বইমেলা নিয়ে কী প্রত্যাশা

প্রস্তুতি চলছে, শুক্রবার থেকে শুরু সিআরবিতে

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:৩০ পূর্বাহ্ণ

২০১৯ সাল থেকে সম্মিলিত উদ্যোগে ‘অমর একুশে বইমেলা’ হয়ে আসছে চট্টগ্রামে। এ মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, নাগরিক সমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্পসাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করছে। নগরের সিআরবি শিরীষতলা মাঠে আগামী শুক্রবার পর্দা উঠবে এবারের মেলার। অভিন্ন হিসেবে এবারের আয়োজনটি পঞ্চম। অর্থাৎ আয়োজকদের অভিজ্ঞতার ঝুলি কম সমৃদ্ধ হয়নি। তাই অতীত আয়োজনের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো এড়িয়ে এবার জমজমাট বইমেলা উপহার দিবেন আয়োজকরা, এমনটাই প্রত্যাশা চট্টগ্রামবাসীর।

এবারের বইমেলাকে ঘিরে একাধিক পাঠক, লেখক, প্রকাশকের সঙ্গে কথা হয় আজাদীর। তারা বলছেন, অতীতে বিশেষ করে গতবার প্রচারণার ঘাটতিসহ ছোটখাট কিছু ত্রুটি ছিল। তাছাড়া বিগত চারটি বইমেলা আয়োজন করা হয় জিমনেশিয়াম মাঠে। সেখানে অবস্থানগত কারণে নিরাপত্তা নিয়ে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। সিআরবিতে যা নিশ্চিত করতে হবে।

কয়েকজন লেখক জানান, শিরীষতলা মাঠটি রাস্তা থেকে নিচু। নান্দনিকভাবে মেলাপ্রাঙ্গণ সাজানো না হলে তা রাস্তা থেকে খুব বেশি দৃষ্টিনন্দন মনে হবে না। মেলা শুরুর আগেই এ বিষয়ে জোর দেয়া উচিত বলে জানান তারা।

নিরাপত্তা প্রসঙ্গ :

প্রকাশকরা বলছেন, সিআরবির আশেপাশে সারা বছরই মাদকসেবীদের উৎপাত থাকে। বিভিন্ন সময়ে তাদের দ্বারা ছিনতাইসহ হেনস্থার শিকার হন পথচারীরা। তাই সিআরবিতে বইমেলা আয়োজন করায় সামনে এসেছে নিরাপত্তার বিষয়টি। জিমনেশিয়াম মাঠে সীমানা দেয়াল রয়েছে। শিরীষতলায় নেই। তাই শিরীষতলায় শুরু হতে যাওয়া বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন প্রকাশকরা। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরালো না হলে বই চুরির আশঙ্কা করছেন তারা। বিষয়টি ভাবাচ্ছে আয়োজকদেরও। অবশ্য এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ।

হোসাইন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, কাজীর দেউড়ি, আমবাগানসহ আশেপাশের এলাকা থেকে অনেকে হেঁটে মেলায় যাবেন। যাওয়ার পথে পর্যাপ্ত আলো থাকে না। সেখানে ছিনতাইকারীদের আনোগোনা থাকতে পারে। তাই পাঠকদর্শনার্থীর নিরাপত্তা বাড়াতে পুরো সিআরবি এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সিএমপির সঙ্গে চসিকের সমন্বয় করা উচিত।

মেলাপ্রাঙ্গণে ইট চান সবাই :

জিমনেশিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত চারটি বইমেলার তিনটিতে মেলাপ্রাঙ্গণে ইট বিছানো হয়। গতবার (২০২৩) ইটের বদলে বিছানো হয় ত্রিপল। গতবার মেলার আয়োজক চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘ইট বিছানো না হলেও বালি না উঠার মত ব্যবস্থা করা হবে। ধুলোবালি যেন না উড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে’। তবে বাস্তবে ধুলোবালি উড়েছে মেলায়। এতে বিরক্ত ছিলেন মেলায় আসা লেখক, পাঠক, প্রকাশক ও দর্শনার্থীরা। তাই এবারের মেলায় যেন ত্রিপল বিছানো না হয় সে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য মেলা আয়োজক কমিটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, এবারও ত্রিপল বিছানোর পরিকল্পনা আছে তাদের।

প্রকাশকরা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে অনেক সময় বৃষ্টি হয়। দুভার্গ্যবশত এবার যদি বৃষ্টি হয় এবং মেলাপ্রাঙ্গণে যদি তখন ত্রিপল থাকে তাহলে পুরো এলাকা কাদাপানিতে একাকার হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকবে। ইট হলে এ সমস্যা কিছুটা কম হবে। আপন আলো প্রকাশনার স্বত্ত্বাধিকারী শামসুদ্দীন শিশির আজাদীকে বলেন, গতবার প্রচুর ধুলোবালি উড়েছে। দুই ত্রিপলের মাঝখানের সংযোগে উঁচুনিচু হয়েছিল, সেখানে পা পিছলেও অনেকে পড়ে যান। তাই ইট দেয়াটা সবচেয়ে ভাল। এতে মেলার সৌন্দর্যও বাড়বে। ধুলোবালি, কাদা বা পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসবে।

নতুন বইয়ের তথ্য :

