মাহে রমজান সিয়াম সাধনাসহ নানা ইবাদত–বন্দেগির মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সস্তুষ্টি অর্জনের বড় সুযোগ মুমিন মুসলমানদের জন্য। এ রোজার মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত, তারাবির নামাজ, তাহাজ্জুদের নামাজ এবং অবিরত বিভিন্ন ধরনের দোয়া–দুরুদ পাঠ করে রোজাদার আল্লাহমুখী জীবনধারায় নিজেকে সঁপে দেয়। আল্লাহপাক খুবই পছন্দ করেন তাঁকে ডাকা, তাঁর কাছে প্রার্থনা করা বা কিছু চাওয়া। মানুষ মানুষের কাছে কিছু চাইলে বা বৈষয়িক কোনো ফায়দা অর্জনের জন্য খুব বেশি আবদার–অনুযোগ করলে মানুষ অসন্তুষ্ট হন। অনেক সময় বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেন। মহান রব আল্লাহপাকের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। বান্দাহ যতো বেশি দোয়া, ফরিয়াদ প্রার্থনা জানাবে মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাক ততই খুশি হন। নিবিষ্ট চিত্তে কায়মনোবাক্যে কৃত প্রার্থনা দোয়া ফরিয়াদ আল্লাহপাক খুব একটা ফিরিয়ে দেন না। কোরআন মজিদের সুরা মুমিনের ৬০ নং আয়াত আল্লাহ পাক বলেন-‘উদয়ুনি আস্তাজিব্ লাকুম’ অর্থাৎ ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো’। সূরা বাকারার ১৮৬ নং আয়াতে আল্লাহ পাকের বাণী-‘আর আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে আমার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইবে (তখন আপনি বলে দিন) আমি তো তাদের অতি নিকটেই আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনায় সাড়া দেই যখন সে আমার নিকট প্রার্থনা করে। নবী করিম (দ.) বলেছেন–বান্দাহ আল্লাহকে দোয়ার মাধ্যমে যতোবেশি স্মরণ করবে মহান আল্লাহপাকও তাকে ততোবেশি পরিমাণে স্মরণ করবেন। প্রিয় নবী (দ.) বলেন, ‘আৎ্তাকদিরু লাইয়ারুদ্দুল কাজাও ইল্লা বিদদুআ’ অর্থাৎ দোয়ার মাধ্যমে মানুষের তাকদির ফিরে যায়।’ প্রিয় নবী (দ.) আরও বলেন-‘আদ্্ দু’আয়ু মুখ্খুল ইবাদাহ’ অর্থাৎ ইবাদতের প্রাণই হলো দোয়া। কোরআন মজিদ তেলাওয়াত কিংবা নামাজে জিকিরের আগে পরে প্রিয়নবীর (দ.) ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করা জরুরি। প্রিয় নবী (দ.) দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, যে ইবাদতে আমার স্মরণ করা হয় না কিংবা আমার ওপর দরুদ পাঠ করা হয় না তা আল্লাহপাকের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না। এই ইবাদত আসমান–জমিনের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলে থাকে। দরুদ পাঠবিহীন ইবাদত অন্তঃসারশূন্য ইবাদতে পরিগণিত হয়। অনেক দরুদ শরিফ আছে। দরুদে সাইফুল্লাহ যেমন আল্লাহুম্মা ছল্লে আলা সাইয়েদেনা মুহাম্মাদিন সাইফিল্লাহিল কাতিয়ি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লিম, দরুদে খাইর যেমন আল্লাহুম্মা ছল্লে আলা সাইয়েদেনা ওয়ানাবিয়্যিনা ওয়াশাফিয়িনা ওয়ামাওলানা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালা আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়াসাল্লিম। এ ধরনের বহু দরুদ শরিফ রয়েছে, যা নিয়মিত পাঠের মাধ্যমে অশেষ পুণ্য বা নেকি অর্জিত হয়। দরুদে লাখি, দরুদে হাজারি, আল্লামা শাহসূফি খাজা আবদুর রহমান চৌহরভি (রহ.) রচিত ৩০ পারা সেরা দরুদগ্রন্থ মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসূল (দ), দরুদে তুনাজ্জিনা, দরুদে ফুতুহাত, দরুদে মাহি, দরুদে গাউসিয়া, দরুদে নারিয়া ইত্যাদি দরুদ শরিফ পাঠ করে মহান আল্লাহপাকের দরবারে নিবিষ্টভাবে ফরিয়াদ জানালে তা নিশ্চয়ই কবুল হবে, এ আশা করা যায়। দরুদ পাঠের দ্বারা আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। রিজিক বৃদ্ধি পায়। রোগ শোক ব্যাধি থেকে মিলে পরিত্রাণ। বিভিন্ন লাইব্রেরিতে দোয়া দরুদের বহু অজিফা পাওয়া যায়। তা সংগ্রহ করে পড়া যায়। ইফতারের পূর্বক্ষণেও কৃত দোয়া–ফরিয়াদ আল্লাহপাক ফিরিয়ে দেন না। মাহে রমজানে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত এবং দোয়া দরুদের মাধ্যমে মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।