ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সমর্থন

| শনিবার , ১১ মে, ২০২৪ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। গতকাল শুক্রবারের ভোটে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে। জাতিসংঘে যোগ দেওয়ার যোগ্য হিসাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে ‘বিষয়টি আনুকূল্যের সঙ্গে পুনর্বিবেচনা করার জন্য’ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে সুপারিশ করেছে সাধারণ পরিষদ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদস্যদেশ ১৯৩টি। ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতি বিশ্ববাসীর সমর্থনের বিষয়টিই যেন যাচাই হয়েছে গতকালের ভোটের মাধ্যমে। খবর বিডিনিউজের।

ফিলিস্তিনকে কার্যত রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ারই পদক্ষেপ এটি। গত মাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রচেষ্টা ভেস্তে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভিটোর কারণে। গতকাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবনার পক্ষে পড়েছে ১৪৩ ভোট। ৯টি পড়েছে বিপক্ষে। এর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। আর ২৫টি দেশ ভোটদানে বিরত থেকেছে।

সাধারণ পরিষদে ভোটের এই ফলে ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ না পেলেও তারা এই বিশ্ব সংস্থায় যোগ দেওয়ার যোগ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেল। প্রস্তাবে বলা হয়, সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবনা নির্ধারণ করেছে যে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সদস্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং নিরাপত্তা পরিষদকেও বিষয়টি আনুকূল্যের সঙ্গে পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে।

ফিলিস্তিন বর্তমানে জাতিসংঘ সদস্য না হলেও ২০১২ সালে তারা জাতিসংঘে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পেয়েছে। জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য ফিলিস্তিন বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

২০১১ সালে পূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হওয়ার জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন করেছিল ফিলিস্তিন। এরপর গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের মধ্যে ফিলিস্তিন গত মাসের শুরুতে আবারও সদস্যপদের জন্য আবেদন করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভোটের আগে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেছিলেন, আমরা শান্তি চাই। মুক্তি চাই। একটি হ্যাঁ ভোট মানে ফিলিস্তিনের অস্তিত্বের জন্য ভোট। এটি কোনও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভোট নয়। এটি শান্তির পথে বিনিয়োগ।

জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হতে পারবে ফিলিস্তিন? : রোমান ক্যাথলিক চার্চের সরকার ‘হলি সি’ এর মতো ফিলিস্তিনও জাতিসংঘের একটি অসদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র। ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর ১৯৩ জাতির জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাবনা পাসের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিন জাতিসংঘের ‘অসদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রে’র মর্যাদা লাভ করে। মোট ১৩৮টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, বিপক্ষে ভোট দেয় ৯টি দেশ। আর ভোট দানে বিরত ছিল ৪১টি দেশ।

সদস্য পর্যবেক্ষকের স্বীকৃতি পাওয়ায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা একধাপ অগ্রগতি পেয়েছিল। দাবি আদায়ের জন্য বহির্বিশ্বে ফিলিস্তিন প্রভাব খাটানোর সুযোগ পায়।

এর আগে ফিলিস্তিন কেবল জাতিসংঘের ‘অসদস্য পর্যবেক্ষক সত্তা’র মর্যাদা ভোগ করত। ২০১২ সালের ওই ভোটেই প্রথম ‘সত্তা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘রাষ্ট্র’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়; যা ছিল ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনকে একটি ‘স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথে বড় অগ্রগতি।

জাতিসংঘের সদস্য হতে চাইলে কোনও দেশ সাধারণত বিশ্ব সংস্থাটির মহাসচিবের কাছে আবেদন করে। মহাসচিব তখন সেই আবেদন নিরাপত্তা পরিষদে পাঠান সেটি মূল্যায়ন করা এবং ভোট অনুষ্ঠানের জন্য। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর সেই ২০১১ সালে পূর্ণ সদস্যপদের জন্য করা আবেদনটি নতুন করে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়ে গত ৩ এপ্রিল জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের কাছে চিঠি পাঠান। আবেদন হাতে আসার পর ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি কমিটি প্রথমেই সেটি মূল্যায়ন করে দেখে যে, এতে জাতিসংঘ সদস্য হওয়ার শর্ত পূরণ হয়েছে কিনা। তারপর সেই আবেদনটি হয় তুলে রাখা হয়, নয়ত নিরাপত্তা পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটাভুটির জন্য উপস্থাপন করা হয়।

ভোটে সেটি পাস হতে এর পক্ষে অন্তত ৯টি ভোট প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া কিংবা চীনের কোনও ভিটোও এতে পড়া যাবে না। সদস্যপদের আবেদন নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদন করলে সেটি তখন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের যাবে অনুমোদনের জন্য। সেখানে আবেদনটি অনুমোদন পেতে হলে দুইতৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন লাগে। নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধরণ পরিষদের অনুমোদন ছাড়া কোনও দেশ জাতিসংঘের সদস্য হিসাবে যোগ দিতে পারে না।

ফিলিস্তিন জাতিসংঘের অসদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হওয়ার কারণে সংস্থাটির সহযোগী ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগদানের সুযোগ পায়। কিন্তু জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য না হওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিন কোনও ভোটাধিকার পাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোটি টাকার মালামাল জব্দ, মালিককে কারাদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গোপসাগরে এমভি আবদুল্লাহ, কুতুবদিয়া পৌঁছাবে সোমবার