জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসারে প্রযুক্তি ও প্রগতির উন্নয়নে দিন বদলেছে, তার সাথে বদলে যাচ্ছে সমাজ, সংস্কৃতি, এমনকি আচার অনুষ্ঠানও। কেবল শহর নয়, গ্রামের আনাচে কানাচেও ইন্টারনেটের সুবিধা ভোগ করছে জাতপ্রযুক্তির প্রসারে বর্তমানে ছোটোবড়ো সকলের হাতে শাভা পাচ্ছে স্মার্টফোন। কিন্তু এই ইন্টারনেটের ব্যবহার কতটা সঠিকভাবে করছে সেটাই আলোচ্য এবং ভাবনার বিষয়। আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশিরভাগেরই ফেসবুকে একাউন্ট আছে। আর এই ফেসবুকের এক অন্ধকার গলিতে পা রেখে ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে নানা বয়সের মানুষ।
পশ্চিমা দেশগুলোর পোষাক ও সংস্কৃতির অনুকরণে বখে যাচ্ছে কিশোর কিশোরী থেকে যুবা তরুণীরাও। ভিনদেশী সংস্কৃতিতে ঢাকা পরে যাচ্ছে আমাদের হাজার বছরের লালন করা সংস্কৃতি। পারিবারিক অনুশাসন না মেনে নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে বিভৎস অপসংস্কৃতির মধ্যে বড় হচ্ছে আমাদের সন্তানেরা। যা মোটেই ভালো সংকেত নয়। এখনই এই অপসংস্কৃতির লাগাম টেনে না ধরলে পরিবার, সমাজ তথা দেশের ভবিষ্যৎ খুব খারাপের দিকেই এগোবে।
তথ্য প্রযুক্তির ভুল ব্যবহারের বদৌলতে আজকাল অনেক পরিবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। কেবল ফেসবুকের বন্ধুত্বে পরিচিত হয়ে স্বামী কিংবা স্ত্রীর অগোচরে মেসেঞ্জার, ইমুসহ নানান ধরনের যোগাযোগ মাধ্যমে গোপনে সেই অপরিচিত বন্ধুটির সাথে কথা বলতে বলতে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে ফাঁটল ধরে কতশত দম্পত্তির সুখের সংসারও ভেঙে তচনচ হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে মানসিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলোর শিশুরাই। এর বিরূপ প্রভাব সমাজেও পরছে এবং পরবেই। সেক্ষেত্রে বন্ধু নির্বাচনে আমাদের বিচক্ষণ হতে হবে। ফেসবুকে একাউন্ট থাকলে রিকোয়েস্ট আসবেই।
সেক্ষেত্রে ঢালাওভাবে সবার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করতে হবে এমন তো নয়! একজন মানুষের ফেসবুক প্রোফাইল ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলেই তার রুচিবোধ এবং ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনেকটা ধারণা পাওয়া যায়। কিছুটা হলেও বোঝা যায় মানুষটি কেমন হতে পারে। তাই রিকোয়েস্টের প্রোফাইল ঘেটে যাচাই-বাছাই করে তারপর বন্ধু নির্বাচন করলে অনেক অনাকাঙ্ক্িষত ঝামেলা এড়িয়ে চলা সম্ভব।
আমি মনে করি, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল, কুফল দুটোই আছে। সুফল নিবেন না কুফলে জড়াবেন তা ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ব্যক্তির নিজস্ব ভাবনার বিষয়। যেমনি ফেসবুক আমাদেরকে দুটো পথ দেখায়, একটা আলোর পথ অন্যটি বিভীষিকাময় অন্ধকারের পথ। আমি / আমরা কোন্ পথে পা রাখবো সেটা একান্তই নিজস্ব বোধ ও রুচির উপর নিভর্র করে। আর রুচিবোধ তৈরি হয় পরিবার, বিদ্যালয় ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করেই। তাই পারিবারিক শিক্ষাটাই এখানে সবচেয়ে বড়ো ভুমিকা পালন করে।
ছোটো একটি শিশুও তার মা ও বাবাকে অনুসরণ করে তার পোষাক পরিচ্ছদ ও কথাবার্তায়। তাই বাবা মাকে এ বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। নজর রাখতে হবে তাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব উপস্থাপনে কোনো ভুল হচ্ছে না তো! এছাড়া পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বইয়ের পাঠেও মানুষের ভিতর চিন্তাশীল মস্তিষ্ক গঠন হয় ও মন মননে উন্নত রুচিবোধ তৈরি হয়। আসুন, আমরা ইন্টারনেটের সুবিধাগুলোকে সাথে নিয়ে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নৈতিকতার পথে অগ্রসর হয়ে উন্নত জাতি হিসেবে পরিচিত হই।