প্রবাহ

হজ্বের গুরুত্ব

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী | বুধবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

হজ্ব একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ সংকল্প করা, নিয়ত করা, গমন করা, দর্শন করা, ইচ্ছা করা, প্রতিজ্ঞা করাসহ কোন মহৎ কাজের ইচ্ছা করা।

তবে শরীয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট দিনে নিয়তসহ এহরামরত অবস্থায় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা অতঃপর খানায়ে কাবা তাওয়াফ করা।

হজ্বের উপর আরও একাধিক মত রয়েছে। তৎমধ্যে অন্যতম একটি হল জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ এহরাম অবস্থায় আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া, অবস্থান করা। অতঃপর খানায়ে কাবা তাওয়াফ করা।

নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে স্থানসমূহ যেয়ারত করাই হল হজ্ব।

বর্ণনায় এও রয়েছে মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের লক্ষে নির্ধারিত সময়ে মক্কা মোকাররমায় গমন করে, নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট কাজ করাকে হজ্ব বলে।

ঈমানের পর হজ্ব ইসলামের অন্যতম রোকন এবং ৪র্থ স্তম্ভ ইহা একটি ফরজ ইবাদত। হজ্বের গুরুত্ব যেমনি অপরিসীম তেমনি ফজিলতও সীমাহীন। বিশ্বের বুকে যত নেক আমল রয়েছে তৎমধ্যে হজ্ব অন্যতম। যেহেতু দূরদূরান্ত থেকে কষ্টসাধ্য সফর করে নির্দিষ্ট সময়ে মক্কা মোকাররমা পৌঁছাতে হবে এবং ৫/৬ দিনব্যাপী মক্কা মোকাররমা কেন্দ্রিক ১৬ বর্গ কি.মি এর মধ্যে ৩ স্থানে গমন করতে হবে। অবস্থান করতে হবে, প্রত্যাবর্তন করতে হবে যা কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। ফলে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হজ্ব পালনকারীকে নিষ্পাপ নবজাতকের ন্যায় উল্লেখ করা হয়েছে। কবুল হজ্বের পুরস্কার পরকালে নাজাত বেহেস্ত। হজ্ব পালনকারীর জন্য রয়েছে পৃথক ফজিলত ও মর্তবা।

হজ্ব এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিম একত্রিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে।

হজ্বের মধ্যে শারীরিক ইবাদত বেশী, যা কষ্টসাধ্য। ফলে হজ্বের বিভিন্ন আহকামে বলা হয় “ফায়াচ্ছির হু লি” অর্থাৎ আল্লাহ আমাকে সহজ করে দাও, যা অন্য ইবাদতে উল্লেখ নেই।

হজ্ব প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন,“নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম গৃহ যা মানবমন্ডলীর জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা ঐ ঘর যা মক্কায় অবস্থিত। এটি বরকতময় ও বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। তার মধ্যে প্রকাশ্যে নির্দশনসমূহ বিদ্যমান, মকামে ইব্রাহীম উক্ত নির্দশনসমূহের অন্যতম। আর যে ব্যক্তি এর মধ্যে প্রবেশ করবে সে নিরাপত্তা লাভ করে। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই গৃহের হজ্ব করা সেসব মানুষের অবশ্য কর্তব্য যারা শারীরিক ও আর্থিকভাবে ঐ পথ অতিক্রমে সামর্থ্যবান। আর যদি কেউ অস্বীকার করে তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসী হতে মুখাপেক্ষীহীন।” (সূরা আলইমরান, আয়াত ৯৬৯৭)

মহান আল্লাহ পাক আরও বলেন,“আর স্মরণ কর, যখন আমি ইব্রাহীমের (.) জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম কাবাগৃহের স্থান। তখন বলেছিলাম আমার সাথে কোন শরীক স্থির করবে না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রেখ তাদের জন্য যারা তাওয়াফ করে, যারা দাঁড়ায়, রুকু করে এবং সিজদা করে।” (সূরা আল হজ্ব, আয়াত ২৬)

মহান রাব্বুল আলামীন অন্যত্র বলেন,“ আর মানুষের নিকট হজ্বের ঘোষণা দাও। তারা তোমার নিকট আসবে পদব্রেজে ও সকল প্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রসমূহের পিঠে, তারা আসবে দূরদূরান্তর পথ অতিক্রম করে। যাতে তাঁরা তাদের কল্যাণের জন্য উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযক হিসাবে দান করেছেন তার কারণে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা হতে ভক্ষণ কর এবং দুস্থ অভাবগ্রস্তদেরকে আহার করাও। অতঃপর তারা যেন তাদের পরিচ্ছন্নতা দূর করে তাদের মানত পূরণ করে এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের (কাবার)। এটাই বিধান, আর যে ব্যক্তি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র অনুষ্ঠানগুলির সম্মান করল তার জন্য সেটি তার প্রতিপালকের নিকট উত্তম।” (সূরা আল হজ্ব, আয়াত:২৭৩০)

