প্রমথ চৌধুরী : চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক

| শনিবার , ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮১৯৪৬)। সাহিত্যিক, বাংলাসাহিত্যে চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক। বাংলাসাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম প্রমথ চৌধুরী। তাঁর সাহিত্য রচনার সুনিপুণতা, সৃষ্টিশৈলিতা, গাম্ভীর্যতা, যুক্তিনিষ্ঠতা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। সাহিত্য অঙ্গনে প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম ছিল ‘বীরবল’। প্রমথ চৌধুরী ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে স্থানীয় জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দুর্গাদাস চৌধুরী এবং মাতার নাম মগ্নময়ী দেবী। প্রমথ চৌধুরী কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে বিএ পাস এবং ইংরেজিতে এমএ পাস করেন। ১৮৯৩ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন এবং তিনি সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে ব্যারিস্টারি পাস করেন। কর্মজীবনে কিছুকাল তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপনা ছাড়াও সরকারের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। লেখালেখির প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহের কারণে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে বিখ্যাত ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে পালন করেন। তাঁর সম্পাদিত অন্যান্য পত্রিকা হলো বিশ্বভারতী (১৩৪৯৫০), রূপ ও রীতি (১৩৪৭৪৯) এবং অলকা। বাংলা সাহিত্যকে তিনি নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। প্রমথ চৌধুরীকে বাংলাসাহিত্যে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি প্রবন্ধ রচনা ও সাহিত্য সমালোচনার পাশাপাশি কবিতা, গল্প, চুটকি রচনায় খুব পারদর্শী ছিলেন। ব্যঙ্গাত্মক রচনাতেও তাঁর জুড়ি নেই এবং তাঁর কবিতাগুলো ছিল খুবই বাস্তববাদী এবং রূঢ়। প্রমথ চৌধুরীর রচনায় ছোটগল্পগুলো ছিল অসাধারণ। তিনি ছিলেন মননশীল ও প্রচণ্ড যুক্তিবাদী। তিনি ইংরেজি ও ফরাসি সাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন। ফরাসি সনেটরীতি ট্রিয়লেট, তের্জারিমা ইত্যাদি বিদেশি কাব্যগ্রন্থ বাংলা কাব্যে তিনিই প্রবর্তন করেন। প্রমথ চৌধুরীর গ্রন্থসমূহ হচ্ছেকাব্যগ্রন্থ : সনেট পঞ্চাশৎ, পদচারণ। গল্পগ্রন্থ : চার ইয়ারির কথা, আহুতি, ঘোষালের ত্রিকথা, নীল লোহিত, অনুকথা সপ্তক, সেকালের গল্প, ট্র্রাজেডির সূত্রপাত, গল্পসংগ্রহ, নীল লোহিতের আদি প্রেম, দুই বা এক। প্রবন্ধ গ্রন্থ: তেলনুনলাকড়ি, নানাকথা, বীরবলের হালখাতা, আমাদের শিক্ষা, দুই ইয়ারির কথা, বীরবলের টিপ্পনী, রায়তের কথা, নানাচর্চা, ঘরে বাইরে, প্রাচীন হিন্দুস্থান, বঙ্গ সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয়, প্রবন্ধ সংগ্রহ (১ম ও ২য় খণ্ড)। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। ১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর শান্তিনিকেতনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে চার লেনের সড়ক চাই!