প্রশ্ন একটা, কত মণ মাংস হবে

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শনিবার , ৯ জুলাই, ২০২২ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

বাজারে গিয়ে এবার প্রায় সব ক্রেতার কমন একটি প্রশ্ন, কত মণ হবে মাংস? মাংসের দাম হিসাব করেই যেন সবাই গরুর দাম নির্ধারণ করতে চাচ্ছেন। এই হিসাবটা নেট মাংসের। বাজারে সাধারণ অর্থে হাড়সহ গরুর মাংস ৪০ কেজিতে মণ হিসাব করে এলাকাভেদে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। গরুর বাজারের ক্রেতারাও এই হিসাবে আড়াই মণ মাংসের একটি গরু ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায় কিনতে পারলে খুশি। আগের কয়দিন পশুর হাটে বেশ তেজিভাব থাকলেও গতকাল শুক্রবার মোটামুটি এই দামের মধ্যে গরু কিনে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন ক্রেতারা। আজ শনিবার শেষ দিনে আরো জমজমাট বেচাকেনার প্রত্যাশা ক্রেতা-বিক্রেতারা।
তবে আনোয়ারার হাটগুলোতে স্থানীয় জাতের গরু ব্যাপক সরবরাহ থাকায় দারুণ খুশি ক্রেতারা। উপজেলার সরকার হাটের পশু বাজারের পরিচিতি রয়েছে নগরীসহ পুরো চট্টগ্রামে। এছাড়া দোভাষী হাট, বটতলী রুস্তম হাট, চাতরী চৌমুহনী, মালঘর বাজার, সত্তার হাট ও পালের হাটে এই বছর বেশ জমজমাট পশু বেচাকেনা হচ্ছে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে শহরের কাছের এসব হাট নিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন অভিজ্ঞতা। বিক্রেতারা জানান, আনোয়ারায় ছোট হাটগুলোতে যেসব পশু উঠে বেশিরভাগই গৃহস্থের ও চরের গরু। সাধারণ গৃহস্থরা কৃত্রিম খাবার, ইনজেকশন বা হাইব্রিডজাতীয় খাদ্যের পরিবর্তে প্রাকৃতিক খাবারে গরুগুলো লালনপালন করেন। এছাড়া বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশের সাঙ্গু নদী তীরবর্তী চরে অনেক গরু লালনপালন হয়। আনোয়ারার বরুমচড়া, হাইলধর, জুইদন্ডিসহ বিভিন্ন উপকূলীয় জায়গায় সবুজ ঘাসের আধিক্যের কারণে অনেকে গরু লালনপালন করেন। এসব গরুর বেশিরভাগই আড়াই মণ থেকে ৫ মণ মাংসের হয়। যেগুলো রেড চিটাগং তথা চট্টগ্রামের নিজস্ব জাতের গরু। এসব গরুর মাংস স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর হওয়াতে স্থানীয় ক্রেতা তো বটেই শহুরে ক্রেতারাও দূরদূরান্ত থেকে এসে এখান থেকে পশু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
আনোয়ারা খাসখামা গ্রামে বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ৩টি গরু মোটাতাজা করেন দিলুয়ারা বেগম। তিনি জানান, শুক্রবারই তার সব গরু বিক্রি হযে গেছে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক খড় আর নিজেদের খাবারে গরুগুলো লালনপালন করেছেন। খরচ বেশি পড়েছে, তাই ৩০ হাজার টাকা মণ দামে গরুর হিসাব এবার মেলানো যাচ্ছে না। তবে গৃহস্থ ও চরের গরু সব সময় আলাদা এটা মনে রাখতে হবে।
বিকালে উপজেলার পূর্ব আনোয়ারার পালের হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব গরুই মাঝারি আকারের। আগের দিনগুলোতে বাজারে যে তেজিভাব ছিল শুক্রবার তা ছিল খানিকটা কম। তবে ছুটির দিন হওয়াতে বাজারে ছিল প্রচুর ক্রেতা সমাগম। একইভাবে বটতলী রুস্তম হাটেও ক্রেতা উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। বেচাবিক্রিও হয়েছে বেশ। আজ শনিবার পশুর হাটের শেষ দিনে চাতরী চৌমুহনীতে নিয়মিত হাটের দিন। ইজারাদাররা মনে করছেন, স্থানীয় জাতের গরু, যোগাযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার কারণে এখানেও জমজমাট বেচাকেনা হবে।
এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট সরকারহাটে প্রতিদিনই হাট বসছে। বাজারের কথা হয় স্থানীয় বরুমচড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী মো. খোরশেদ আলমের সাথে। তিনি জানান, নিজ খামারে মোটাতাজাকৃত বিশটি গরু তিনি হাটে তুলেছেন। এর মধ্যে ১২ টি বিক্রি হয়েছে। অপর ব্যবসায়ী মো. আমিন বলেন, বেশ কয়েকটি বড় সাইজের গরু এনেছি। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুর দাম ৮ লাখ টাকা চেয়েছি ।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান, আনোয়ারায় স্থানীয় জাতের গরুগুলো রয়েছে পছন্দের শীর্ষে। দেখতে সুন্দর ও প্রাকৃতিক খাবারে লালনপালনের কারণে এগুলোর মাংস সুস্বাদু। সেজন্য চট্টগ্রাম শহরসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এখানে ক্রেতা সমাগম হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকনস্টেবল বিক্রি করছিলেন ইয়াবা
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক