একটার পর একটা প্রশংসনীয় কাজ করে আলোচনার তুঙ্গে অবস্থান করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রামকে বদলে দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর অভাবনীয় সব কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ‘খেলার মাঠে মেলা নয়’ ঘোষণা দিয়ে বসে থাকেননি, বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর আউটার স্টেডিয়ামসহ খেলার মাঠগুলোতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আর কোনো মেলা হবে না। এগুলো খেলাধুলার জন্যই উন্মুক্ত রাখা হবে। মাঠে অবৈধ স্থাপনা থাকলে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। তবে অন্য খোলা মাঠে মেলার আয়োজন বন্ধ থাকবে না। চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরে জেলা প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে যে সরকারি জায়গা উদ্ধার করেছে, সেখানে সব মেলার আয়োজন করা হবে।’ দীর্ঘদিনের বেদখলে থাকা খেলার মাঠ রক্ষায় নিয়েছেন কঠোর পদক্ষেপ। খেলার মাঠ থেকে তাড়িয়েছেন সব ধরনের মেলা। গুঁড়িয়ে দিয়েছেন খেলার মাঠের আশপাশের সব অবৈধ স্থাপনা। এছাড়া অনেকের হম্বিতম্বি ও রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উদ্ধার করেছেন বেদখল হওয়া সরকারি শতকোটি টাকার সম্পদ। জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েই আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান যে কাজগুলো করে চলেছেন, তা এককথায় অভিনন্দনযোগ্য। সবশেষে নগরের কাজীর দেউড়িস্থ সার্কিট হাউজ সংলগ্ন শিশু পার্কটি সিলগালা করে জমির মালিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর পক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সমগ্র টিম অত্যন্ত সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে এই কাজটি সম্পন্ন করেছেন। গতকাল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুএমং মারমা মং এবং রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে পার্কটির মূল ফটক সিলগালা করে দেয়া হয়। এরপর সেখানে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দেয়া হয়। এতে লেখা রয়েছে– “প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি। বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ। আদেশক্রমে মিলিটারি এস্টেটস অফিসার, পূর্বাঞ্চল, চট্টগ্রাম সেনানিবাস।” এর আগে গত ১৯ অক্টোবর সামরিক ভূুসম্পত্তি প্রশাসন দপ্তর থেকে সিটি মেয়র বরাবর পত্র দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন জমি (শিশু পার্ক যেখানে গড়ে উঠে) খালি করে দখল জরুরি ভিত্তিতে বুঝিয়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন পুরাতন সেনানিবাসস্থ সার্কিট হাউজের সম্মুখে তিন একর জমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। চসিক শর্ত ভঙ্গ করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৃতীয় পক্ষকে ইজারা প্রদান করে। চসিককে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত অনুমোদন বাতিল করা হয় বলেও ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়। অবশ্য সামরিক ভূ–সম্পত্তি প্রশাসন দপ্তর জায়গা খালি করে বুঝিয়ে দিতে বললেও চসিক এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই জেলা প্রশাসন গত সোমবার সিলগালা করে দেয়।
চসিকের ইজারা দেয়া শিশু পার্ক জেলা প্রশাসনের সিলগালা করে দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, জায়গাটির মালিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সিটি কর্পোরেশন নিয়েছে এবং সিটি কর্পোরেশন শিশু পার্ক করার জন্য ইজারা দেয়। এখন সরকারের প্রয়োজনে সরকার জায়গা নিতেই পারে। …এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে পার্কটি উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে। এর আগে মালামাল সরিয়ে নিতে পার্কটির ইজারাদারকে সময় দেয়া হবে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, উচ্ছেদের পূর্বে ওদেরকে সময় দেয়া হবে, সেটা দুই সপ্তাহও হতে পারে। তিনি বলেন, ইজারা বাতিল এবং জায়গাটি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি চিঠি দিয়েছিলাম। এরপ্রেক্ষিতে ইজারা বাতিল করা হয়েছে। যা সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, চসিকের অনুকূলে পার্কটির জায়গার বরাদ্দ বা লিজ বাতিল চেয়ে গত ২৩ আগস্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ২৭ আগস্ট সামরিক ভূমি ও ক্যান্টনমেন্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্টার্ন সার্কেলের সামরিক ভূ–সম্পত্তি প্রশাসক বরাবর পৃথক তিনটি দাপ্তরিক পত্র দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। সর্বশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্টার্ন সার্কেলের সামরিক ভূ–সম্পত্তি প্রশাসক বরাবর দেওয়া আরেকটি পত্রে জায়গাটি জেলা প্রশাসনের অনুকূলে বরাদ্দ চাওয়া হয়। এতে জায়গাটিতে উন্মুুক্ত স্থানসহ মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসনের চিঠিগুলোতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অবস্থানরত জাতীয় অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পুরাতন সার্কিট হাউজের সামনের রাস্তায় যানজট নিরসন এবং চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত মাঠ হিসেবে ব্যবহার এর জন্য পার্কটির জায়গার বরাদ্দ বাতিল করতে বলা হয়।
নগরীর বাসিন্দাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটাচলা করার মতো উন্মুক্ত স্থানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ইতোপূর্বে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছিলেন, ‘সার্কিট হাউজের পাশে বিষফোঁড়ার মতো শিশু পার্ক নামে একটা অবৈধ ব্যবসা পরিচালিত করা হচ্ছে’। পার্কটি অপসারণের দাবিতে ‘নাগরিক উদ্যোগ’ নামের একটি সংগঠনসহ নগরের পরিবেশকর্মীরাও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। এটি সিলগালা করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আইনগত ও নৈতিক কাজ সম্পন্ন করেছেন, পাশাপাশি নগরবাসীর দাবিকে মর্যাদা দিয়েছেন।