ফ্লাইওভারের স্টিল গার্ডারের নাট বল্টু খুলে নিচ্ছে মাদকাসক্তরা

হাসান আকবর | সোমবার , ২৮ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ

হেরোইনখোর মাদকাসক্তরা ভয়ংকর কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। নগরীর দুই নম্বর গেটে ফ্লাইওভারের স্টিল গার্ডারের নাটবল্টু খুলে লোহা হিসেবে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছে। শত শত মানুষের সামনে তারা বানরের মতো ঝুলে ঝুলে স্টিল গার্ডারের নাট বল্টু খুলছে। এতে শুধু তাদের জীবনই নয়, পুরো ফ্লাইওভারকেই হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডে লুজ হয়ে যাওয়া নাটবল্টু বছর দুয়েক আগে সিডিএ ঠিকঠাক করে দিয়েছিল। এখন নতুন করে আবারো নাটবল্টু খুলে নিয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার শংকা প্রকাশ করে সিডিএ’র পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে পত্র দেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচলে গতিশীলতা আনতে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। এই ফ্লাইওভারের কানেক্টিভিটি বাড়াতে যুক্ত করা হয় বায়েজিদ রোড। বায়েজিদ রোড থেকে ওঠা এবং নামার জন্য আলাদা দুইটি র‌্যাম্প ও লুব নির্মাণ করা হয়। দুই নম্বর গেট মোড়ের বাঁক নির্মাণে এই র‌্যাম্প ও লুবে ব্যবহার করা হয় বিশেষ ধরনের স্টিল গার্ডার। চীন থেকে উন্নতমানের স্টিলের পুরো সেট তৈরি করে এনে এখানে সেট করে দেয়া হয়। বিশেষ এই গার্ডারে কয়েক হাজার বড় বড় নাট বল্টু রয়েছে। একেকটি নাট কিংবা বল্টুর ওজন কয়েক কেজি। মূল্যবান এসব নাটবল্টুর উপরই পুরো গার্ডারের স্থায়িত্ব নির্ভরশীল। অর্থাৎ গার্ডার ঠিকঠাক থাকলে ফ্লাইওভার ঠিকঠাক থাকবে। নাট বল্টু খুলে গেলে ধসে পড়বে ফ্লাইওভার। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এসব নাট বল্টুর উপর নজর পড়েছে হেরোইনখোরসহ মাদকাসক্ত একটি চক্রের। তারা ফ্লাইওভারের গার্ডার থেকে নাট বল্টু খুলে ভাঙারির দোকানে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। উপরের গাড়ি চলাচলের চাপের কারণে নাটবল্টুগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা লুজ হয়ে থাকে। এসব নাট বল্টু খুব সহজেই খুলে নেয়া যায় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

বছর দুয়েক আগেও এমন পরিস্থিতি হয়েছিল উল্লেখ করে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ওই সময় আমরা নাটবল্টুগুলো টাইট করে দেয়ার একটি প্রোগ্রাম করেছিলাম। ম্যাঙকে দিয়ে আমরা সবগুলো নাটবল্টু পরীক্ষা করে যথাযথ ব্যবস্থা নিই, যাতে ওগুলো কেউ খুলে নিতে না পারে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ফ্লাইওভার সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছি। এখন সিটি কর্পোরেশন এটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করছে। এখন নাটবল্টুগুলো সিটি কর্পোরেশনকেই টাইট করে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। ফ্লাইওভারের নাটবল্টু খুলে নেয়ার কার্যক্রমটি ভীতিকর এবং আতংকের উল্লেখ করে ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ বলেন, বিষয়টি আমরা সিটি কর্পোরেশনকে জানাবো। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের সামনে নাট বল্টু খুলে নেয়া হচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না বিধায় মাদকাসক্তদের সাহস বেড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে রুলস মানছে না ওয়াসা, আইনগত ব্যবস্থা ছাড়া উপায় দেখছি না
পরবর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় বেড়িবাঁধে দখলযজ্ঞ