ফানুসের মতো পাপও উড়ে যাবে আকাশে

রাজস্থলীতে মারমাদের প্রবারণা উৎসব

রাঙামাটি প্রতিনিধি | রবিবার , ১ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মারমা সমপ্রদায়ের পাড়ায় পাড়ায় চলছে মহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা উৎসব। গত শুক্রবার থেকে ফানুস উত্তোলন ও সমবেত প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে উৎসব শুরু হয়, যা তিন দিন ধরে চলবে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় ও সামাজিক এই উৎসব উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলছে নানা আচার-অনুষ্ঠান। প্রাণিজগতের মঙ্গল কামনায় জাদিতে জাদিতে বিশেষ প্রার্থনা করা হচ্ছে।
মারমা জনগোষ্ঠী লোকজন জানান, তাদের আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় গুরুদের খাবার দেওয়া, ফানুস উত্তোলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা তৈরি, প্রদীপ প্রজ্বলন, রথযাত্রা ও নদীতে রথ বিসর্জন। প্রবারণা পূর্ণিমায় মোমবাতি প্রজ্বলন প্রথা আছে, সিদ্ধার্থ গৌতমবুদ্ধ মাথার একগুচ্ছ চুল কেটে বলেছিলেন, তিনি যদি সিদ্ধিলাভের উপযুক্ত হন, তবে এই চুল যেন নিচে না পড়ে উপরে উঠে যায়। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী চুলগুচ্ছ আকাশে উড়ে গিয়েছিল। বুদ্ধের কেশধাতুর পূজার অংশ হিসেবে আকাশে এই ফানুস উত্তোলন করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই পূজার মধ্য দিয়ে ফানুসের মতো পাপও আকাশে উড়ে যাবে। প্রবারণা উৎসবকে ঘিরে মারমা সমপ্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা নতুন পোশাকে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক পাড়া থেকে অন্যপাড়ায়।
তরুণী তিথিউ মারমা জানান, তিন মাস বর্ষবাস (উপবাস) পালনের পর প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করছি। রাজস্থলী ক্রয়সাগই পাড়ার বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ নাইদিয়া ভান্তে জানান, শত শত বছর ধরে এই ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব পালন করে আসছে মারমা সমপ্রদায়। গৌতম বুদ্ধ এ দিনে আকাশে চুল উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই মারমা সমপ্রদায় বিশ্বাস করে, এ দিনে ফানুস উড়িয়ে দিলে তাদের পাপমোচন হয়।
প্রতি বছর আশ্বিনী পূর্ণিমায় বৌদ্ধরা প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে থাকেন। আজ ১ নভেম্বর গভীর রাতে নদীতে রথ বিসর্জন এবং উপজেলার বাজারগুলোর উত্তর-দক্ষিণ দিক প্রদক্ষিণ করে পূণ্যার্থে বিহারের উদ্দেশে গমন, পঞ্চশীল গ্রহণ ও ধর্মাদেশনার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেমিটেন্স বাড়তে পারে ৮ শতাংশ যেসব কারণে বাড়ছে
পরবর্তী নিবন্ধছিনতাইয়ের শিকার চার ব্যবসায়ী