দেশের মানুষের আমিষের মূল উপাদান মাছের বড় অংশের যোগান আসে সামুদ্রিক মৎস্য থেকে। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সামুদ্রিক মৎস্য শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। এ খাতে জড়িতরা বলছেন, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ করে ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে ফিশিং সেক্টরও বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছে। কারণ সামুদ্রিক মৎস্য শিকারে ব্যবহৃত নৌযানের জ্বালানিতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়। এখন ফিশিংয়ের ব্যয় বেড়ে যাবে। বাড়বে মাছের দামও। এতে এ শিল্পের জড়িতরা বাদেও ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
মেরিন হোয়াইট ফিশ ট্রলারস ওনার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছৈয়দ আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের স্টিল বডি বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে প্রতিট্রিপে সাগরে মাছ শিকারে যেতে ৪০ থেকে ৮০ টন পর্যন্ত ডিজেল নিতে হয়। এখন প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ট্রলারে শুধু জ্বালানি ব্যয়েই প্রতি ট্রিপে ৬ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা বেশি খরচ দাঁড়াচ্ছে। অথচ সেই হিসেবে মাছের দাম বাড়বে না। আবার মাছের দাম বাড়লেও তা সাধারণ ভোক্তাদের উপর প্রভাব পড়বে। জ্বালানির দামের সাথে শুধু পরিবহন ব্যয় নয়, ডিজেল নির্ভর সব ধরনের জেনারেটর পরিচালনার ব্যয় বেড়েছে। ফিশিং সেক্টরে জ্বালানি খরচ হচ্ছে মূখ্য। এতে ফিশিং সেক্টর মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কি.মি. এলাকাজুড়ে বাংলাদেশের সীমানায় মৎস্য শিকার করে প্রায় ৬৮ হাজার নৌযান। তন্মধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার নৌযান রয়েছে ইঞ্জিন চালিত। এসব নৌযানের মাধ্যমে বছরে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা হয়ে থাকে, যা আহরিত সামুদ্রিক মৎস্যের ৮১.৬৬ শতাংশ।
মেরিন হোয়াইট ফিশ ট্রলারস ওনার্স এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে জানান, বর্তমানে সাগরে মাছ শিকারে থাকা নৌযানের মধ্যে ২৫৫টি স্টিলবডি ট্রলিং (বাণিজ্যিক ট্রলার), ৭০টি কাটবডি ট্রলিং এবং ৩০ হাজারের মতো ইলিশ ও ম্যাকানাইজড বোট রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কাটবডি ট্রলিংগুলো ১৪-১৫ দিনের জন্য ট্রিপে যেতে ১৬-১৭ টন ডিজেল নিয়ে যায়। এতে প্রতিট্রিপে শুধু জ্বালানিতে দুই থেকে তিন লাখ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। আবার ম্যাকানাইজ বোটগুলো ৬-৭ দিনের জন্য ট্রিপে গেলেও দুই থেকে তিন টন ডিজেল নিতে হয়। এতে ম্যাকানাইজ বোটের ক্ষেত্রেও প্রতি ট্রিপে ৩০-৪০ হাজার টাকা বেশি খরচ হবে।’ বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘গত বছর দুয়েক ধরে মেরিন ফিশারিজ শিল্প দুরবস্থার মধ্যে আছে। কারণ পলিসিগত নানান কারণে আমরা বছরে ৬ মাস মাছ শিকার করি। বছরের ৬ মাস মাছ শিকার না করেও পরিচালনা ব্যয় বহন করতে হয়। প্রতি লিটার ডিজেল ৬৫ টাকা হিসেবে ২০০ টনের একটি জাহাজ ২০ দিনের এক ভয়েজে গেলে ৬৫-৬৭ লক্ষ টাকার তেল লাগে। এখন ৮০ টাকা হওয়াতে শুধু জ্বালানিতে লাগবে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা।’ তিনি বলেন, বর্তমানে সাগরে কাঙ্খিত মাছ শিকার হচ্ছে না। তার উপর ডিজেলের দাম বাড়াতে যে কোনো সময় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমরা আশা করবো সামনের সপ্তাহের মধ্যে সরকার ডিজেলের দাম কমিয়ে দেবে।’












