বাংলাদেশে প্রায় ১৬ বছর ফ্যাসিবাদী শাসনামলে জনগণের ওপর দমন–পীড়ন চালানো হয়েছে, অধিকার হরণ করা হয়েছে, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব পর্যন্ত বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আর এই ফ্যাসিবাদের পেছনের প্রধান শক্তি ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত– এমন মন্তব্য করে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবে সবাই একসঙ্গে দুই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। একদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন অভ্যন্তরীণ ফ্যাসিবাদী সরকার, অন্যদিকে ভারতের আধিপত্যবাদী শক্তি। এই দুই লড়াই একসঙ্গে হয়েছে এবং এই লড়াইয়ে দেশের গণতন্ত্র প্রিয় নিপীড়িত জনগণের জয় হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব আয়োজিত জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে ‘জুলাই ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা ও হাসিনার ফ্যাসিবাদ নির্বাসন থেকে দেখা’– শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনওয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব ও আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক দল ও ছাত্রশক্তি মাঠে লড়াই করেছে আগামী নির্বাচনে তাদের কেউ ক্ষমতায় যাবে, কেউ বিরোধী দলে থাকবে। তবে রাষ্ট্রের স্বার্থে ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানে সবাইকে এক থাকতে হবে। কোনোভাবে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির নামে কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া যাবে না।
জুলাই সনদকে জনগণের দাবি হিসেবে আখ্যা দিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে দূরত্ব আছে তা দ্রুত দূর করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে সনদ গ্রহণ করতে পারলে এর আলোকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হবে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিকে জুলাই–উত্তর বাংলাদেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, এই তিন দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি একসঙ্গে লড়াই করে শেখ হাসিনা ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করেছে। কাজেই ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ১/১১ সময়ে ভয়ে মানুষ খুব সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। তখন গণতন্ত্রের স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে কালো মাস্ক পরে মানববন্ধন করেছিলাম। সেই কঠিন সময়ে যদি মাহমুদুর রহমান গর্জে না উঠতেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের কারামুক্তি কঠিন হয়ে যেত।
প্রেস ক্লাবের সদস্য মিয়া মোহাম্মদ আরিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আমার দেশ এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব খুরশীদ জামিল চৌধুরী, কালের কণ্ঠ এর ব্যুরো প্রধান মুস্তফা নঈম, এ্যাবের সভাপতি প্রকৌশলী জানে আলম সেলিম, বাংলাদেশ টাইমস এর বিভাগীয় সম্পাদক সালেহ নোমান, সাংবাদিক মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত, মাহবুবুল মওলা রিপন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ফাতেমা খানম লিজা প্রমুখ।