আল্লাহ পাক আরও বলেন,“নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নির্দশনসমূহের অন্তর্গত। অতএব যে ব্যক্তি এই গৃহের হজ্ব এবং উমরাহ করে তার জন্য এতদুভয়ের (সাফামারওয়া) প্রদক্ষিণ করা দোষনীয় নয়। কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করলে নিঃসন্দেহে আল্লাহ গুণগ্রাহী, সর্বজ্ঞানী। (সূরা আলবাকারাহ, আয়াত ১৫৮)

 হজ্বের গুরুত্ব দিয়ে হাদীসে হযরত আবু উমামাহ (.) হতে বর্ণিত, নবী পাক (.) ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি যাকে বাহ্যিক কোন প্রয়োজন কিংবা অত্যাচারী শাসক অথবা দুরারোগ্য ব্যাধি হজ্ব পালনে বাধা দেয়নি, অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করল অথচ হজ্ব সম্পাদন করেনি, তার মৃত্যু ইয়াহুদি অথবা নাছারা অবস্থায় হউক। (সুনানু দারেমী)

 হযরত আবু হুরায়রা (.) হতে বর্ণিত, তিনি নবী পাক (.) আরও এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব সম্পাদন করল এবং এ সময়ে কোন অশ্লীল কথা কিংবা গুনাহের কাজে লিপ্ত হল না, সে সদ্যজাত সন্তানের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করল। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

 হযরত আবু হুরায়রা (.) হতে বর্ণিত, নবী পাক (.) হতে বর্ণনা করেন, হজ্ব ও উমরাহ পালনকারী আল্লাহর প্রতিনিধি। তাঁরা আল্লাহর নিকট দোয়া করলে তা কবুল ম এবং তাঁরা আল্লাহর নিকট মাগফিরাত কামনা করলে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সুনানু ইবনে মাজাহ)

 নবী পাক (.) আরও ইরশাদ করেন, ‘যে আমার কবর যেয়ারত করবে তাঁর জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হবে।’

 নবী পাক (.) আরও বলেন,‘আমার তিরোধানের পর যে হজ্ব করতঃ আমার কবর যেয়ারতে আসবে, সে যেন জীবিত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল।’

 নবী পাক (.) আরও ইরশাদ করেন, যে হজ্ব করল অথচ আমার যেয়ারত করল না সে আমার সঙ্গে বেয়াদবী করল এবং অবাধ্য রইল। নবী পাক (.) আরও বলেন,‘যে আমার যেয়ারত করবে সে কেয়ামতের দিন আমার পড়শী হয়ে থাকবে।’

 নবী পাক (.) আরও ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ ধারাবাহিকভাবে (মাঝখানে কোন ওয়াক্ত বাদ না দিয়ে) পড়বে তাকে আখেরাতে জাহান্নামের আজাব হতে এবং দুনিয়াতে মুনাফেকী নামক ব্যাধি হতে মুক্তি দেয়া হবে।’

উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে প্রত্যেক মুসলমান নরনারী হজ্ব ও যেয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন করতে উদগ্রীব থাকেন। জীবনে মাত্র একবার হজ্ব করা ফরজ হলেও মুসলমানগণ একাধিকবার যেতে আগ্রহী থাকেন।

মক্কা মোকাররমার মধ্যখানে পবিত্র কাবা। এ কাবার মর্যাদায় অধিকারে রয়েছে হারমের সীমানা। বাৎসরিক নির্ধারিত দিনসমূহে এখানেই এসে হজ্ব করতেন। আর নির্ধারিত দিন হল ৮ থেকে ১৩ যিলহজ্ব ৬ দিনব্যাপী। তবে ১২ যিলহজ্ব পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপী হজ্বও গ্রহণযোগ্য।

অপরদিকে ওমরাহ বছরের যে কোন সময় করা যায়। হজ্ব তিন প্রকার। কেরাণ, তামত্তো, এফরাদ। কেরাণ ও তামত্তো হজ্ব করলে সাথে একটি ওমরাহও থাকবে।

/৬ দিনব্যাপী হজ্ব করতে এহরাম অবস্থায় মিনাআরাফাতমুজদালিফায় গমন করতে হবে। আর যদি অন্য সময় শুধু ওমরাহ করতে ইচ্ছুক হন তবে মিকাতের বাহির থেকে এহরাম অবস্থায় মক্কা মোকাররমা আসতে হবে। পবিত্র কাবা তাওয়াফ এবং সাফামারওয়াসায়ী করার পর মাথার চুল ফেললে ওমরাহ হয়ে যাবে। ওমরাহ এর ক্ষেত্রে মিনাআরাফাতমুজদালিফার কোন সম্পৃক্ততা নেই। হজ্ব ফরজ ওমরাহ সুন্নত।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধদীপালী ভট্টাচার্য : নারী লেখকের অন্যতম পথিকৃৎ
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় র্শটগানের ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১