ফলাফল নয়, মানসম্মত শিক্ষার দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে

| মঙ্গলবার , ১৪ মে, ২০২৪ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০। জিপিএ৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৮২৩ জন। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার বাড়লেও জিপিএ৫ কমেছে। রোববার বেলা একটার দিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে এসব তথ্য জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, গতবার পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ২৯। জিপিএ৫ পেয়েছিল ১১ হাজার ৪৫০।

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার উল্লেখ করার মতো। শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলাফল নয়, সব সূচকই ঊর্ধ্বমুখী। জিপিএ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা না বাড়লেও শতভাগ পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও ইতিবাচক। তবে পরীক্ষার ফলাফল আকাশচুম্বী হলেও শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। তাঁরা বলেছেন, দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সম্প্রসারণ হলেও শিক্ষার গুণগত মানের ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ও বিস্তৃত শিক্ষানীতির অভাব যেমন রয়েছে তেমনি সরকারের সঠিক পরিকল্পনা এবং দক্ষ শিক্ষকের অভাবও সুস্পষ্ট।

শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রচেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করে তাঁরা বলেছেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষার আসলে কোনো অর্থ নেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে মানের ক্রমাবনতি রোধ করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে। গুগণত শিক্ষা অর্জনে টেকসইকরণসহ বিশ্বমানের শিক্ষা এবং যুগোপযোগী শিক্ষার জন্য যুগোপযোগী নীতি এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ফলাফল ভালো হলেও অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতিও কিছুটা দায়ী বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষার মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিক্ষকশিক্ষার্থী অনুপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসাবে কাজ করে। শিক্ষার মান বাড়াতে যা যা করণীয়, সময়মতো প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

কী ধরনের শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষার্থীরা বের হচ্ছেন, সেটার ওপর নির্ভর করছে তাঁরা ভবিষ্যতে কী ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। এখন মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে মানসম্মত শিক্ষার দিকেও নজর দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষার মান এককভাবে শিক্ষার্থীদের ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল নয়। দেশের সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেও বলা যাবে না যে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা গুণগতমানের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে। শিক্ষার মান নির্ভর করে শিক্ষাক্রমের সফল বিস্তারণ, শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো সুযোগসুবিধা, মানসম্মত শিক্ষক, গুণগত শিক্ষা ও সে শিক্ষার ফলাফলের ওপর। তাই বলা যায়, কেবল ফল বা জিপিএ বৃদ্ধি অথবা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ পাসের হিসাব দিয়ে দেশের শিক্ষার মান কোনোভাবেই বিচার করা যায় না। পাস করা বিদ্যার প্রতি আমাদের যত আগ্রহ। নাম্বারের সূচকে আমরা শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করি। বেছে বের করি কে মেধাবী, কে মেধাশূন্য। এই মানদণ্ড এখন সর্বব্যাপী কার্যকর। এর ফলে একজন শিক্ষার্থীর যাবতীয় ধ্যানজ্ঞান, কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে নির্দিষ্ট পরিমাণ মার্কস অর্জনের মধ্যে। স্কুলকলেজ, কোচিং বা প্রাইভেট টিচারের কাছে যেখানেই সে শিক্ষা অর্জনের জন্য যাচ্ছে, তাকে ঘুরে ফিরেই ঐ নির্দিষ্ট কয়েকটি সাবজেক্টের নির্দিষ্ট পরিসীমার ভেতরে আটকে রাখা হচ্ছে। ইনিয়েবিনিয়ে ও ক্ষেত্রবিশেষ ধমক দিয়ে বা শাস্তি দিয়ে বাধ্য করা হচ্ছে সে বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করার জন্য। ফলে ছাত্রছাত্রীর মেধা, চিন্তাচেতনা, মননশীলতা ও মূল্যবোধ বিকশিত হবার সুযোগ পাচ্ছে না। সে পথ রুদ্ধ হয়ে থাকছে।

শিক্ষার মান উন্নয়নে ভবিষ্যতে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে তার একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ আবশ্যক বলেও মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তাঁরা বলেন, পাসের হার বাড়লেই আমরা বলতে পারব না শিক্ষার মান বেড়েছে। এই যে এ বছর এত শিক্ষার্থী জিপিএ৫ পেল তাদের সবার মান তো এক নয়। আর শিক্ষার মান বাড়াতে বাংলাদেশের মানের শিক্ষা নয়, আমাদের প্রয়োজন বিশ্বমানের শিক্ষা। তাঁদের মতে, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা এবং মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ভবিষ্যতে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে তার একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধশওকত ওসমান : অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