বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত চট্টগ্রাম রিজিয়নাল টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে গতকাল নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে এসে হেরে গেছে স্বাগতিক চট্টগ্রাম। গতকাল সাগরিকাস্থ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্বাগতিক এশিয়ান গ্রুপ চট্টগ্রামকে ১৫ রানে হারিয়েছে ইস্পাহানী ফেনী। এছাড়া দিনের অপর তিন ম্যাচে ফর্টিস কুমিল্লা ১৭ রানে হারিয়েছে এশিয়ান বান্দরবানকে। এবি ব্যাংক চাঁদপুর ২ উইকেটে হারিয়েছে কন্টিনেন্টাল খাগড়াছড়িকে। আর চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের শেষ ম্যাচে কন্টিনেন্টাল বি–বাড়িয়া ৯ উইকেটে হারিয়েছে ক্লিপটন গ্রুপ কক্সবাজারকে।
সাগরিকাস্থ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে ব্যাট করতে নামে ইস্পাহানী ফেনী। ১৮ রানে প্রথম উইকেট হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে জিল্লুর এবং শাহরিয়ার মিলে যোগ করেন ৬৭ রান। শাহরিয়ারকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন রিফাত। তবে এজুটি ভাঙ্গার পর আর দাঁড়াতে পারেনি ফেনীর পরের ব্যাটাররা। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৯ রান সংগ্রহ করে ফেনী। একপ্রান্ত আগলে রাখা জিল্লুর ৫১ বলে ৭টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৭৪ রান করেন। এছাড়া দলের পক্ষে শাহরিয়ার ২৭, মিনহাজ ১৬ এবং সাজ্জাদ ১১ রান ছাড়া বাকি কেউ্ট দুই অংকের ঘরে যেতে পারেনি। চট্টগ্রামের পক্ষে ১২ রানে ৩টি উইকেট নিয়েছেন রিফাত। ২টি উইকেট নিয়েছেন রতন দাশ। ১৪০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ঝড়ের গতিতে করেছিল চট্টগ্রামের দুই ওপেনার সাদেক এবং কপিল। ৪.৫ ওভারে ৪৫ রান করে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। ১৭ বলে ১৫ রান করে ফিরেন সাদিকুর। এরপর চট্টগ্রামের আর কোন ব্যাটার দাঁড়াতে পারেনি ফেনীর বোলারদের সামনে। ফলে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে হারাতে ১২৪ রানে থামে স্বাগতিক চট্টগ্রাম। দলের পক্ষে কপিল ১৫ বলে ২৯ রান ছাড়া বাকি কেউই তেমন সুবিধা করতে পারেনি। তৌসিফ ১৪, রুবেল ১২, রতন ১২ এবং ইফরান ১৩ বলে ২২ রান করেও দলকে জেতাতে পারেনি। ফেনী জেলা দলের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন মিনহাজ সাকিব এবং শাহরিয়ার আহমেদ। বিজয়ী দলেল জিল্লুর রহমান ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন। তার হাতে পুরষ্কার তুলে দেন ইস্পাহানী গ্রুপের ডিজিএম (এডমিন) কাজি নজরুল ইসলাম এবং এশিয়ান গ্রুপের ডিরেক্টর জাকির হোসাইন।
একই মাঠে অনুষ্ঠিত দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে টসে জিতে ব্যাট করতে নামে কন্টিনেন্টাল খাগড়াছড়ি। শুরুটা তাদের ভাল হয়নি মোটেও। ৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ইসরাত হোসেন চেষ্টা করেন দলকে টানার। কিন্তু পরের কোন ব্যাটার তাকে সঙ্গ দিতে পারেনি। ৫৩ বলে ৬০ রান করে একাই লড়াই করে গেছেন ইশরাত। আর তাতেই শতরান পার হয় খাগড়াছড়ির ইনিংস। ১০২ রান সংগ্রহ করে দলটি। ইশরাত ছাড়া ১৮ রান করেছেন