প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন

| বৃহস্পতিবার , ২৬ জুন, ২০২৫ at ৯:২২ পূর্বাহ্ণ

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে প্লাস্টিক দূষণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বিগত কয়েক দশকে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাস্টিক সামগ্রীর বহুমুখী ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বিশেষ করে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের অত্যধিক উৎপাদন, যথেচ্ছ ব্যবহার ও অব্যবস্থাপনার ফলে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গত মঙ্গলবার দেওয়া এক বাণীতে বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) নির্ধারিত বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্যু ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে বলে আমি মনে করি।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পলিথিন শপিংব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধে দেশব্যাপী নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পলিথিন ব্যাগের পরিবেশবান্ধব বিকল্প উদ্ভাবন, অনুমোদন ও প্রচলনে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রান্সবাউন্ডারি প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং প্লাস্টিক বর্জ্য ও সামুদ্রিক আবর্জনার সুষ্ঠু ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া, ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১’এর আওতায় এক্সপেনডেন্ট প্রডিউসার রেসপনসিবিলিটি (ইপিআর) নির্দেশিকা প্রণয়নের কাজ চলছে, যেখানে উৎপাদনকারী নিজ দায়িত্বে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহপূর্বক তা ব্যবস্থাপনা করবেন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলই বর্তমানে পরিবেশ ও প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার ইতোমধ্যে প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে পর্যটন সীমিতকরণ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ রক্ষায় সরকারের উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় দশ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। বর্ষাকালে বড় বড় শহরে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ড্রেনে জমে থাকা অপচনশীল কৃত্রিম তন্তু পলিথিন। বাংলাদেশে বন্যার সময় ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃত্রিম পাতলা প্লাস্টিক ব্যাগের ভূমিকা প্রমাণিত হওয়ার পর, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অন্যান্য দেশ ও একই পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করে। এক হিসাবে দেখা যায় বিশ্বব্যাপী প্রতি মিনিটে এক মিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে ২০২০ সালে, শহরাঞ্চলে বাংলাদেশের মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল ৯ কেজি। ২০০৫ সালে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল ৩ কেজি, যা প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে যে ২০২০ সালে বাংলাদেশ আনুমানিক ৯,৭৭,০০০ টন প্লাস্টিক ব্যবহার করেছে, যার মাত্র ৩১% পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে। উপরন্তু, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ২০২০ সালে রাজধানী ঢাকায় প্রতি ব্যক্তি প্রতি বছরে সর্বোচ্চ ২৪ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করে।

বিশেজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশ প্লাস্টিক বর্জ্যের একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি এবং অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, বাংলাদেশ টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যার লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০% প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০% ভার্জিন উপাদানের ব্যবহার হ্রাস করা। একটি চক্রাকার অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার এবং প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস করার জন্য উল্লম্বভাবে সমন্বিত পুনর্ব্যবহার কার্যক্রম এবং সরকারিুবেসরকারি অংশীদারিত্বের মতো উদ্ভাবনী সমাধানগুলি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক হ্রাস, পুনঃব্যবহার এবং পুনর্ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া।

মোট কথা, পরিবেশ সুরক্ষায় জনসচেতনতা দরকার। আমরা সবসময় উন্নয়ন প্রত্যাশা করি। কিন্তু তা যেন পরিবেশকে ক্ষতি করে নয়। অল্পকিছুদিন আগে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, উন্নয়নকে সব সময় পরিবেশের বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে। আইন যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। তবে সবার আগে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে