানালেন তারা।

বই বিনিময় উৎসবের উদ্দেশ্য জানতে চাইলে উৎসবের সমন্বয়ক এবং আয়োজক সংগঠন ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের পরিচালক সাইদ খান সাগর জানালেন, বই বিনিময়ের ধারণা তো নতুন কিছু নয়। স্কুলজীবনে বন্ধুদের সাথে আমরা তিন গোয়েন্দা সিরিজের বইগুলো যেভাবে বিনিময় করতাম, এই আয়োজন তারই এক আনুষ্ঠানিক সংস্করণ। তাছাড়া চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বইপ্রেমী মানুষের জন্য এর থেকে ভালো উপহার আর হতে পারে না কিছুই। বই বিনিময় উৎসব চলমান সময়ে এখানকার বইপ্রেমীদের কাছে জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। এ থেকে নতুন পাঠক যেমন তৈরি হচ্ছে তেমনি যারা আর্থিক অসঙ্গতির কারণে বই পড়তে পারছে না তাদেরও নতুন বই পড়ার সুযোগ হচ্ছে। এই উৎসবকে সবখানে ছড়িয়ে দিতে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

হাজারো বইপ্রেমী নিয়ে সুশৃঙ্খল এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে খুশি পাঠকরাও। সারাবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষার কথা জানালেন উৎসবে আসা স্কুলপড়ুয়া তাসনিম। অনেকের কাছে আবার বই বিনিময় উৎসব বই নিয়ে আড্ডারও জায়গা। দল বেঁধে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসেছেন অনেকে, আবার অনেকে এসেছেন পরিবারসহ বইপ্রেমীদের এই মিলনমেলায়। তারা জানান এক বছর ধরেই এই বই বিনিময় উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। নিজের পছন্দের বইগুলোকে জমিয়ে রাখেন বই বিনিময় উৎসবে বিনিময় করবেন বলে। শুরুতে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বেশি থাকলেও আস্তে আস্তে সর্বস্তরের মানুষই বই বিনিময় করতে আসতে থাকেন। তেমনই একজন ব্যাংকার মাহমুদুল ইসলাম এসেছিলেন তার শরৎ রচনাসমগ্র, দ্যা ভিঞ্চি কোড এবং পরার্থপরতার অর্থনীতি বইকে বিনিময় করতে। ছুটির দিনে এ ধরনের আয়োজনের ফলে ভালো বইয়ের কাছাকাছি থাকার, এত এত বইপ্রেমীদের উচ্ছ্বসিত ভীড় দেখার এমন দৃশ্য যান্ত্রিক জীবনে কিছুটা স্বস্তির অনুভূতি এনে দেয় জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ মূলত একটি স্টোরিটেলিং প্লাটফর্ম; যার কাজের মূল ক্ষেত্র বই আর চলচ্চিত্রজগত। সমাজের মানুষের গল্প বলে যাওয়ার অভিযাত্রায় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ আয়োজন করেছে একের পর এক চমৎকার সব আয়োজন। পাঁচটি দেশের ফিল্মমেকারদের অংশগ্রহণে করোনাকালীন লকডাউন শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ফিল্ম নিয়ে নিয়মিত ব্লগ, আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ৪ টি শর্টফিল্ম নির্মাণ, বই বিনিময় পাঠাগার ইত্যাদি আয়োজনে ইতিমধ্যেই চলচ্চিত্র আর বইপ্রেমীদের নজর কেড়ে নিয়েছে এই সংগঠনটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৈদ্যুতিক পাখা ও সুপেয় পানির সংকট
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের এইউডব্লিউর পৃষ্ঠপোষক হলেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী হেলে থর্নিং শ্মিডট