প্লাস্টিকখেকো সুপারওয়ার্মে আশার আলো

| শনিবার , ১১ জুন, ২০২২ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

গবেষকরা বলছেন, প্লাস্টিকের স্বাদে আকৃষ্ট এক ধরনের পোকার শূককীট রিসাইক্লিংয়ে (পুনর্ব্যবহার) বিপ্লব ঘটানোয় সহায়ক হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা সাধারণভাবে সুপারওয়ার্ম হিসেবে পরিচিত জোফোবাস মোরিও পোকা খুঁজে পেয়েছেন। এরা পলিস্টাইরিন খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। খবর বিডিনিউজের।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই বিটল বা গোবরে পোকার শূককীটের অন্ত্রে বিশেষ এনজাইম আছে, যা প্লাস্টিক হজম করতে পারে। ফলে এই শূককীট রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ার অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
গবেষক দলের সদস্য ড. ক্রিস রিংক বলেন, সুপারওয়ার্মগুলো একেকটি ক্ষুদ্র রিসাইক্লিং প্ল্যান্টের মতো। এরা মুখ দিয়ে পলিস্টাইরিন কেটে গুঁড়ো করে ফেলে। এরপর তাদের পেটে থাকা ব্যাকটেরিয়া সেগুলো খায়। অর্থাৎ, ব্যাকটেরিয়া এই পলিস্টাইরিনের গুঁড়ো হজম করে ফেলতে সহায়তা করে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল তিন সপ্তাহ ধরে সুপারওয়ার্মের তিনটি গ্রুপকে বিভিন্ন খাবার দিয়েছেন। যে ব্যাচটি পলিস্টাইরিন খেয়েছিল, দেখা গেছে, ওই সময়ের মধ্যে তাদের ওজনও বেড়েছে। গবেষক দল সুপারওয়ার্মের অন্ত্রে কয়েকটি এনজাইম পেয়েছেন যা, পলিস্টাইরিন এবং স্টাইরিন হজমে সক্ষম। পলিস্টাইরিন ও স্টাইরিন উভয় পলিমারই কোনও বক্স বা কন্টেনার, তাপ কিংবা পানিনিরোধক তৈরি এবং গাড়ির যন্ত্রাংশে ব্যবহার হয়।
তবে গবেষকরা রিসাইক্লিং প্লান্টের মতো বড় আকারের সুপারওয়ার্মের খামার গড়তে আগ্রহী নন। এর বদলে তারা সেই এনজাইমটিকে শনাক্ত করার আশায় আছেন, যা প্লাস্টিক ভেঙে ফেলার জন্য সবচেয়ে কার্যকর। রিসাইক্লিংয়ের জন্য এই এনজাইম কারখানায় বাণিজ্যিকভাবে তৈরির উপায় খুঁজছেন তারা।
মাইক্রোবায়াল জিনোমিক্স সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনজাইম দিয়ে ভাঙার আগে প্লাস্টিকগুলো যান্ত্রিকভাবে গুঁড়ো করতে হবে। ড. রিংক বলেন, এই বিক্রিয়া থেকে পাওয়া ভাঙা পণ্য তখন অন্যান্য কীটানূ দিয়ে বায়োপ্লাস্টিকের মতো উচ্চ-মূল্যের যৌগ তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গবেষকরা অবশ্য এই গবেষণার আগেই দেখেছেন, কিছু বিটল লার্ভা বা শূককীট পলিস্টাইরিন খেতে পারে। তবে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক অধ্যাপক কলিন জ্যাকসন বলেছেন, নতুন গবেষণাটি হয়েছে আরও এক ধাপ এগিয়ে। জ্যাকসন এ গবেষণায় জড়িত না থাকলেও অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে তিনি বলেছেন, সুপারওয়ার্মের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া কীভাবে আণবিক স্তরে প্লাস্টিকের কণা ভেঙে ফেলতে পারে, তা বোঝার ক্ষেত্রে এ গবেষণা অনেক দূর এগিয়ে নেবে। গোটা প্রক্রিয়াটি বুঝতে এবং রিসাইক্লিংয়ের ক্ষেত্রে এ গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিকভাবে অন্যান্য গবেষক প্লাস্টিকের কণা ভেঙে ফেলতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ব্যবহারে সফলতা পেয়েছেন। তবে এ ধরনের কৌশল কখনও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে।
অধ্যাপক কলিন জ্যাকসন বলেন, এ ধরনের গবেষণার আকার বাড়ানো এবং বোঝাপড়া সবসময়ই চ্যালেঞ্জ। প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরও গুরুতর। কারণ, অর্থনৈতিক দিক থেকে নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন এই রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ার চেয়ে সস্তা হলে এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সম্ভাবনা কম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাজেটের প্রভাব নেই ভোগ্যপণ্যে
পরবর্তী নিবন্ধপাচারকারীদের ছাড় নৈতিক নয়, যৌক্তিকও নয়