সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে নগরীর হাজারী গলি এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ‘কুরুচিপূর্ণ’ পোস্টের অভিযোগ এনে ইসকন সমর্থকসহ কয়েক হাজার লোক উক্ত পোস্টকারীর দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তারা ওসমান নামের উক্ত ব্যবসায়ীকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উক্ত যুবককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে যৌথবাহিনী অবস্থান করছিল। পুলিশ বলেছে, তাদের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপসহ হামলা করা হয়েছে। অ্যাসিডে সেনাসদস্যসহ যৌথবাহিনীর ১৩ জন আহত হয়েছেন। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। যাছাই বাছাই শেষে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে জানিয়ে পুলিশ বলেছে, পুরো বিষয়টি নিয়ে একটি চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কোতোয়ালী থানা পুলিশ জানিয়েছে, কিছুদিন আগে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার প্রোফাইলে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করেন। সেখানে ইসকন নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য ছিল। সেই পোস্ট কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ঘুরছিল। একদিন আগে এটি নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেন হাজারী গলির একটি দোকানের মালিক মোহাম্মদ ওসমান। ওই পোস্টের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
পুলিশ জানায়, গতকাল বিকালে ইসকন সমর্থকসহ ৫ থেকে ৭ হাজার লোক উক্ত মার্কেটে চড়াও হয়। তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে দোকানটিতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তারা ফেসবুকে পোস্টকারী ওই দোকানের মালিকের ওপর হামলা ও মারধরের চেষ্টা করে। ওই যুবককে অবরুদ্ধ করে রাখার খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মার্কেটের গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।
কোতোয়ালী থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, আমরা উত্তেজিত লোকজনকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে উক্ত যুবকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে হামলার চেষ্টা চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যৌথবাহিনীকে খবর দিই। যৌথবাহিনী আমাদের সাথে যোগ দেয়। ওই সময় মার্কেট ঘিরে লোকজন জড়ো হতে থাকে। তারা উত্তেজনাপূর্ণ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে হামলার চেষ্টা করলে আমরা লাঠিচার্জ করি। তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে আমরা ওই যুবককে থানায় নিয়ে আসি।
ওসি জানান, আমরা ওই যুবককে নিয়ে চলে আসার সময় পেছন থেকে সেনাসদস্য এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়। বিভিন্ন ভবনের ছাদ থেকে পুলিশসহ যৌথবাহিনীর ওপর ইট–পাটকেলের পাশাপাশি অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়। এতে ৬ জন সেনা সদস্য এবং এসি কোতোয়ালী মাহফুজুর রহমানসহ ৭ পুলিশ গুরুতর আহত হন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যৌথ বাহিনীর টাস্কফোর্স–৪ চট্টগ্রাম থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ জানায়, পরে যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে যৌথবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে। এ বিষয়ে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ আজাদীকে বলেন, ইসকন সমর্থকরা পুলিশসহ যৌথবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে।