ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক ফের্দিনান্দ মার্কোসকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার ৩৬ বছর পর তারই ছেলে ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ওরফে বংবংকে বিপুল ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করল ফিলিপিন্স। ব্যাপক দুর্নীতি আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দুনিয়াজোড়া কুখ্যাতি অর্জন করা মার্কোস পরিবার আবারও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশের শাসন ক্ষমতায় ফিরতে পারবে, এটা এক সময় ছিল অকল্পনীয়। ফিলিপিন্সের ইংরেজি দৈনিক ফিলস্টার লিখেছে, মার্কোস পরিবার আর কখনও নয়’ স্লোগান এখনও আছে, তবে সোমবারের নির্বাচনে ‘জনতার ঐক্যের’ এক বিভ্রান্তির জোয়ারে তা ভেসে গেছে। খবর বিডিনিউজের।
চূড়ান্ত ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা এখনও বাকি থাকলেও ফিলিপিন্সের নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক সেনেটর বংবং মার্কোস তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১ কোটি ৬০ লাখ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে নিশ্চিত জয়ের পথে রয়েছেন। ৬১ শতাংশ ভোট গণনায় বংবংয়ের ৩ কোটি ৬ লাখ ভোটের বিপরীতে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট লেনি রোব্রেদো পেয়েছেন ১ কোটি ৪৬ লাখ ভোট। ২০১৬ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই লেনি রোব্রেদোর কাছেই হেরেছিলেন মার্কোস জুনিয়র। তবে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সব জনমত জরিপেই এগিয়ে ছিলেন ৬৪ বছর বয়সী বংবং মার্কোস। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি ফিলিপিন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে এবং সেনেট, কংগ্রেস, বিভিন্ন নগরীর মেয়র ও কাউন্সিলরসহ প্রায় ১৮ হাজার পদে ভোট হয়েছে সোমবার। দেশটিতে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় কোটি।
ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনে এগিয়ে আছেন বংবংয়ের রানিং মেট, দাভাও শহরের সাবেক মেয়র সারা দুতার্তে, যিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের মেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সেনেটর কিকো প্যানগিলিনানের চেয়ে দুই কোটিরও বেশি ভোট পেয়েছেন। ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বংকং ফিলিপিন্সের সপ্তদশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে রদ্রিগো দুতার্তের স্থলাভিষিক্ত হবেন, যার ছয় বছরের শাসনামল চিহ্নিত হয়ে থাকবে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে বিনা বিচারে হত্যার রক্তাক্ত অধ্যায় হিসেবে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, দুতার্তের সময়ে বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনায় ঢালাও দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি ফিলিপিন্সে চালু হয়েছে, তার জের টানতে হতে পারে বহু দিন। সেই সঙ্গে বংবংয়ের সামনে থাকবে বিপুল ঘাটতি আর ঋণে জর্জরিত অর্থনীতিকে সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ। বলা হচ্ছে, গত শতকের আশির দশকে তার বাবা ফিলিপিন্সকে যে গাড্ডায় নিয়ে গিয়েছিলেন, তারপর এখনই সবচেয়ে বাজে সময় যাচ্ছে দেশের অর্থনীতির।
১৯৮৬ সালে প্রবল গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন বংবংয়ের বাবা ফিলিপিন্সের সাবেক একনায়ক ফের্দিনান্দ মার্কোস। এরপর বিশ্বব্যাপী মার্কোস পরিবার যেন দুর্নীতির সমার্থক হয়ে ওঠে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং আদালতে দাখিল হওয়া নথিতে মার্কোসদের ব্যাপক বিলাসিতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার অকাট্য সব প্রমাণ উঠে আসতে থাকে।