চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত এবারের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত তিন দশকে এত খারাপ ফলাফল আর হয়নি। শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় ইংরেজিতে পাসের হার সবচেয়ে কম। মাত্র ৬৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে পাস করতে পেরেছেন। বাকীরা অকৃতকার্য হয়েছেন। এরমধ্যে তিন পার্বত্য জেলার শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে বেশি অকৃতকার্য হয়েছেন। এর কারণে পুরো শিক্ষাবোর্ডের ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। সারাদেশে পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ হলেও চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর সারাদেশে ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেলেও চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের হার ৪১ দশমিক ২৪ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৩৫ দশমিক ৫৩ এবং বান্দরবানে ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এরমধ্যে রাঙামাটিতে ৩৯ জন, বান্দরবানে ৯৩ জন এবং খাগড়াছড়িতে ২৫ জন জিপিএ–৫ পেয়েছেন। গত বছর রাঙামাটিতে ৬০ দশমিক ৩২, খাগড়াছড়িতে ৫৯ দশমিক ৬৩ এবং বান্দরবানে ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। আগে ওভার মার্কিং কার্যক্রম থাকলেও এবার তা বন্ধ ছিল। এ কারণটিও ফলাফল বিপর্যয়ে প্রভাব রেখেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। এরমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উল্লেখযোগ্য। পার্বত্য তিন জেলায় বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। তিনি বলেন, ইংরেজিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এবং ভালো মানের শিক্ষক না থাকা এবং ওভার মার্কিং বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ বেশ কিছু কারণে এবার পাসের হার এবং জিপিএ–৫ পাওয়ার সংখ্যা কমেছে। তিন পার্বত্য জেলায় ভালো শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম। পদায়ন করলেও তারা নানা কারণে সেখানে থাকেন না। ফলে ক্লাস হয় কম। ইংরেজি শিক্ষকরা বেশিরভাগ চট্টগ্রামের মত বড় শহরে থাকতে চান। ফলে শিক্ষক স্বল্পতা প্রকট। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, তিন পার্বত্য জেলার অনেক কলেজে ক্লাসরুমসহ অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা নেই। ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেট নেই। এই অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ালে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবে। দূরত্বের কারণে সেখানে শিক্ষার্থীরা একদিন ক্লাসে আসে হয়ত, কিন্তু পরদিন ক্লাস টেস্টে আসে না। ফলে পুরো শিক্ষাক্রমে সম্পৃক্ত হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, সেখানে অনেক শিক্ষার্থী অনেক দূর থেকে আসেন। তাই শিক্ষকরা যদি ক্লাসের ভিডিও করে অনলাইনে ছেড়ে দেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না আসতে পারলেও বাড়িতে বসে অনলাইন ক্লাসে জয়েন করতে পারবে। অবিলম্বে শিক্ষক স্বল্পতা দূর করা, শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালু করা, দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের রুবিঙ এর ধারণা প্রদান করা দরকার। পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলায় অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কর্মসূচির ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, এবার মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হয়েছে। আগে ওভার মার্কিং হতো। এবার তা করা হয়নি। খাতায় একজন পরীক্ষার্থী যত নম্বর পাবে ঠিক তত নম্বরই দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরীতে পাসের হার ৭০ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর নগরী বাদে চট্টগ্রাম জেলার পাসের হার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। কঙবাজার জেলায় পাসের হার ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবারের পাসের হার ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, গত বছর পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ ছিল। এবার ৬ হাজার ৯৭ জন জিপিএ–৫ পেলেও গত বছর পেয়েছিল ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী। সেই হিসেবে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ কমেছে পাসের হার। আর জিপিএ–৫ কমেছে প্রায় ৪ হাজার।