বইমেলা সিআরবি বা শিশু পার্কের মাঠে

২৩ দিনব্যাপী এই মেলা শুরু হবে ৯ ফেব্রুয়ারি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ

নগরে অমর একুশে বইমেলা২০২৪ শুরু হবে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি। তবে এবারের বইমেলা এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে হচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে সিআরবি অথবা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সংলগ্ন মাঠ (সম্প্রতি উচ্ছেদ হওয়া শিশু পার্কের জায়গায়) বইমেলার ভেন্যু হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সংলগ্ন মাঠ ব্যবহারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবে বইমেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। মাঠটি বরাদ্দ না পেলে সিআরবিতে বইমেলা আয়োজন করা হবে। ২৩ দিনব্যাপী এ বইমেলা শেষ হবে ২ মার্চ।

বইমেলা উপলক্ষে গতকাল টাইগারপাস নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে লেখক, প্রকাশক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান অতিথি চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এ সিদ্ধান্ত জানান। সভায় পূর্বের ধারাবাহিকতায় জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলা আয়োজনের প্রস্তাব করেন চট্টগ্রামের প্রকাশকদের সংগঠন চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের নেতৃবৃন্দ। বিকল্প হিসেবে বেশিরভাগ মত দেন সার্কিট হাউজ সংলগ্ন উচ্ছেদ হওয়া শিশু পার্কের জায়গায়। প্রস্তাব আসে সিআরবি শিরীষতলা নিয়েও। লালদীঘি মাঠের কথাও বলেন অনেকে। এছাড়া চট্টগ্রামে বইমেলা আয়োজনে স্থায়ী মাঠের ওপর জোর দেয়া হয়।

শেষে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিআরবি ও শিশু পার্ক এই দুটোর মধ্যে শিশু পার্কের জন্য কাল থেকে চেষ্টা শুরু করব। এটা না হলে ধরে নেব সিআরবিতে করব। ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা শুরু হবে। তিনি বলেন, শিশু পার্কের মাঠ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। সেখানেও বইমেলা স্থায়ী হবে না। হয়তো দুই বছর আয়োজন করা যাবে। এরপর আবার সরতে হবে। শিশু পার্ক কোনো পরিকল্পনা থেকে হয়তো ভেঙেছে। তারপরও আমরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারি।

ব্যক্তিগতভাবে সিআরবিতে বইমেলা আয়োজনের মত দিয়ে মেয়র বলেন, সিআরবির পুরো এলাকায় তো পরিকল্পনা করে বইমেলা করতে পারি। সেখানে পরিবেশটাও সুন্দর। শিরীষতলায় করলে খেলার মাঠ বন্ধ হয়েছে বলতে পারবে না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য। এই মেলার জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করা জরুরি। আমি মনে করি সিআরবি শিরীষতলাতে স্থায়ীভাবে থাকবে। আমরা যদি বইমেলা এবার শিরীষতলায় করতে পারি, তাহলে স্থায়ীভাবে প্রতি বছর ওখানে করার একটা সুযোগ তৈরি হবে।

জিমনেশিয়াম মাঠ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, যেখানে সিজেকেএস (চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা) এবং জেলা প্রশাসন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানে অনুরোধ করাটাও সমীচীন মনে করি না। তিনি বলেন, যেখানেই করি না কেন বইমেলা জমবে। প্রাণের টানে পাঠক যাবেই।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহিত উল আলম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে স্থায়ী মাঠের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, স্থায়ী মাঠে সারা বছর অন্য আয়বর্ধক প্রকল্প করল এবং ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা করা যায়।

শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ বলেন, জিমনেশিয়াম মাঠটি কেবল জেলা প্রশাসকের ওপর নির্ভর করবে না। এখানে আরেকটি পক্ষ আছে, যারা খেলার সঙ্গে যুক্ত। গতবার তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বইমেলার বিরুদ্ধে লেখালেখি করে। এবার আমরা জেলা প্রশাসককে বুঝালেও ওই পক্ষটি বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। আমরা বইয়ের বিষয়ে কোনো দ্বিমত চাই না।

কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, সার্কিট হাউজের সামনের মাঠটা উপযোগী। তবে এ মাঠে যেন ভবিষ্যতে আয়বর্ধক কিছু করা না হয়। এটা যেন বইমেলার জন্য স্থায়ী মাঠ হয়।

কবি ওমর কায়সার বলেন, প্রকাশকরা সিআরবিতে যেতে রাজি নন। আবার জেলা প্রশাসক সুচিন্তা থেকে জিমনেশিয়াম মাঠে মেলার বিপক্ষে।

কবি কামরুল হাসান বাদল বলেন, জেলা প্রশাসককে বুঝিয়ে জিমনেশিয়াম মাঠটা নেয়া যায় কিনা দেখতে হবে।

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু বলেন, প্রথম পছন্দ জিমনেশিয়াম মাঠ। সেটার জন্য চেষ্টা করতে হবে। মাঠটি না পেলে সার্কিট হাউজের সামনে শিশু পার্কের মাঠে করা যায়।

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস বলেন, প্রধান চয়েস থাকতে হবে জিমনেশিয়াম মাঠ। আমরা জেলা প্রশাসককে বুঝাতে পারি। বুদ্ধিজীবী সমাজ, নাগরিক সমাজ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা আছেন; তারপরও কেন মাঠটি পাব না?

প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ভেন্যুর বিষয়টি মেয়র মহোদয়ের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত।

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, ঢাকার স্টল সীমিত করে বাকিগুলো চট্টগ্রামের দেয়া হোক।

আবীর প্রকাশনের নুরুল আবছার বলেন, চট্টগ্রামের প্রকাশকদের যেন এবারের বইমেলায় গুরুত্ব দেয়া হয়।

লেখক রেহেনা চৌধুরী বলেন, মেলা কোথায় হচ্ছে তা বারবার পরিচয় করিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। জিমনেশিয়াম মাঠেই হোক।

আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান জিমনেশিয়াম মাঠে মেলা আয়োজন করার প্রস্তাব দেন।

দীপক দত্ত বলেন, সিআরবিতে ১৭৫টা স্টল দেয়া সম্ভব। সেখানে ৪২ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গা আছে। জিমনেশিয়ামে ৩৮ হাজার স্কয়ার ফিট। শিশু পার্কের মাঠ পুরোটা নিলেও সিআরবির সমান হবে না।

চসিক শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটি সভাপতি কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মাকসুদ আহমেদ, মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, মো. জামাল উদ্দীন, মিজানুর রহমান শামীম, সাইফুল ইসলাম বাবু, আবদুল হালিম দোভাষ ও সিটি মেয়রের পিএস আবুল হাশেম।

উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, বেগম আফরোজা কালাম, সমাজ কল্যাণ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, আতাউল্লাহ চৌধুরী, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, . আজাদ বুলবুল, কবি ও লেখক অভিক ওসমান, উপসচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু, সাইফুদ্দিন আহমেদ সাকী ও কবি শুকলাল দাশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিসি হিল বন্ধ করে রাখার অধিকার কারো নেই : মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধপররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম আসছেন কাল