রাজধানীতে বাংলা একাডেমির বইমেলায় প্রতিদিন আসা নতুন বইগুলোর তথ্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগ্রহ করে আয়োজকরা। যা সংরক্ষিত থাকে বইমেলার তথ্যকেন্দ্রে। এর মধ্যে কয়টি কাব্য, গল্প, উপন্যাস বা সাহিত্যের অন্যান্য শাখার বই সেই তথ্যও থাকে। এমনকি প্রতিদিন মাইকিং করেও নতুন আসা বইয়ের খবর প্রচার করা হয়। এতে উপকৃত হন মেলায় আসা পাঠক। তারা খুব সহজেই পছন্দের বই সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু চট্টগ্রামে অতীতের বইমেলাগুলোতে নতুন বইয়ের তথ্য এক জায়গা থেকে পাওয়া যায় নি। তাই পাঠককে স্টলে স্টলে ঘুরেঘুরে নতুন আসা বইয়ের তথ্য জানতে হয়েছে। এতে বিরক্ত হয়েছেন পাঠক। আগ্রহ হারিয়েছেন বই কিনতেও। তাই পাঠকের প্রত্যাশা, রাজধানীর মত চট্টগ্রামেও তথ্যকেন্দ্রে নতুন আসা বইয়ের তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। যার শুরুটা হবে এবারের বইমেলায়।

জোর দেয়া হোক প্রচারণায় :

কথায় আছে প্রচারেই প্রসার। কিন্তু গতবার বইমেলার সবচেয়ে বড় ঘাটতি ছিল প্রচারণায়। অভিযোগ ছিল সিটি কর্পোরেশন সেভাবে প্রচারণা চালায়নি। দৈনিক আজাদীসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে যতটুকু প্রচারণা হয়েছে তার বাইরে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সেভাবে প্রচারণা চালানো হয়নি। তাই এবার পত্রপত্রিকা পড়ে মানুষ যতটা জানতে পারবে তার সঙ্গে কর্পোরেশনের প্রচারণা যোগ হলে মেলা আরো জমবে বলে মনে করেন সবাই।

লেখকপ্রকাশকরা বলছেন, কর্পোরেশনের পক্ষে ৪১ ওয়ার্ডকে কয়েক ভাগে ভাগ করে ৪৫টি গাড়ি দিয়ে মাইকিং করা হোক। মেলার প্রথম তিন বছর পত্রপত্রিকায় কয়েকদিন পর পর বিজ্ঞাপন দিত চসিক। এবারও যেন বিজ্ঞাপনমাইকিং করে মেলার প্রচারণা করা হয়। অবশ্য চসিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল একাটি গাড়ি দিয়ে প্রচারণা শুরু হয়েছে। তবে প্রকাশকরা বলছেন, সেটা পর্যাপ্ত নয়।

প্রকাশকরা যা বলছেন :

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু বলেন, মাঠে ত্রিপল হলে সমস্যা হবে। ধুলোবালি উড়তে পারে। তাছাড়া বৃৃষ্টি হলে অবস্থা খারাপ হবে। তবে এবার উপরে ত্রিপলের নিচে পলিথিন দিচ্ছে। এটা ভালো দিক। কর্পোরেশন আমাদের জানিয়েছে, মেলার মাঠে বিদ্যমান গাছেও লাইটিং করা হবে। যদি করা হয় তাহলে রাস্তা থেকে সুন্দর লাগবে। এবার দুই স্টলের মাঝখানে জায়গা কম রাখা হচ্ছে। এটা আরো বড় করলে ভাল হত। তিনি বলেন, গতবার প্রচারণা একদম চালায়নি। এবার সেদিকে জোর দিতে হবে। আজ (গতকাল) একটি গাড়ি দিয়ে মাইকিং করেছে কর্পোরেশন। কিন্তু একটি গাড়ি দিয়ে হবে না। শহরেকে কয়েক ভাগ করে প্রচারণা চালাতে হবে।

আয়োজকরা যা বলছেন :

মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও চসিক শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটি সভাপতি কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু আজাদীকে বলেন, মেলাপ্রাঙ্গণে ত্রিপল দিলে সমস্যা হবে না। তাছাড়া ইট অনেক ব্যয়বহুল। কয়েক লক্ষ ইট লাগবে। এত কম সময়ে তা যোগাড় করাও সম্ভব না। কারণ আমরা শিরীষতলা পেয়েছি শেষ মুহূর্তে। প্রচারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২টি গাড়ি দিয়ে ৪১ ওয়ার্ডে প্রচারণা শুরু করেছি। নগরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো হচ্ছে। মেলাপ্রাঙ্গণের সৌন্দর্য বাড়াতে লাইটিং করা হবে। গেইট থাকবে। বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাম্পের ব্যবস্থা করা হবে।

নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জিমনেশিয়াম মাঠে চারপাশে দেয়াল আছে। শিলীষতলায় নেই। টিন দিয়ে দেয়াল করব। এছাড়া পুরো এলাকার নিরাপত্তা বাড়াতে সিএমপির সঙ্গে কথা হচ্ছে।

এদিকে গতকাল শিরীষতলায় উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, স্টল তৈরির কাজ চলছে। চসিকের উপসচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু আজাদীকে বলেন, সামগ্রিক প্রস্তুতি ভালো। স্টলের কাজ চলছে। এবার ১৬০টি স্টল হবে। এর মধ্যে প্রকাশনার স্টল থাকবে ১৩৭টি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুবর্ণচরের আলোচিত ধর্ষণ মামলায় ১০ জনের ফাঁসি
পরবর্তী নিবন্ধকীভাবে এত সুযোগ-সুবিধা পেলেন রোহিঙ্গা তাহের