ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা ও সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা মানেননি ব্যবসায়ীরা

সাজেক উপত্যকায় অগ্নি ট্র্যাজেডি

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | মঙ্গলবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

দেশের পর্যটনশিল্পে সাজেক উপত্যকা পর্যটক ও বিনোদনপ্রেমী মানুষের কাছে পছন্দের শীর্ষে। গতকাল দুপুরের এক আগুনে ‘অগ্নিপুরীতে’ পতিত হয়েছে মেঘপাহাড়ের উপত্যকা সাজেক ভ্যালি। পুড়েছে ৯৫টি স্থাপনা।

পাহাড়ের চূড়ায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠায় সঙ্গত কারণেই সাজেক ভ্যালিতে পানির সংকট রয়েছে। তবে ক্রমাগত এত বড় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলেও ছিল না যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দিয়েও ঝুঁকি মোকাবিলায় কটেজরিসোর্ট মালিকদের কাছ থেকেও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রাঙামাটির ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়।

রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় বলছে, কয়েক দফায় সাজেক কটেজ মালিক সমিতির নেতাদের সাজেক ভ্যালি উপত্যকায় পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা (রিজার্ভার) রাখা, লাইসেন্স নেয়া, অগ্নি নির্বাপক স্প্রে ও কটেজরিসোর্টের জনবলকে যথাযথ ট্রেনিং দেওয়ার বিষয়ে বলা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি মালিকদের পক্ষ থেকে। এছাড়া যত্রতত্র স্থানে রিসোর্টকটেজ নির্মাণ, পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ও খালি স্থান না রাখার ফলেও ঝুঁকি বেড়েছে সাজেক ভ্যালিতে। শুধু রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক ভ্যালিই নয়, পর্যটনশিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যথাযথ অব্যবস্থাপনা রয়েছে তিন পার্বত্য জেলাজুড়ে। এ নিয়ে নীতিমালা কিংবা গাইডলাইন তৈরি করা প্রয়োজন মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ও পর্যটন বিশেষজ্ঞরা।

রাঙামাটির রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠা রাঙামাটির বেশ কিছু রিসোর্ট ব্যতিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বাকি সব রিসোর্টগুলোয় পানি সংকট আছে। অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি কিংবা অগ্নি নির্বাপণ সুব্যবস্থা নেই। সাজেকের আজকের দুর্ভাগ্যজনক অগ্নিকাণ্ড পর্যটন খাতের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের সামনে বেশকিছু প্রশ্ন হাজির করেছে। প্রথমত, পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকা এলাকাগুলোতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে রিসোর্টের কটেজ নির্মাণ ও রিসোর্ট স্থাপন সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা না থাকা। ফলে যে যার ইচ্ছেমতো কটেজ নির্মাণ করছে ও ঘন ঘন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, শহর থেকে দূরে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাগুলোতে ফায়ার সার্ভিস ইউনিট না থাকা। সেই সঙ্গে সে সকল রিসোর্ট বা কটেজসমূহে নিজস্ব প্রাথমিক অগ্নিনির্বাপন আয়োজন না থাকা। তৃতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, পাহাড়ের প্রাকৃতিক ও প্রতিবেশগত বিষয়গুলো বিবেচনা না করে রিসোর্ট ও কটেজ স্থাপন করা। পাহাড়ের অতি সম্ভাবনাময়ী পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করার জন্য এ সকল বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক খোকনেশ্বর ত্রিপুরা বলেন, আমি মনে করি কেবল সাজেক ভ্যালির ক্ষেত্রেই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রেও কটেজরিসোর্টের বিষয়ে অন্তত মিনিমাম গাইডলাইন থাকা উচিত। শুধু কর্মাশিয়াল বিষয়গুলোকে দেখলেই হবে না। ঝুঁকি, নিরাপত্তার বিষয়গুলোও ভাবতে হবে।

রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের সদ্য সাবেক সহকারী পরিচালক মো. দিদারুল আলম বলেন, আমি দীর্ঘদিন রাঙামাটি জেলায় দায়িত্ব পালন করেছি। সাজেক ভ্যালির কটেজরিসোর্ট সমিতির নেতাদের আমি বারবার বলেছি, আপনারা সাজেকে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থায় উদ্যোগ নেন। তিনটা বিষয়ে আমরা তাদের বলেছি, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র (ফায়ার এঙটিংগুইজার) রাখা, লাইসেন্স নেওয়া ও জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরা সব ধরনের সহায়তার কথা জানালেও তারা উদ্যোগী হননি। যদি তারা বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতেন সেক্ষত্রে আজকের এই ঘটনার হয়তো এত বড় হতো না। এখান থেকে তাদের অবশ্যই শিক্ষা নিতে হবে।

রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তেরাঁ আইন ২০১৪ এর ২ এর ১৩ ধারা অনুযায়ী কটেজরিসোর্ট মালিকদেরও এই আইন অনুযায়ী লাইসেন্স গ্রহণ করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে সাজেক ভ্যালির কটেজ রিসোর্টগুলোর মধ্যে কয়টি প্রতিষ্ঠান আইন মেনে লাইসেন্স নিয়েছেন আবার কয়টি আইন মানেননি আমরা অবশ্যই সেটি যাচাই করে দেখার পর জানতে পারব। যারা আইন মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালন করেননি তাদের এই ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আমরা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিকের নতুন লোগো উন্মোচন
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় শহীদ সেনা দিবস আজ