রনি। চাঁদপুরের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন নুর মোহাম্মদ, তানভীর আহমেদ এবং মেহেদী হাসান। ১০৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দারুন শুরু করেছিল চাঁদপুর। কিন্তু উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গার পর তারাও পথ হারাতে বসেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত মান রক্ষা হয়েছে তাদের। শেষ বলে গিয়ে জিতেছে চাঁদপুর। দলের পক্ষে তোফায়েল ২১, সাদ্দাম ২৭, ফাহিম ২০ রান ছাড়া বাকি কেউই দুই অংকের ঘরে যেতে পারেনি। খাগড়াছড়ির পক্ষে ১৫ রানে ৩টি উইকেট নিয়েছেন রনি। ২টি উইকেট নিয়েছেন মিলন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বিজয়ী দলের মেহেদী হাসান রানা। তার হাতে পুরষ্কার তুলে দেন কন্টিনেন্টাল গ্রুপের ডিরেক্টর আলিফ ইকবাল চৌধুরী।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে ব্যাট করতে নামে ফর্টিস কুমিল্লা। ২১ রানে প্রথম উইকেট হারায় তারা। ১৪ রান করে ফিরেন আনোয়ার। দ্বিতীয় উইকেটে ইফরান এবং রুবেল মিলে যোগ করেন ৩১ রান। ২০ রান করে ফিরেন ইফরান। এরপর রুবেল মিয়া একাই টেনেছেন দলকে। মুলত তার ব্যাটে চড়ে ১৪৬ রান সংগ্রহ করে কুমিল্লা। ৫০ বলে ৫৭ রান করেন রুবেল। এছাড়া সাইফুল ১৩ এবং ১০ রান করেন এয়াছিন আরাফাত। বান্দবানের পক্ষে ২৭ রানে ৪টি উইকেট নিয়েছেন তন্ময় পাটোয়ারী। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন আশিকুর এবং রানা দাশ। জবাবে ব্যাট করতে নামা বান্দরবান দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারায়। ৪৩ রানে হারায় ৩ উইকেট। সে চাপ থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন জসিম এবং সাখাওয়াত। কিন্তু এজুটি ভাঙ্গার পর আর দাড়াতে পারেনি বান্দরবানের ব্যাটিং। ফলে ১২৯ রানে থামে তাদের ইনিংস। দলের পক্ষে সাখাওয়াত ৩৫, জসিম ২৭, শহীদুল ১৮, তন্ময় ১৬ এবং রানা দাশ করেন ১৪ রান। কুমিল্লার পক্ষে ২টি করে উইকেট য়িেছেন আশরাফুল, মেহেদী, রুবেল মিয়া এবং স্বপন। বিজয়ী দলের রুবেল মিয়া ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়।
একই মাঠে দিনের শেষ ম্যাচে টসে জিতে ব্যাট করতে নামে ক্লিপটন কক্সবাজার। প্রথম ওভারেই তারা উইকেট হারায়। দ্বিতীয় উইকেটে ৭৪ রান যোগ করেন হানিফ এবং হেলাল। কিন্তু এজুটি ভাঙলে আর বড় স্কোর খেলতে পারেনি কোন ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ১৪২ রান করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার। দলের পক্ষে হানিফ ৩৯, হেলাল ৩৭, আজাদ ১০, সাঈদ ১০ এবং সাজ্জাদ করেন ২০ রান। বি–বাড়িয়ার পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন খাইরুল এবং আশরাফুল। জবাবে ব্যাট করতে নামা বি–বাড়িয়া উদ্বোধনী জুটিতে ৭৩ রান তুলে নেয় বি–বাড়িয়া। ২৫ রান করে ফিরেন সুমন। এরপর আশফাক এবং খোরশেদ মিলে আর কোন বিপদ হতে দেননি। ১৫.৩ ওভারে ৯ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে বি–বাড়িয়া। ৪৯ বলে ৭৪ রান করে অপরাজিত থাকেন আশফাক আহমেদ। খোরশেদ অপরাজিত থাকেন ১৯ বলে ৩২ রান করে। বিজয়ী দলের আশফাক ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন।