বইমেলাসহ যে কোনো উৎসব ও অনুষ্ঠানে অতিথিদের ফুলের তোড়ার পরিবর্তে বই উপহার দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। তিনি বলেন, ফুল খুব সুন্দর জিনিস। ফুল জীবনের প্রতীক। সৌন্দর্যের প্রতীক। নির্মলতার প্রতীক। কিন্তু বইয়ের গুরুত্ব অনেক। তাই ফুলের পরিবর্তে বই দেয়া হোক। কাউকে বই উপহার দিলেন, সে হয়তো আজ পড়ল না। কিন্তু টেবিলে পড়ে থাকা বইটি কোনো একদিন হয়তো তিনি পড়বেন। এভাবে দেখতে দেখতে পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
গতকাল সোমবার অমর একুশে বইমেলার আলোচনা মঞ্চে ‘গণমাধ্যম সম্মিলন’ এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ–এর সম্পাদক রুশো মাহমুদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক। স্বাগত বক্তব্য দেন, বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে উপ–সচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু।
এম এ মালেক বলেন, বই পড়তে হবে। বই না পড়লে জ্ঞানের বিকাশ ঘটবে না। বই জানার এবং জ্ঞানের শক্তি অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। আমরা যত বেশ বই পড়ব তত বেশি জ্ঞানী হব এবং আমাদের জানার পরিধি তত বাড়বে। পৃথিবীকে জানার জন্য এবং সমসাময়িক বিষয়কে জানার বই পড়তে হবে। আমরা যদি সমসাময়িক বিষয়কে উপলব্ধি করতে না পারি তাহলে আমাদের অগ্রযাত্রা থেমে যাবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি পড়তে হবে। না পড়লে কোথায় আছি, কোন বৈজ্ঞানিক পর্যায়ে আছি সেটা আমরা বুঝে ওঠতে পারব না।
তিনি বলেন, অনেকে ছেলে–মেয়েদের বলে, ‘তোমরা আমাদের ভবিষ্যৎ’। ভবিষ্যৎ কী? আমরা গতকাল এবং আজকের বিষয়ে জানি। আগামীকালের বিষয় তো কিছু জানতে পারি না। সুতরাং ভবিষ্যতের উপর আমার কোনো নির্ভরশীলতা নেই। তবে আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। এসময় তিনি এ পি জে আবদুল কালাম এর ‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন হলো সেটাই যা পূরণের অদম্য ইচ্ছা তোমায় ঘুমোতে দেবে না’ উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আমরা কোথায় গিয়ে পৌঁছুব, কোথায় যেতে হবে সেই স্বপ্ন দেখতে হবে। জীবনকে কীভাবে সাজাব তার স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সেটা ঘুমের মধ্যে না দেখে দিনের মধ্যে দেখতে হবে। অর্থাৎ এটা হবে দিবাস্বপ্ন। তবেই সে স্বপ্ন পূরণ হবে।
রুশো মাহমুদ বলেন, বইমেলা হচ্ছে পুস্তকের আড়ৎ। আবার বইমেলা বেড়ানোর একটা উপলক্ষ। তবে বেড়ানোর উপলক্ষ যদি বড় হয়ে যায় তাহলে প্রকাশনার একটা ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তিনি প্রকাশকদের প্রতি প্রকাশনার মান বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, সম্পাদনার মান বাড়াতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই মানটা নিম্নমুখী। প্রকাশনার মান বাড়ানোর জন্য প্রকাশকদের সম্পাদকমণ্ডলী থাকা দরকার। সম্পাদনা পরিষদ থাকা দরকার। বাজারজাতকরণের পূর্বেই সু–সম্পাদনা নিশ্চিত করা চায়। তা না হলে ভাল বই পাঠকের হাতে তুলে দেয়া যাবে না।
আবু সুফিয়ান বলেন, বইমেলার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জ্ঞান চর্চার সুযোগ পাবে। জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্য বইয়ের বিকল্প নেই। ইদানিংকালে আমরা বই থেকে একটু দূরে সরে যাচ্ছি। তিনি বলেন, শুধু ঢাকা–চট্টগ্রাম নয়, সারা বাংলাদেশে যদি বইমেলা করতে পারি তাহলে আমাদের জ্ঞান আরো সমৃদ্ধ হবে। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জাতির জনকের জীবনের ইতিহাস, আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে না পারলে আগামী দিনে আমাদের সাফল্য আসবে না।
দেবদুলাল ভৌমিক বলেন, গণমাধ্যম সারা পৃথিবীতে আলোচিত বিষয়। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে গণমাধ্যম। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক বড়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পেশাজীবীদের যে অবদান তার অন্যতম হচ্ছে গণমাধ্যমের। তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের স্তম্ভ যত শক্ত ভিত পাবে সে রাষ্ট্রের সমগ্র কাঠামো তত শক্তিশালী হবে। রাষ্ট্রের এই স্তম্ভটি শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে স্বাধীন গণমাধ্যমের বিকল্প নেই।
ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, যতই দিন গড়াচ্ছে বইমেলার আবেদন বাড়ছে।
এদিকে গতকালও পাঠক–দর্শনার্থীদের সরব উপস্থিতিতে জমজমাট ছিল নগরের সিআরবি শিরীষতলায় চলমান বইমেলা। নন্দন বইঘররের সঞ্জয় সূত্রধর জানান, গতকাল মেলায় নতুন আসা বইয়ের মধ্যে রয়েছে শাহজাদা এমরানের ‘শরণার্থীদের যুদ্ধজীবন : ১৯৭১’ । এছাড়া আছে তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরীর ‘মান্না ইন দ্যা গবলেট’, রুমি চৌধুরীর ‘নির্বাণ প্রতীতি’, শামসুল আরেফীনের ‘চট্টগ্রামের লোকসংগীত’ ও মাহবুব পলাশের ‘কবির ছাইভস্ম’।