ফেসবুক লাইভে এসে অঝোরে কেঁদে বাবা–মায়ের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন আত্মহননের। বলছিলেন, আর্থিক সংকট আর পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু করতে না পারার আক্ষেপও। এর কয়েক ঘন্টা পর লাইভে আসা ২৭ বছর বয়সী মিঠুন দাশের ক্ষতবিক্ষত লাশ মিলেছে সীতাকুণ্ড রেল লাইনে। সীতাকুণ্ড উপজেলার পৌর সদরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৌলতি পাড়া এলাকায় ঢাকা–চট্টগ্রাম রেল লাইন থেকে গত মঙ্গলবার রাতে মিঠুনের মরদেহ উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরের বাসিন্দা প্রেমানন্দ দাশের ছেলে মিঠুন। তিনি দাউদকান্দি এলাকায় একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
সীতাকুণ্ড রেলওয়ে ফাঁড়ির এএসআই রাশেদ রানা বলেন, মৌলভীপাড়া এলাকায় চট্টগ্রামমুখী রেল লাইন থেকে মিঠুনের লাশটি উদ্ধার করা হয়। আমাদের ধারণা রাত সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রামমুখী মালগাড়ির নিচে ঝাপ দিয়ে তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি ফেইসবুকে লাইভ দিয়ে নিজের ঋণগ্রস্ত হওয়ার কথা বলেছেন আবার তার ফেইসবুক পোস্টেও এ ধরনের কিছু লেখা লিখেছেন। এএসআই রাশেদ বলেন, সকালে মিঠুনের বাবা–মা, স্ত্রী ও স্বজনরা এসে লাশ বুঝে নিয়েছেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশের এই সদস্য বলেন, মঙ্গলবার মিঠুন সীতাকুণ্ডে মন্দিরে আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। এম কে মিঠুন নামে নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে মৃত্যুর আগে, দুই মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের একটি লাইভ দেন। সেখানে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, আমি কখনও ভাবি নাই এ সিদ্ধান্ত নিব, এর আগে সিদ্ধান্ত নিলে এত বড় ক্ষতি হত না। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। ডিসেম্বর মাস থাইকা বিপদ পিছু ছাড়তাছে না। মা লক্ষ্মীও আমার দিক থাইকা মুখ ফিরাই নিছে।
লাইভে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের টাকা হারানোর কথা বলেছেন। টাকা হারানোর বিষয়টি কেউ বিশ্বাস করবে না বলেও আক্ষেপ করেন। আবার তার কাছে থাকা প্রতিষ্ঠানের কিছু টাকা দিয়ে ধার–দেনা পরিশোধেরও কথাও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার পরিবারটাকে দেখার কেউ নাই, কিন্তু এ মুখ নিয়া মা–বাবাকে কীভাবে জানাব? আমি চইলা যাইতাছি– যারা আমার কাছ থেকে টাকা পান ক্ষমা কইরা দিয়েন আমাকে। আমি নিজ চোখে আমার পরিবারটাকে শেষ হতে দেখতে পারি না।
পরিবারের জন্য আক্ষেপ করে তিনি তার স্ত্রীকে ভালো পাত্র দেখে ফের বিয়ে দেওয়ারও কথা বলেন লাইভে। মিঠুন বলেন, না ভালো স্বামী হতে পারলাম, না ভালো সন্তান, না ভালো ভাই, মা–বাবা আমাকে ক্ষমা কইরা দিও। বিউটিকে একটা ভালো ছেলে দেইখা বিয়া দিয়া দিও। মিঠুন তার পাওনাদারদের টাকার জন্য পরিবারকে চাপ না দেয়ারও অনুরোধ করেন। ওই লাইভের আগে ফেইসবুকে দুইটি পোস্টও দিয়েছেন মিঠুন। সেখানে তিনি তার মৃত্যুর পর টাকা খরচ করে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান না করতে অনুরোধ করেছেন। এবং ঋণগ্রস্ত হওয়ার কথা, অফিসের টাকা হারানো ও চাকরি পাওয়ার কথাও লিখেছেন তিনি।