প্রস্তাবিত বাজেটে নগর উন্নয়নের জন্য ১৮ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ২০৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার ১১ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৪২৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় হবে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন, সড়ক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, সবুজ উদ্যান র্নির্মাণ, টানেল নির্মাণ, বন্দরের উন্নয়ন এবং আলোকায়ন প্রকল্পে। গত ৩ জুন দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। জাতীয় বাজেটে গুরুত্ব পেয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম। এ অঞ্চলের ৫৫টি বৃহৎ প্রকল্পে ২৭ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে আছে শহরের উন্নয়নে গৃহীত ১৮ প্রকল্পও। প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিন সেবা সংস্থার মধ্যে চসিকের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৯৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। এছাড়া ওয়াসা ১ হাজার ৬৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং সিডিএ ১ হাজার ৯২৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ পেয়েছে ৪ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। নগরের পাঁচলাইশ জাতিসংঘ পার্কে সবুজ উদ্যান নির্মাণসহ পৃথক তিনটি প্রকল্প রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২১৫ কোটি। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০০ কোটি টাকা এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ৭৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জাতীয় বাজেটে বৃহত্তর চট্টগ্রামের গুরুত্ব প্রাপ্তিতে আমরা আনন্দিত। এটাকে ইতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে বলতে চাই, এতে চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারের মহৎ উদার ও আন্তরিক মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। নানা বিজ্ঞজনের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে পারি, ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রাম ভূ–প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর নগরী। এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অনেক অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। এই নগরীর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন সত্যিকার অর্থে নানান আর্থিক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত থাকায় এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে উন্নীত করার মতো দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা দেখাতে পারছে না। তবে এটাও সত্য যে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে। নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সর্বোপরি নাগরিক সুযোগ–সুবিধা এবং বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠবে। সরকারি বরাদ্দ প্রাপ্তির উপরে নির্ভর করে নগরের উন্নয়ন। অথবা, অন্যান্য সহযোগিতা, বিশেষ করে বন্দর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে পারে। বলা বাহুল্য, ভৌগোলিক শহর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ার প্রকিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দর। জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এ কারণেই চট্টগ্রামকে বলা হয় জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। আমদানি–রফতানির ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাঙ নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না।
এবারের বাজেটে বলা হয়েছে, সিডিএর বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় হবে পাঁচ প্রকল্পে। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পে ৫৮০ কোটি টাকা, লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে ৬৫০ কোটি টাকা, কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পে ৬৮৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, প্রিপারেশন অব চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পে ১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পে (পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা, তৃতীয় সংশোধিত) ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে যত টাকা বরাদ্দ পাওয়া দরকার, তত টাকার প্রাপ্তিতে নগরবাসী আশ্বস্ত হয়েছেন। তাঁরা সরকারের কাছে বরাদ্দ প্রত্যাশা করেছেন, যেন আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতায় তাঁদের কষ্ট পেতে না হয়। এছাড়া অন্যান্য প্রকল্পে প্রত্যাশিত বরাদ্দ প্রদানের জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।