প্রবীণ রাজনীতিক হায়দার আকবর রনো মারা গেছেন

তার চোখে পৃথিবী দেখবেন দুজন

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ১২ মে, ২০২৪ at ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ

প্রবীণ রাজনীতিক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো আর নেই। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রনো ভাই আর নেই। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ২টা ৫ মিনিটে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। গত ৬ মে পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সেখানেই মধ্যরাতে মারা যান তিনি। খবর বিডিনিউজের।

পরিবারের সদস্যরা দেশের বাইরে থাকায় হায়দার আকবার খান রনোর মরদেহ আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত শমরিতা হাসপাতালের মর্গে রাখা হবে। স্বজনরা দেশে ফিরলে শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেওয়া হবে এই প্রবীণ রাজনীতিকের মরদেহ। এরপর বনানী কবরস্থানে বাবামায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে তাকে।

রনোর চোখে পৃথিবী দেখবেন দুজন : আজীবন মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করে যাওয়া বামপন্থি নেতা হায়দার আকবর খান রনো মৃত্যুর আগেও ভেবেছেন মানুষের কথা। তার দান করে যাওয়া কর্নিয়ায় পৃথিবীর আলো দেখবেন দৃষ্টিহীন দুজন মানুষ। মৃত্যুর পর গতকাল দুপুর ১টার দিকে তার কর্নিয়া নিয়ে যান স্বাস্থ্য খাতের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসন্ধানীর কর্মীরা।

সিবিপির নেত্রী জলি তালুকদার বলেন, হায়দার আকবর খান রনো মরণোত্তর চক্ষুদান করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর আমরা সন্ধানীতে বিষয়টি জানাই।

সন্ধানীর জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রোববার দুপুরে ঢাকার তাদের তত্ত্বাবধানে দুজন দৃষ্টিহীনের চোখে অস্ত্রোপচার করে বসানো হবে এই কর্নিয়া।

সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ও সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংকের সভাপতি মনিলাল আইচ লিটু বলেন, সার্জন সৈয়দ এ হাসান কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করবেন।

বাংলাদেশের ১৪ লাখ দৃষ্টিহীন ব্যক্তির মধ্যে অন্তত ৫ লাখ কর্নিয়াজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কর্নিয়া দানে অনীহার কারণে লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হচ্ছে না।

সিপিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে এক ঘণ্টা রনোর মরদেহ তার দলের পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাখা হবে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তা নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত হবে আনুষ্ঠানিকতা। জোহরের নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে তাকে।

হায়দার আকবর খান রনোর জন্ম ১৯৪২ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতায়। তার পৈতৃক নিবাস নড়াইলের বরাশুলা গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হায়দার আকবর খান রনো ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি ৯০ দশকের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনসহ এরশাদ পতনের গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক ছিলেন।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকলেও ২০১০ সালে মতভিন্নতার কারণে এই দলটি ছেড়ে সিপিবিতে যোগ দেন। ২০১২ সালে তাকে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। এরপর তিনি সিপিবির উপদেষ্টা হন। রাজনীতিকের পরিচয়ের বাইরে তিনি তাত্ত্বিক ও লেখক। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৩।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিন কি এখন পূর্ণ সদস্য পদ পাবে
পরবর্তী নিবন্ধবিমানের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস: আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র