ফটিকছড়িতে ৬৪ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক

ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম

মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, ফটিকছড়ি | বুধবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যালয়ের পাঠদানসহ শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু বছরের পর বছর প্রধান শিক্ষকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি শূন্য রেখেই চলছে ফটিকছড়ি উপজেলার ৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সহকারী শিক্ষক দিয়েই করানো হচ্ছে প্রধান শিক্ষকের যতো কাজ। দীর্ঘ দিন প্রধান শিক্ষক শূন্যতায় বিদ্যালয়গুলো অনেকটাই অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ সব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদগুলো দ্রুত পূরণ করা দরকার বলে মনে করছেন শিক্ষক, অভিভাবক এবং সচেতন মহল।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহেদুল হাসান চৌধুরী বলেন, ১ জানুয়ারি ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয় গুলোতে যারা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিল তাদের সহকারী শিক্ষকের গ্রেড দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় প্রধান শিক্ষকের মর্যাদা এবং গ্রেডের জন্য তারা মামলা করে। যা এখনো চলছে। তবে ওই সময়ে অনেকের যোগ্যতা ছিল আবার অনেকের ঘাটতি ছিল। অন্যদিকে, ফটিকছড়িতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকদের পদ আছে ১৩২৭টি। এখানেও শূন্য পদ আছে ১১০টি। প্রাথমিক শিক্ষায় প্রতিটি শিক্ষকদের জন্য গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজিসহ বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশ কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক শূন্যতার কারণে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান ধরে রাখা সম্ভব হয় না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ, শ্রেণিকক্ষ পর্যবেক্ষণ, সভাসেমিনারে অংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়।

এদিকে ফটিকছড়ি উপজেলায় ২০১৩ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার পর গত এক দশকে মাত্র ৪জন প্রধান শিক্ষককে ননক্যাডার থেকে সরাসরি প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এদের মধ্যে ২ জন চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এবং ১ জন ক্যাডার পদে জয়েন করবেন, বাকি প্রধান শিক্ষক থাকবে ননক্যাডার থেকে মাত্র ১ জন। এ কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ প্রায় এক দশকেও আর পূরণ হয়নি।

দক্ষিণ রাঙ্গামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি একরামুল হক বলেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব পালন করেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধানেরা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান কিছু সময়ের জন্য হয় কিন্তু এখন আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়েই স্কুল চলছে। প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা নিয়ম মেনে চলে না। আরো অনেক সমস্যা দেখা দেয়। প্রধান শিক্ষকের জন্য আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি কিন্তু এখনো কোন ব্যবস্থা হয়নি। উপজেলার যে সব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে, সেগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া জরুরি।

লম্বাবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুক্তা রাণী সরকার জানান, দীর্ঘ দিন ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। বিদ্যালয় ও অফিসের কাজের পাশাপাশি স্কুলে ক্লাসও নিতে হচ্ছে। ৭ জনের পদে বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ৩ জন। ৪টি পদ শূন্য। অনেক সময় ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব এবং সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব একসাথে পালন করতে গিয়ে শ্রেণি কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটে। এরপরেও শিক্ষার গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাসানুল কবির বলেন, সহকারী শিক্ষকদের দ্বারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করাতে হলে কিছুটা সমস্যা তো থেকেই যায়। ফটিকছড়ি উপজেলায় মোট ২২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬৫টিতে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আছেন। তার মধ্যে ৬৪জন চলমান দায়িত্বে। অন্য ৬৪টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ১৩জন প্রধান শিক্ষকের পদ মর্যাদা নিয়ে মামলা চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএলাকার উন্নয়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা
পরবর্তী নিবন্ধঅবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধের নির্দেশ